দীপ্তলোক

আমি মালবিকা,মালবিকা বোস।

নিতান্ত এক ছাপোষা পরিবারে জন্ম আমার।পন্ডিত বাবার স্নেহে মানুষ আমরা তিন বোন।

বাবার আদর আর জীবন বোধ আঁকড়ে বেড়ে উঠি পুঁইলতার মতন।

খুব  সাধারন মা আমার, মাচালের মত।

তাঁকে জড়িয়ে বাড়তে থাকি,লতিয়ে থাকি।

অজস্র শাবলের আওয়াজ হাঁপড়ে আমার,
অনাবাদী জমিকে কর্ষন যোগ্য করার ভীষন প্রয়াস।
হাঁপড়ে কান্নার আওয়াজ আর জলের নিম্নগামী স্রোত,
কর্ষিত জমিনে কাঁদামাটি আর অংকুরের বৃথা আলাপন।

দ্বিধার দেয়ালে চলে হাতুড়ী সশব্দে

মস্তিষ্কে বোধের নোনাধরা ঝুরঝুর ফাটল।

দ্বিধার প্রাচীরে ভাঙনের সুর।
আধ ভরা গ্লাস নিয়ে দোটানায় আমি–
আধা ভরা নাকি আধা খালি!

চিলতে চাঁদের রেখা বরাবর রাখি চোখ,
দ্বিধার সমতলে পাহাড়ের মত নিশ্চল প্রশ্নবাণ — নতুন চাঁদ নাকি ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ!
নিগূঢ়তম সূক্ষ্ম দৃষ্টি মেলে আমি ভাবনার পথে ক্রমশ খেই হারাই!

আমি মালবিকা,মালবিকা বোস।
সিঁথি রাঙিয়ে হয় নি বাসর,
শাখা পলায় সাজে নি হাত,
উলুধ্বনিতে জপে নি মন্ত্র কেউ!
সকালের ভেজা চুলে থাকে নি বকুল ঘ্রাণ,
আনত লজ্জায় হাসি নি সেই হাসি।

বাবার গনগনে চোখে এখন কেবলই জিজ্ঞাসু চাহনী,
নুহ্য দেহে এখনো রাখে হাত, আমার মধ্যাহ্ন কেশে,
এখন বাবার আদলে এক ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদ আঁকি।
ঘন আঁধারের কালো দেখে শিউরে উঠি।
দ্বিধান্বিত আমি,
কেবলই দ্বিধার পাহাড়ে ক্রমাগত আঘাত হানি।
নিশ্চল পাহাড়ের মত নিশ্চল বোধ এক চুলও নড়ে না।
কাজের সংজ্ঞায় পরাজিত হয় মালবিকা বোস।

আমি মালবিকা বোস,
তবুও জীবনের হাতে রাখি হাত।
জীবনের অনতিক্রম্য দূরত্বকে মুড়ে রাখি দ্বিধার চাদরে,
নিরলস হেঁটে যাই,আত্মগরিমায় অক্লেশে।
নারীজন্মের তিলক আঁকা কপালে
বৃত্তপরিধি চুরমার করি প্রত্যয়ী পদযুগলে।
দৃঢ়চিত্তে খুলে ফেলি বেড়ী সমাজের
শেকল ভাঙার বাঁশী বাজে উদ্ধত সুরে।

আমি মালবিকা,
হাঁপড়ে শাবলের ক্ষত,
মস্তিষ্কে হাতুড়ী সচল,
কর্ষনযোগ্য ভূমিতে বুনে যাই দীপ্তলোক।

-ফারহানা নীলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *