পাষাণ ও প্রণয়িনী

মেঠো আলপথে হাঁটে এক মধ্যবয়সী প্রণয়িনী পূর্বরাগে,
এখনো প্রেমময়ী! গুনগুনিয়ে লালনগীতিকা সাঁধে গলে ধৃত তালে,
কালিগঙ্গায় আলোছায়া পড়ে, মগ্নমায়া পড়ে পরতে পরতে..
দু’ধারে ফসলিয়া মাঠ শুয়ে আছে অলিভ সাবুজিক ভূষণে…
স্বর্ণেন্দু বিভূষিতা প্রণয়িনী!হঠাৎ পাষাণ দেখে থমকে দাঁড়িয়ে তাৎক্ষণিক!
নেবে? আমাকে নাও? হরিয়াছো তুমি যে প্রণয়লোভী ঘাই হরিণীমন!
পাষাণে ফুল ফোটে অমোঘ প্রেমেতে; এই সদা বিশ্বাসে –
রোদনে রোদনে প্রকম্পিত তেপান্তর!
পিয়াসী মন আমার পাষাণ!? কতকাল থেকে বুক এমন চৈত্রদগ্ধা চৌচির মৃত্তিকা!
হাঁটে আর বাঁধে সুর লহরী, পাষাণ রে?বারেক ফেরে চেয়ে,
ও আমার আলাভোলা বৈরাগী কবিয়াল!?
ওড়ে মন!ভৈঁরো হাওয়াই ওড়ে দুলদুল জুলফি,
ওড়ে মেঘের ওপর বিরহী নীল নীলক্ষা..!
পাষাণ বন্ধু আছে কী শরীরবীজ তোমার ! কথা কও?
তবে সূর্যমুখী ফুলের ওপর ওড়া ভ্রমর সাক্ষী থেকো!
সাক্ষী থেকো কালিগঙ্গার রজতাভা বালুকা –বহতা কুলকুল জল…
দৃশ্যবিদ্ধ পোড়া চোখ থেকে সরানো যাই কি কখনো প্রাণতা কবিয়ালরে!
পৃথিবীও এখন মধ্যবয়সী, কালীগঙ্গাও বয়সী ক্ষীণ! নাব্যতা নাই!
আমিও কী হারিয়েছি তবে জৌলুশ!হায়!
রূপ, রস,লক্ষ্মীবিলাসই সুগন্ধ আর নারীত্ব!
পাষাণ হতে নেমে আসে শুশ্রুমণ্ডিত এক ঈশ্বর; সোমত্ত দেড়েল কবিয়াল!
পাঁজাকোলা তুলে নিয়ে প্রণয়িনীকে ঘোরে ভ্রমরের মতো সাতপাকে —
কবিয়াল তবে ছিলো পাষাণের বেশে ক্ষিপ্র রেশে !
ভ্রমরের ছদ্মবেশে এসে….
উতলা প্রণয়িনী হরিলো অবশেষে!
পাষাণের ভারে ডুবিলো তৎক্ষণাৎ কালিগঙ্গার জলধিতে নিমিষে।

ওয়াহিদুর রহমান শিপু

লেখক পরিচিতি: ওয়াহিদুর রহমান শিপু, বাবা আমিনুর রহমান ও মা লুৎফা রহমান।
জন্ম ১৯৮০ সালের সাতাশে মে
শিবগঞ্জ চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশিত উপন্যাস তিনটি, পাথরের চোখ (বেহুলা বাংলা) অচিন পাখি (বাংলা জার্নাল) লক্ষণরেখা ( বাংলা জার্নাল ) কবিতাগ্রন্থ, ইন্দ্রনৗল, ও অশৗরৗ । লেখালেখির শুরু নব্বইয়ের দশকে বিভিন্ন লিটল ম্যাগ পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিতব্য প্রবন্ধ বাংলা উপন্যাস ও মূল্যায়নের পালাবদল।