ভয় ১৯৭১

আমার স্কুলের এক শিক্ষিকা ছিলেন, নাম উল্লেখ করলাম না। হাড় জিরে জিরে প্রচণ্ড পাতলা গড়ন, চোখে মোটা পাওয়ারের চশমা, খাটো মতো। বিয়ে করেন নি। বাসা নিয়ে একাই থাকতেন। গ্রাম থেকে কোন এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের ছেলেকে এনে নিজের কাছে রেখেছেন। সবার মুখে শুনতাম মুক্তিযুদ্ধে তার সবাই মারা গেছেন। তার তিরিক্ষি মেজাজ আর শুকনো শরীর নিয়ে মাঝে মাঝে দু’একটা রসিকতা করতে ছাড় দিতাম না। ঐ তেরো চৌদ্দ বছরের বানর প্রকৃতির ছেলেমেয়েরা যা করে আরকি!

আমাদের সাথে উনার ক্লাস ছিল না। মার্চ মাস ১৯৯৭সাল। আমরা ক্লাস এইটে। অষ্টম শ্রেণিতে কোন এক আপার এবসেন্টি ক্লাস নিতে এসেছেন। আমরা কেউ ক্লাস করতে চাইলাম না। উনি খুব সস্নেহে জিজ্ঞেস করলেন-
‘গল্প শুনবে?’
আমরা তো মহা আনন্দিত। আমি একটু বেশি। কারণ আমি বিশিষ্ট ফাঁকিবাজ মানুষ। আমরা সব শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বললাম,
‘হ্যাঁ শুনতে চাই।’
তারপর ধীরে ধীরে বললেন, একটা যুদ্ধের গল্প শুনো সত্য ঘটনা।

মার্চ ১৯৭১।আজ থেকে ছাব্বিশ বছর আগের কথা। দেশের অবস্থা খুব খারাপ। আমি আমার বোন ঢাকা মহিলা কলেজের হোস্টেলে থাকতাম। (কোন কলেজ বলেছিলেন আমার মনে নেই। তবে মহিলা কলেজ সেটা মনে আছে।) দেশের পরিস্থিতি রোজ খারাপের দিকে যাচ্ছিল। সাতই মার্চ আমি আর আমার বোন লুকিয়ে শেখ সাহেবের ভাষণ শুনতে গিয়েছিলাম। চট্টগ্রামের মানুষজনকে ঢাকায় খুব কম মানুষই চেনে। আমি আর আমার বোনের তাই মনে হয়েছিল কেউ কিছুই জানবে না। কিন্তু আমাদেরকে আমার কাকা দেখে ফেলেন। পার্টি করতেন। লিডারের ভাষণ শুনতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা সম্ভবত একজনই গিয়েছিলেন আমাদের চেনা, আর সেই আমাদের দেখে ফেললেন। তারপর বাবার কাছে খবর গেলো এক সপ্তাহের মধ্যে।

পরের সপ্তাহে বাবা আমাদের নিতে এলেন। আমি বিএ পরীক্ষার্থী ছিলাম। বোন ছিল প্রথম বর্ষে। হোস্টেল সুপার এসে খবর দিলেন বাবা নিতে এসেছে। লুকোচুরি করে যেটুকু দেশের কাজ করবো ভাবছি সে স্বপ্ন শেষ। বাবা আমাদের নিয়ে গ্রামে গেলেন। পড়ালেখা আপাতত বন্ধ। শেখ সাহেব ক্ষমতা পেলে পড়বো। আর নয় বিয়ে দিয়ে দেবেন। আমি আর আমার বোন প্রচণ্ড মন খারাপ করে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরলাম।

তারপর ঢাকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হলো, এলো কালরাত্রি। আমাদের হিন্দু পরিবারগুলো চট্টগ্রামেও নিরাপদ নই। প্রচণ্ড ভয় আমাদেরকে তাড়া করে ফিরছে। ঘরে আমি, বাবা দাদা আর আমার বোন। মেয়েদেরকে দেশের রাজাকার আলবদররা তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। তারপর এলাকার প্রভাবশালী নেতা ছিলেন ফজলুল কাদের চৌধুরী । তার আর সাঙ্গ পাঙ্গদের ভয়ে বাবা মা সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকেন। মা বাবা ঠিক করলেন আমাদের দু’বোনকে মামা বাড়ি পাঠাবেন। মামা বাড়ি আনোয়ারা। কর্ণফুলী নদীতে নৌকা নিয়ে যেতে হয়। বাবার আমাদের রেখে আসার কথা ছিল।

এরই মধ্যে আমরা মুসলমান হলাম। মানে নামে মুসলমান। কলমা পড়া শিখলাম। দোয়া দরুদ সব বাংলা বই দেখে দেখে পড়া শিখলাম। মা সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেললেন। দেখতে আটাশটা মুসলিম পরিবারের মতো লাগলেও পৈত্রিক সম্পত্তি হিন্দু পাড়ায়। আমরা মামার বাড়ি যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কাপড়,বই খাতা, নিত্য ব্যবহারের জিনিস গুছিয়ে ফেলেছি। কারফিউ চলছিল। উঠিয়ে দিলেই আমরা রওনা হবো।

এমন একটা দিনে এক মধ্যরাতের ঘটনা। আনুমানিক রাত দুটো। প্রচণ্ড গরম। গ্রামের দিকে এখনকার মত ইলেক্ট্রিসিটি নেই। গরমের জ্বালায় হাত পাখা নিয়ে বসে আছি। হঠাৎ কেউ জোরে দরজায় কড়া নাড়ছে। পাশের বাড়ির হারু কাকা। বাবার নাম ধরে ডাকছেন,
‘নিকিলিশ বউ ফোয়া লি বাইর অ। হারামজাদা অক্কল অইন ধরাইয়ে।’
(মানে, নিখিলেশ পরিবার নিয়ে বের হও। হারামজাদা গুলো আগুন লাগিয়েছে।)

আমরা তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম। বাসা থেকে বের হলাম। অন্ধকার আর কালো ধোঁয়ায় ঘর ঢেকে গেছে। দাদাকে দেখি বালতি নিয়ে ছুটোছুটি করছে। ঘরে পানি দিচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো গ্রামের এক লোক জাফর বা কী যেনো নাম, পাশের বাড়ির পারুলকে ঘাড়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। অর কাঁধে একটা বন্দুক। পারুল গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে বাঁচাও বাঁচাও। কিন্তু ওর গলা কেউ শুনছে না। আমি আর বোন ভয়ে সিটিয়ে গেলাম। বুঝতে বাকি নেই, আজকেই সেই ভয়ঙ্কর দিন। রাজাকাররা আমাদের মেয়েদেরকে উঠিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে।

বাড়ির পিছনে খাল। খালের ওপারে জংগল। জংগল বেশ ঘন। খালের পানিতে হালকা স্রোত। দু’বোনে সাতার কাটছি। ঐ পারে তাকিয়ে দেখি আগুনের ফুল্কিতে আকাশ বাড়িঘর সব লাল ,বাতাস উত্তপ্ত। এর মধ্যে মিলিটারি ট্রাক এসেছে, মিলিটারি ট্রাকের শব্দ, অনবরত রাইফেলের শব্দ। ভগবানের কাছে সেদিন বাবা মা আর দাদার জীবন ভিক্ষা চাইছিলাম। কিন্তু কে জানতো তাদের সাথে আর কোনোদিন আমাদের আর দেখা হবে না। সেদিন আগুনে হিন্দু পাড়ায় চব্বিশ জন মানুষ শহীদ হয়েছিল। তাদের মধ্যে বাবা, মা আর দাদাও আছেন।’

কথাটা বলতে বলতে আপার গলার স্বর ধরে এলো। চশমা খুলে টেবিলের উপর রাখলো। আমরা হা করে ম্যাডামের গল্প শুনছিলাম। সারা ক্লাসে পিন পতন শব্দ নেই। নাফিসা প্রথম বেঞ্চ থেকে বলে উঠলো,
‘আপা উই আর সরি। কিন্তু তারপর? আপনারা দুই বোন?’

আমরা দুই বোন খাল পার হলাম সাঁতরে। সমস্ত জামা কাপড় ভেজা। জংগলের ভিতর ঢুকে গেলাম। ঐ সময় জংগলটা বড় জায়গা জুড়ে ছিল। অনেক বন্য ও ভয়ংকর প্রাণি আছে জানি। কিন্তু আমরা তখন সবচেয়ে বেশি ভয় পাই মানুষে। আমরা অন্ধকারে হাঁটছি। অন্ধকার ঝোপঝাড় পা কেটে একাকার। পা ব্যথায় টনটন করছে, রক্ত পড়ছে। তবু দুই বোন হাত ধরাধরি করে দৌড়চ্ছি। তারপর একটা মানুষের সাথে ধাক্কা খেলাম। আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম ‘কে? কে?’
এক নারী কণ্ঠ কেঁদে উঠলো,
‘আমি গো আমি দিদি।’
‘কে তুমি ‘
মেয়েটা কেঁদে কেঁদে জবাব দিলে আমি গো আমি।’
‘আমার নাম রূপা। তোমাদের পাশের গ্রাম থেকে পালিয়ে আসার পথে রাজাকাররা আমাকে ধরে ক্যাম্পে তুলে নেয়। ওখানকার যে অত্যাচার তার বর্ণনা আমি তোমাদের বলতে পারবো না। তবে কাল আমাকে অন্য ক্যাম্পে নিয়ে যাবার পথে গাড়ি খারাপ হয়। তখন পালিয়ে ছিলাম। আমরা তিনজন পালিয়ে ছিলাম। কিন্তু দু’জনকে ওরা গুলি মেরে পথে মেরে ফেলে।’
হঠাৎ মেয়েটা গলার স্বর নিচু করে বললো, ‘আমার শরীরে কোন পোশাক নেই। তোমাদের কাছে বাড়তি পোশাক হবে?
আমরা দু বোন আমাদের ওড়না খুলে দিলাম।আমরা তিনজন রাত পার করলাম। সকালে গাছে চড়ে বসলাম।

এমন করে গাছে চড়ে চড়ে পাঁচ ছয় দিন কাটলো। খাওয়া নেই, পানি নেই,। সকালে পাতায় শিশির পড়তো। ওগুলো খেতাম। সারাদিন তৃষ্ণার্ত থাকতাম। ফলমূল খেতাম, পোকামাকড় ও বাদ দিতাম না। শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তারপর একদিন খাবারের জন্য নীচে নেমেছি। সন্ধ্যা হবে হবে। কয়েকটা রাজাকার বাহিনীর লোক বন্দুক কাঁধে জংগলে এসেছে। প্রচণ্ড একটা ভয় আমাকে গিলে ফেললো। হৃৎপিণ্ড বুঝি এখনি বেরিয়ে যায়। আমি আর রূপা একসাথে ছিলাম। আমরা জলদি পাশের গাছটায় চড়ে বসলাম। আমার বোনকে না দেখতে পেয়ে আমি মনে মনে খুব ভয় পেয়েছিল। নীচে রাজাকারগুলো বন্দুক নিয়ে খোঁজ করছে, জংগলে কেউ লুকিয়ে আছে কিনা। ওরা কিছুক্ষণ পর চলে গেলো। তখন আমি তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে চাপা গলায় আমার বোনের নাম ধরে ডাকতে শুরু করলাম। অন্য গাছে সে গোঙ্গানোর মতো শব্দ করতে গাছ থেকে নামলো। পরে দেখি তাকে বোলতা ঘিরে ধরেছে। বোলতার কামড়ে তার মুখটা ফুলে গিয়েছে। তাকে চেনাই যাচ্ছে না। বোলতার বিষাক্ত কামড় থেকে বাঁচতে সে দৌড়ে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করলো।

আমার বোনের মুখ, নাক, চোখ সব ফুলে গেলো, রাতে প্রচণ্ড ব্যথায় জ্বর আসলো। আমরা গাছে আর চড়তে পারছিনা। কারণ ওর অনেক জ্বর। ও খুব দুর্বল হয়ে আছে। রাতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রূপা মেয়েটা গা ঝাঁকা দিয়ে তুললো। ফিস ফিস করে বললো,
‘শিয়ালের পাল আমাদের ঘিরে ধরেছে।’
আমি চাঁদের আলোয় ঠাহর করলাম আট দশটা শেয়াল। এবার আমরা নির্ঘাত মারা যাবো। রুপাকে দেখলাম আমার বোনকে সে তার বুকে আটকানো ওড়না খুলে পিঠের সাথে বেধে ফেলেছে। ও আমাকে বললো,
‘আমি তোমার বোনকে নিয়ে গাছে উঠে যাচ্ছি। ও অসুস্থ তুমি এই চ্যালাকাঠ দিয়ে ওদের সামাল দাও।’
ও খুব ভালো করে গাছে চড়তে পারতো। তরতর করে ও চোখের নিমিষেই গাছে উঠে গেলো। একেবারে উঁচু মগডালে গিয়ে বসলো। আমি চ্যালাকাঠ নিয়ে আদ্যিকালের জংলিদের মতো যুদ্ধে প্রস্তুত। সেদিন শিয়ালের দলের মুখোমুখি একটুও ভয় পাই নি। মানুষের চেয়ে, ফ কা চৌধুরীর গুণ্ডাদের চেয়ে ওরা ঢের ভালো। মনে মনে ভগবানকে ডাকছিলাম। ঈশ্বর সেই ডাকে সাড়া দিলেন। একটা খরগোশ ছুটে গেলো পাশ দিয়ে। শিয়ালের দলনেতা কিছুক্ষণ ইতস্তত করলো। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওরা খরগোশের পিছনে তাড়া করলো। আমি আবার গাছে চড়ে বসলাম।

পরদিন একটা লোক আমাদের দেখে ফেললো। লোকটা কাঠ কাটে। কাঠুরে। তারপরও আমরা ভয় পাচ্ছিলাম। লোকটা আমাদেরকে আশ্বস্ত করে বললো,
‘বোন আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করবো না আমাকে বিশ্বাস করতে পারো।’
বোন শব্দটা শুনে একটু সাহস লেগেছে। লোকটাকে একটু একটু করে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছে। আসলে বিশ্বাস না করে আর উপায়ও নেই। এখানে এভাবে থাকলে আমরা না খেয়ে মারা পরবো। লোকটার সাথে আমরাও গেলাম। আমাদের মাথার চুলগুলোতে ভয়ংকর জট লেগেছে। সমস্ত শরীর রক্তাক্ত। শরীরের পোশাকের কোন ঠিক ঠিকানা নেই।

লোকটা আমাদের তার জংগলের ধারে ছোট্ট কুড়ে ঘরে নিয়ে গেলো। আমাদের তিনটা শাড়ি আর সালোয়ার কামিজ দিয়ে বললো,
‘এগুলো পর। আমার স্ত্রীর।’
তারপর লাজুক ভংগিতে বললো,
‘সন্তান সম্ভবা দেখে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
কোথা থেকে কোন একটা গাছের পাতা এনে আমার বোনের মুখে চোখে বেটে দিলো সবখানে। জ্বরের জন্য জলপট্টি দিলো। আমার বোন সুস্থ হয়ে উঠলো একদিনেই। তারপর আমি মামার বাসার ঠিকানা দিলাম। ঠিক হলো রাতে আমরা রওনা দেবো। রূপা ও আমাদের সাথে যাবে বলে ঠিক করলো। আমরা মধ্যরাতে রওনা দিলাম। নৌকা করে আমরা যাচ্ছি। খাল পার হয়ে নদীতে ঢুকেছি। সমস্ত খাল যাত্রায় আমরা নৌকার পাটাতনের নীচে লুকিয়ে ছিলাম। কর্ণফুলী নদীতে ঢুকে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল লুকিয়ে থাকতে থাকতে। নৌকার উপর উঠে বোরকার নেকাব খুলে একটু শ্বাস নিয়েছিলাম। তারপর আবার চেকপোস্ট। দুজন বন্দুকধারী আলবদর নৌকায় উঠলো পরের ঘাটে পৌঁছে দেবার জন্য। শ্বাস বন্ধ করে অপেক্ষা করতে করতে মনে হচ্ছিলো একটা যুগ পার হয়ে গিয়েছে। পিন পতন শব্দ করলেই শেষ। তারপর ওরা নেমে গেলো। আমরা হাফ ছেড়ে বাঁচি। তারপর লোকটা আনোয়ারা থানা অবধি পৌঁছে দিলো।

প্রচণ্ড আতঙ্কে মামা বাড়ির গাঁয়ে ঢুকে দেখি হিন্দু পাড়া খালি কেউ নেই। আমার মামা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। তার এক ছাত্র আমাদের পীর সাহেবের বাড়িতে নিয়ে যান। এখানে অসংখ্য নাম ঠিকানা বিহীন লোক জন সে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। হিন্দুদের হিন্দু পরিচয় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ওখানে আমার মামা মামিকে পেলাম। ওরা ভলান্টিয়ারের কাজ করছিলো। আমি আর আমার বোন প্রাণে পানি পেলাম।

ক্লাস শেষের ঘণ্টা বেজে উঠলো। বাইরে অংক স্যারও এসে পড়েছেন। দিদি সেদিন বললেন ‘এইতো দেশ স্বাধীন না হওয়া অবধি ওখানে ছিলাম। সেচ্ছাসেবী হিসেবে। একেকজন আশ্রিতার একেকটা গল্প। আমার আর পড়াশুনা হলো না। তোদের অরুণ স্যার এসে পড়েছেন। আজকে আর সময় নেই।’

আমরা আগ্রহ নিয়ে বললাম,
‘যুদ্ধ করেন নি? ‘
‘না আমি একজন ভীতু মানুষ।’

কথাটা বলে মুচকি হেসে ক্লাস ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন দিদি। দিদি নিজেই জানেন না তিনি কতটা সাহসী। একা থাকা পথ চলা কিন্তু চারটি খানি কথা নয়। দিদি সব ভয়কে যুদ্ধে জয় করে ফেলেছিলেন। এ যেন এক অন্য রকম যুদ্ধ। তারপর থেকে দিদিকে নিয়ে হাসি তামাশা করিনি আর। এতকাল যা করেছি তার জন্য নিজেকে কষে চড় মারলাম মনে মনে। দিদির কাছে মনে মনেই ক্ষমা চাইলাম। তবে খুব অপেক্ষায় ছিলাম সুযোগের অসম্পূর্ণ গল্পটা শেষ অবধি শোনার। সেই সু্যোগ আর আসেনি।

গল্পটা অন্য সব গল্পের মতো একদিন হারিয়ে গেলো। শুধু দিদির বুকে রয়ে গেছে, যেটা হয়তো দিদির মনে আজীবন সাহস দিয়ে গেছে। আজকে সেই দিদি বেঁচে আছেন না মরে গেছেন জানি না। কিন্তু গল্পটা আমার স্মৃতির কোণে একটুকরো ভয় হয়ে রইলো লেখার জন্য।

রুজহানা সিফাত