খোকার জন্মদিন

মা সায়েরা খাতুনের কাছে আজ খোকা’র জন্মদিন। তসবিহ হাতে দীর্ঘ মোনাজাত শেষে তাবারুকের মতো একটু, লাল গাঁইয়ের দুধে করা ঘন ক্ষীর তোলা।
টুঙ্গি পাড়ার লুৎফর শেখের কাছে দুরন্ত ঘুড্ডির মতো অস্থির, ছেলেকে নিয়ে কাটে প্রতিক্ষণ উদ্বিগ্নতায়.. জন্মদিনের এই দিনটা শুধুই খানিক নামাজ পড়ে দোয়া করা ছাড়া আর বিশেষ কোন উৎসব নয়।
বিপ্লবের অংকুরে সেই সময়কার সংগ্রামী বন্ধুদের কাছে মুজিবের কোন জন্মদিন নেই। দেশ ভাগের পর থেকে আটচল্লিশেই সক্রিয় রাজনীতির সোপান তলে উৎসর্গকৃত মুজিব এক চরম অনিশ্চয়তায় কাটায় দিন। ওই চঞ্চল বজ্র নিনাদের আর সময় কোথায়, প্রিয়জন নিয়ে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে বসে..
কেক কেটে, জন্মদিনের শুভেচ্ছা নেবার?
বায়ান্ন থেকে উনসত্তর পর্যন্ত এক দণ্ড সময় মেলেনি ‘শেখ মুজিবুর রহমান’ নামের বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধিকার নিয়ে দুর্বার প্রতিরোধী আন্দোলনের অগ্রগামী এই সৈনিকের।
তারপর নির্বাচনে সার্বজনীন গণমানুষের নেতৃত্বের শীর্ষ পদে স্বীকৃতি পেয়েও ক্ষমতা হস্তগত না হওয়া চিরবঞ্চিত বাঙালির প্রতিনিধি, গর্জে ওঠা সেই অমর স্বাধীনতার আহবায়ক “বঙ্গবন্ধু” মুক্তির সংগ্রামে পুরো জাতিকে উজ্জীবিত করে কারাবন্দী হলেন শেষবারের মতো পাক সরকারের নাপাক সেলে।
ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত গঙ্গা পার হয়ে যখন স্বাধীনতা এলো। কারামুক্ত বঙ্গবন্ধু স্বদেশে পা রেখেই উদয়াস্ত লেগে গেলেন অগ্নিস্তুপের ছাইয়ের নিচে বিধ্বস্ত তাঁর দেশ গোছাতে।
জন্মদিন পালনের আর সময় মিললো কই?
ঘরের বাচ্চারা প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছে,বাবার কোলে বসে বেলুন ফোটানো দিনে, তিন পরতের কেকের টুকরোয় কামড় দিয়ে এমুখ থেকে ওমুখে সুখ বিনিময় করবার কথা। আহা..
দেশের তরে সর্বত্যাগী পিতা বুঝি এমনই হয়!!
যৌবনে মায়ের হাতে ক্ষীর খাওয়া হলো না।
নামাজ শেষে বাবার দোয়ার শুভাশিস স্পর্শ বঞ্চিত মুজিব আজ স্বদেশের কোটি প্রাণ ও বিশ্বের আনাচ কানাচ ছড়িয়ে থাকা লাখো বাঙালির বুকের জমিন সমান কেকের অমৃত স্বাদ হয়ে শততম জন্মদিন পালনের মহা উৎসবে মেতেছে।
হে মহাকালের শ্রেষ্ঠ পুরুষ,
হে আমার স্বদেশ স্থপতি,বাংলাদেশের জাতির পিতা!
স্বর্গ থেকে তুমি দেখো, আজ পুরো বিশ্ব কেমন সমস্বরে গাইছে, তোমার শত বছরের পুঞ্জিভূত
না পাওয়া অসমাপ্ত কবিতায় শুভেচ্ছার সুরে..
বিশ্বলোকের আনন্দ মোড়কে উদ্ভাসিত স্তবগান আজ জয়ালোকের আনন্দ সঙ্গীতে মুখরিত চারিদিক।
শুভ জন্মদিন হে মহা প্রাণ।
জয় হোক, জয় হোক, জয় হোক তোমার রেখে যাওয়া স্বপ্নময় এই বাংলার। এতেই ফুটুক তোমার জন্মোৎসবের সার্থকতা।

এইচ এ ববি
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া।