পোট্রেট অফ এ সাইকো (৯ম পর্ব)

হেডকোয়ার্টার ব্রিফিং রুম৷ জেরিন বোর্ডের সামনে৷ সাথে মিঃ উইলিয়ামস৷ জেরিন এর কল এর প্রায় সাড়ে চারঘন্টা পর৷

উইলিয়াম উপস্থিত সবাইকে একটু আগে বলেছেন৷
জেন্টল মেন৷ এই ব্রিফিংটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ৷ গতকাল আমাদের একজন সঙ্গী ব্রুটালি মার্ডার হয়েছেন৷ সেই সাইকো’র দ্বারা৷ এবং এ তদন্তে আমরা আরও অনেক কিছুর সন্ধান পেয়েছি৷ অনেক প্রশ্ন উঠে এসেছে৷ আমাদের ডিপার্টমেন্টের একজন হওয়া সত্বেও নিকি অন্য কারও হয়ে কাজ করছিল৷ এর যথেষ্ট তথ্য প্রমাণও আমরা পেয়েছি৷ কোন ঘটনাই হেলাফেলা করার মতো নয়৷ কাজেই আমাদের এখন সাবধানে এগুতে হবে৷ আমরা ধারণা করছি বেশ কিছু লোক আমাদের দেশেরই লোক কিছু একটাতে জড়িত এবং সেটা আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর কিছুই নয়৷
বাংলাদেশ থেকে আসা মিস জেরিন এ ব্যাপারে আপনাদের ব্রিফিং দেবেন৷ আশা করি সবাই কোওপারেট করবেন৷ সাইকো কেসটা ছাড়াও অন্য কিছু একটা জড়িত এই ঘটনার সাথে৷ ব্যাপারটা জটিল এবং আরও জটিল হবার পূর্বেই আমাদের তা সমাধান করতে হবে!
এই সময়ে উইলিয়ামের কাছে একটি কল আসে এবং তিনি জেরিন কে বলেন মিস প্লীজ ক্যারিওন৷ আই নীড টু পিক দ্যা কল৷ এই বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন৷
জেরিন শুরু করলো
আসলে কোথা থেকে শুরু করবো ঠিক বুঝতে পারছি না৷ আমার দুটো কেইসও সম্ভবত এই ব্রিফিং এর আওতায় আনতে হবে৷ কাজেই একটু অতীত থেকে শুরু করছি…৷
একটা ডাকাতির কেস তদন্ত করতে যেয়ে আমরা একটা রেকেটের সন্ধান পাই৷ যারা গোল্ড স্মাগলিং এর সাথে জড়িত৷ আমাদের দেশের অনেক ক্ষমতাবান লোকও এতে ইনভলভ ছিলেন৷ মানে এখনও আছেন৷ লোয়ার লেভেলে কাজ করলেও আপার লেভেল আমরা রিভিল করতে পারিনি৷ এরপর ইউনিফর্ম ধারী আলতাফ দ্যা সাইকো কেসের ভার আমার উপর পড়ে৷ সেখানে আলতাফ পালিয়ে যায়৷ এটা সাড়েচার বছর আগের কথা৷ আরমান চৌধুরি কিডনেপ কেস ছিল এরপরে৷ সেখানে আমি কিছু ডক্যুমেন্টস পাই৷ ইনফ্যাক্ট কিডনেপার ফাইল গুলো আমার হাতে তুলে দিয়ে আত্মহত্যা করে৷ সেই সময়ে আমি সাসপেন্ড হই৷ এবং ইন্ডিয়া চলে যাই৷ সেই কীডনেপারের দেওয়া ফাইল থেকে প্রথম কেসএর কিছু যোগসুত্র খুঁজে পাই৷ তখনই বুঝতে পারি গোল্ড স্মাগলিং, হিউমেন ট্রাফিকিং, ড্রাগস সহ নানান ব্লাকমার্কেটের ব্যাপারে অনেক জায়গার অনেক মানুষ জড়িত৷ এবং এরা বাংলাদেশে নয় অনেক দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে৷ ভাগ্যক্রমে বা দুর্ভাগ্য ক্রমেই হোক কোলকাতা মানে ইন্ডিয়া থেকে একটা এগার বার বছরের মেয়ে কিডনেপ হয় এবং আমি সেটাতে জড়িয়ে মেয়েটাকে উদ্ধারের জন্য থাইল্যান্ড যাই৷ সেখানে সিন্ডিকেটের সন্ধান পাই আমি এবং আমার দেশের ইন্টেলিজেন্ট৷ বলতে গেলে থাই পুলিশ এবং গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্টের সাহায্য নিয়ে আমরা ওখানে ওদের কোমড় ভেঙে দিই৷ তখনই আহত হয়ে আমি দেশে ফিরে আসি এবং আমার সাসপেনশান তুলে নেওয়া হয়৷
আপনাদের দেশ থেকে তখনই আমার কাছে প্রস্তাব আসে৷ সেটা হলো এখানে একটা সাইকো কিলিং এ সেই আলতাফ দ্যা সাইকো’র ক্রিয়া কর্মের যথেষ্ট মিল আছে৷ ইনভেস্টিগেটিং এ দেখলাম আসলেই কিছু মিল আছে৷ আবার অমিলও৷
এরমধ্যে আমাকে আর নিকি কে ফলো করা হয়৷ আমরা ধরতে গেলে লোকটা পালিয়ে যায়৷ মিঃ উইলিয়াম এর ওখানে আমরা ডিনারের আমন্ত্রণে যাই৷ নিকি যায় না৷
পরে ফিরে এসে আমি নিকিকে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করি৷ বাথটাবে৷ সেখানে লিখা ওয়েলকাম জেরিন! ইংরেজীতে৷ আমাদের কাছে আলতাফের বাংলা লিখা মেসেজ আছে আগের কেইসের৷
ঐ লিখাটি এবং এই লিখাটি হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্টের কাছে পাঠানো হয়েছে৷
আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলছি আলতাফ একজন এক্স আর্মি পার্সন৷ আমি আগেও বলেছি৷ ভয়ঙ্কর এবং দুর্ধর্ষ৷ আমাদের দেশের আর্মি ডিভিশান কে নোট পাঠানো হয়েছে৷ আলতাফের যদি কোন ইংরেজী হ্যান্ডরাইটিং থাকে তাহলে সেটা যেনো ফ্যাক্স বা মেইলের সাহায্যে পাঠানো হয়৷ আশাকরি সেটাও এক্সপার্টের হাতে চলে গেছে৷
আমার এবং উইলিয়াম এর যতদূর ধারণা তাতে মনে হচ্ছে সিন্ডিকেট লন্ডনেও সক্রিয়৷ তারা ভয় করছে থাইল্যান্ড থেকে আমার আসাটাকে৷ এখানে যদি সিন্ডিকেটের লোকজনদের পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় তাহলে ওরা হয়তো সমস্যায় পড়বে৷
আরমান চৌধুরী কীডনেপ কেস এর সময় ওর একজন দেহরক্ষী ছিল নাম শওকত৷ আপাত দৃষ্টিতে আত্মভোলা এই লোকটা এক ভয়ঙ্কর ঠান্ডা মাথার খুনি আর আরমান চৌধুরির সবচেয়ে বিশ্বাসী লোক৷ তাদের মধ্যে অনেকটা প্রভু আর প্রভুভক্ত কুকুরের সম্পর্ক যেন৷ আরমান চৌধুরি মারা যাবার পর শওকত অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে৷
কাল নিকি নিহত হবার পর চারজন লোক নিকির ওখানে তল্লাশী চালায়৷ এদের একজন শওকত বলে আমরা মানে আমি সন্দেহ করি৷ এরপর উইলিয়াম এর সাহায্য নিয়ে আমি ইমিগ্রেশান চেক করাই৷ তখনই একটা তথ্য বেরিয়ে আসে৷ খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য৷ শওকত গত এক বছরে বেশ ক’বার লন্ডন আসা যাওয়া করেছে৷ তার শেষ আগমন হয়েছে আমি এখানে আসার সম্ভবত দু’দিন আগে৷
ধারণা করা হচ্ছে শওকত সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত এবং এই ভেতর থেকেই তাকে বা সিন্ডিকেট কে সাহায্য করা হচ্ছে৷ শওকত বা তার লোক আমাদের পিছু নিয়েছে৷ এবং নিকিও কোন না কোন ভাবে তাদের সাথে জড়িত৷
আমার মনে হচ্ছে আলতাফের হঠাৎ সক্রিয় হওয়া আমাকে লন্ডন ডেকে পাঠানো শওকতের আগমন সবকিছু আলাদা ঘটনা নয়৷ পরস্পর পরস্পরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত৷ সাথে নিকির নিহত হবার ঘটনাও৷
জেরিন একটু থামলো৷ টেবিলের উপরে রাখা পানির বোতলটা টেনে নিয়ে গলা ভেজাল৷ এর মধ্যে একজন প্রশ্ন করলো
সাইকোর সাথে এই ঘটনা কিভাবে জড়িত? ঠিক বুঝতে পারলাম না৷
জেরিন বলল আমিও ঠিক জানি না৷ কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে৷ অবশ্য নাও হতে পারে৷ তবে ইমিগ্রেশন এর তথ্যমতে গত পাঁচ বছরে যারা এশিয় এবং এদেশে এন্ট্রি নিয়েছে তাডের কারও প্রোফাইল আলতাফ ওরফ সোলায়মানের সাথে মিলছে না৷ তাহলে সে উদয় হল কোত্থেকে? কিভাবে? এজন্যই আমরা হাতের লিখা এক্সপার্ট দিয়ে জাজ করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷
একটা মেয়ে নাম উইলি, প্রশ্ন করলো আপনার কাছে কি পুরো ব্যাপারটা ঘোলাটে মনে হচ্ছে না৷
একজন সাইকো কিলার
একজন ঠান্ডা মাথার খুনি
একটা সিন্ডিকেট সব এক সুত্রে আসে কি করে?
জেরিন বলল এটা একটা সম্ভাবনার কথা বলছি৷
স্যাম তখন বলল তাহলে এখন আমাদের করণীয় কি মিস জেরিন?
জেরিন বলল আযনাদের পুলিশ শওকত কে ট্রেস করেছে৷ আমরা প্রথমে তাকে ধরার চেষ্টা করবো৷ কিন্তু খুব সাবধান৷ ও ভয়ঙ্কর খুনী৷ আরেকটা সাইক বললেও ভুল হবে না৷ আপনার চোখে চোখ রেখে গলায় চুরি চালিয়ে দিবে৷
ভাল কথা ওর প্রিয় ওয়েপন হচ্ছে ছুরি৷ আপনার কাছে আসা অব্দি আপনি বুঝতে পারবেন না ও এসে গেছে৷ আমাদের দেশে চট্টগ্রাম এ ট্রিপল মার্ডারে শওকত জড়িত বলে ধারণা করছি কিন্তু প্রামান পাইনি৷
এচজন প্রশ্ন করলো কিন্তু ম্যাম আপনি বলছেন আপনি একটা ফাইল উদ্ধার করেছেন সেটা কোথায়? সেটা দিলেই তো আমরা এগুতে পারি৷ যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করলেই হয়৷ সিন্ডিকেট শেষ হয়ে যায়৷ তাছাড়া ফাইল টা ওপেন হয়ে গেলে আপনার উপর নজরদারীও ওরা বন্ধ করে দিবে এবং আপনার উপর হামলার আশঙ্কাও কমে যাবে৷
জেরিন হেসে বলল আমার এই ব্রিফিংই সেই ফাইলটি রিভিল করার প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ হঠাৎ করেই আমি এই ফাইলটি দিয়ে দিতে পারি না৷ তথ্যপ্রমাণের প্রয়োজন৷ এজন্যই শওকত কে ধরা জরুরি….
আর কিছু বলার পুর্বেই উইলিয়াম ভেতরে প্রবেশ করলেন তারমুখ থমথম করছে৷ হঠাৎ উনার পিস্তলটা বের করে ফাঁকা গুলি করলেন৷ সবাই হতভম্ব৷ একহাতে জেরিন এর গলা পেঁচিয়ে ধরে পিস্তলের নলটা জেরিনের মাথায় ঠেসে ধরলেন৷
চিৎকার করে বললেন আমাকে কেউ আটকানোর চেষ্টা করোনা৷ জেরিন কে আমি নিয়ে যাচ্ছি৷ এখুনই৷ কেউ আটকাবার চেষ্টা করোনা প্লিজ৷
গুলির শব্দ শোনে পুলিশ চীফ ছুটে এসেছেন৷ সবাই হা করে তাঁকিয়ে আছে৷ পুলীশ চীফ এর নাম ম্যালকম হেইনস৷ তিনি চিৎকার করে বললেন উইলিয়াম এসব কি করছো? জেরিন কে যেতে দাও৷
উইলিয়াম বললেন প্লিজ স্যার আমি অপারগ৷ আমাকে বাঁধা দিবেন না৷ এই মেয়ে এখানে মারা গেলে ডিপ্লমেটিক দিক থেকে আপনারা অনেক সমস্যায় পড়বেন৷ আমাকে যেতে দিন৷
জেরিনও হতবাক৷ জেরিন জানে সে এখনই উইলিয়াম কে কুপোকাৎ করতে পারে৷ কিন্তু উইলিয়ামের পাগলামির সাথে অন্য কিছুর গন্ধ পাচ্ছে সে৷
উইলিয়াম রাস্তার সামনে রাখা নিজের গাড়িতে উঠল৷ সাথে জেরিন৷ অন্য কাউকে আসতে নিষেধ করা হল৷
স্যাম নিজেও অবাক৷ এতদিন ধরে উইলিয়াম এর সাথে কাজ করছে সে৷ এমন অদ্ভুত আচরণ কখনই করতে দেখা যায় নি স্যার কে৷ তার মনেও সন্দেহ দানা বেঁধেছে৷ উইলিয়াম একটা ফোন পেয়ে ব্রিফিং রুম থেকে বেরিয়ে যান৷ এসেই এমন করবেন কেন? তারমানে কারও নির্দেশে এটা করা হয়েছে৷ এবং এটা একটা সাজানো নাটক৷ কেউ দেখাতে চাইছে প্রকাশ্য দিবালোকে এই কাজটা উইলিয়াম করেছেন! কিন্তু কেন? স্যাম এর মনে হল এই নাটক করতে বাধ্য করা হচ্ছে উইলিয়াম কে৷ কি ভাবে?
বিদ্যুৎ চমকের মতো তার মনে হল ইরমা! স্যারের মেয়ের নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে৷ যার কারণে এসব করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি৷

দরোজা দিয়ে জেরিন কে নিয়ে বের হবার পূর্বে জেরিনের চোখে চোখ রাখল স্যাম৷ জেরিন নিচের দিকে ইশারা করলো৷
স্যাম জেরিনের হাতের দিকে তাকালো৷ জেরিন হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে সবাইকে স্থির থাকতে বলছে৷
স্যাম ওয়াকিটকি আস্তে আস্তে তুলে একটা বাটনে চাপ দিল৷ আর বলল অল ইউনিট প্লিজ স্ট্যান্ড ডাউন৷ আই রিপিট প্লীজ স্ট্যান্ড ডাউন৷ লেট গো উইলিয়াম…
জেরিন কে সামনের সিটে বসিয়ে পেছনে উঠে বসলেন উইলিয়াম তারপর বললেন প্লীজ জেরিন কোওপারেট কর৷ ওরা ইরমাকে তুলে নিয়ে গেছে৷ ওরাই নাটক টা করতে বলছে৷ প্লীজ কোওপারেট৷ নাহলে ওরা ইরমাকে মেরে ফেলবে! একজন পিতা হিসেবে আমি এটা হতে দিতে পারি না!
জেরিন শুধু বলল আই আন্ডারস্ট্যান্ড স্যার৷ বলুন কোথায় যাব…
তিনি বললেন আপাতত সোজা চালাও…

ভেতরে চীফ স্যাম কে বললেন ফর গড সেক স্যাম তুমি এমন কথা বললে কেন? আমাদের টীম এটা হ্যান্ডেল করতে পারত!
স্যাম সরাসরি বলল স্যার… আমাদের ব্রিফিং রুমে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেটা বাইরে গেল কিভাবে? নিশ্চয়ই আমাদের কেউ জড়িত এখানে৷ মিস জেরিন যে চতুর্থ পক্ষের কথা বলছেন সেটা কারা? আমাদের মধ্য থেকে কেউ!
একথা বলে স্যাম পুলিশ চীফের দিকে তার পিস্তল তাক করলো৷
বলল স্যার নিকির কললিস্ট চেক করা হয়েছিল৷ বেশ কবার আননোন একটা নাম্বার থেকে ওর কাছে কল গিয়েছে৷ আমরা নাম্বার ট্রেস করতে পারিনি কিন্তু লোকেশান ট্রেস করতে পেরেছি৷ দুটো লোকেশানেই আপনার উপস্থিতি কনফার্ম করা গেছে৷
এই প্রথম খেয়াল করলেন পুলিশ চীফ৷ স্যাম এর কানে একটা ব্লুটুথ ডিভাইস লাগানো৷ একেবারে কর্ন গহব্বরে, প্রায় বোঝাই যায় না এমন৷ আরও কয়েকটা পিস্তল কক হবার শব্দ শোনা গেল৷
চীফ তারপরও বললেন আর ইউ স্টুপিড মিঃ স্যাম! হ্যাভ ইউ লস্ট ইওর মাইন্ড!
স্যাম বলল নো স্যার আ’ম নট৷
পেছনের পকেট থেকে বাম হাতে একটা কার্ড বের করলো স্যাম৷ বলল আমি ছ’মাস আগে এই হোমসাইড গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্ট এ এসেছি ইন্টারনেল এফেয়ার থেকে৷ আমাদের কাছে এখানকার কিছু একটিভিটি নিয়ে সন্দেহ ছিল৷ তাই আসা৷ জেরিন আজ কিছু নাম রিভিল করার দ্বার প্রান্তে ছিল৷ সেখান থেকে তাকে এভাবে নির যাবার মানে কি৷ উইলিয়াম কে এভাবে ফাঁসানোর মানে কি!
আমরা ধারণা করছি স্যার, ইউ আর দ্যা ফোর্থ সাসপেক্ট !
স্যাম বলল বয়েজ প্লিজ এরেস্ট হিম!
আরও তিনচারজন এগিয়ে এল ৷ সবার কানেই ছোট্ট প্রায় অদর্শনীয় ডিভাইস লাগানো৷
নিজের পিস্তলটা শোল্ডার হোলস্টারে রাখতে রাখতে স্যাম বলল মিঃ ম্যালকম হেইনস স্যার! আপনি কি ঝেড়ে কাশবেন নাকি থার্ড ডিগ্রির ব্যবস্থা করবো!
ইতিমধ্যে সবজায়গায় মেসেজ দিতে বলল স্যাম৷ উইলিয়ামের গাড়ি ট্রেস করার জন্য৷ সমগ্র লন্ডন পুলিশ সক্রিয় হয়ে উঠবে মুুুহূর্তেই৷

দু’ব্লক পর উইলিয়াম গাড়ী পরিবর্তন করলেন৷ তারপর আরও চারব্লক যেয়ে আবার গাড়ি পরিবর্তন করলেন৷ এবার তিনি লন্ডন ছাড়িয়ে সাউদাম্পটনের দিকে ছুটলেন৷ এই গোয়েন্দা সেন্টারটা লন্ডন থেকে বেরিয়ে যাবার প্রায় শেষ সীমানায়৷ কাজেই পুলিশ এলার্ট হতে হতে উইলিয়াম যথেষ্ট দূরে চলে যেতে পারবেন৷
জেরিন গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বলল স্যার পিস্তল নামান৷ আমি আছি আপনার সাথে৷ কথা দিচ্ছি আপনার মেয়েকে আমরা উদ্ধার করবো৷ এমনকি আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও! সব খুলে বলুন আমাকে৷
উইলিয়াম বললেন আমার স্ত্রী রাশিয়ান ছিলেন৷ ভালবেসে আমরা পরিনয় সুত্রে আবদ্ধ হই৷ ইরমা যখন দু’বছরের তখন তিনি মারা যান৷ রোড এক্সিডেন্টে৷ আমার বড় মেয়ের বয়স তখন আঠারো৷ সে তার মায়ের মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়৷ ইনফ্যাক্ট আমাদের দেশে আঠারোর পরে ছেলেমেয়েরা স্বাধীন হয়ে যায়৷ মা বাবার কোন কথা মানতে তারা বাধ্য থাকেনা৷ সেই সময় থেকে বলতে গেলে প্রায় একাই ইরমা কে মানুষ করি আমি৷
ব্রিফিং এর সময়ে আমার কাছে একটা কল আসে৷ ওরা বলে ঠিক যে যে ভাবে আমি বলি সে সে ভাবে করো৷ না হয় ইরমাকে আর ফেরত পাবে না৷ কখনই না! ওরা যা বলল সব আমি করেছি৷ শুধু ইরমা কে বাঁচানোর জন্য৷
জেরিন বলল হুমম বুঝতে পেরেছি৷ এখন কি করবেন!
ওরা এদিকে আসতে বলল৷ দু’জায়গায় গাড়ি চেঞ্জ করতে বলল৷ আমি করলাম৷
জেরিন বলল আপনি কি বুঝতে পেরেছেন কে বা কারা কল করেছে?
নাহ! উইলিয়াম বললেন৷ ভয়েস চেঞ্জার ব্যবহার করা হয়েছে৷
জেরিন আর কিছু বলল না৷ ও গাড়ি ড্রাইভ করছে৷
উইলিয়াম বললেন জেরিন আ’ম সরি৷
জেরিন বলল বুঝতে পারছি৷ দেখা যাক কি হয়!
উইলিয়াম আবার বললেন আমার বড় মেয়েটা অনেকটা দেখতে তোমার মতন , সম্ভবত৷ বয়সও তোমার কাছাকাছি হবে৷ কিন্তু ভীষণ জেদি আর একগুঁয়ে৷ ছোটবেলায় হাইপার একটিভ ছিল সে৷ অনেক চিকিৎসা করাতে হয়েছে৷ মেয়েটা যেটা বুঝে তো বুঝেই৷ ড্রাগ এডিকটেড হয়ে গেছিল৷ ক্রাইমে জড়িয়ে এরেস্ট হয়েছিল৷ ট্রিটমেন্টও করাতে হয়৷ তার মা ঐ সময়ই মারা যান৷ ও পালিয়ে যায়৷ এরপর আর খোঁজ খবর পাইনি ওর৷
জেরিন দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল আপনার মেয়ের নাম কি ছিল স্যার?
উইলিয়াম বললেন হোলগা!
….
অন্ধকার বেসমেন্টে দেয়াল বোর্ডে ফোকাস করা আলোতে জেরিন আর উইলিয়ামের ছবি আঁটকানো৷ পিন দিয়ে৷ চেয়ারে বসে কালো হুডি ঢাকা মানুষটা ওদিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে৷
সে তার পথের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে৷ একঢিলে এক পাখি মারার চিন্তাই ছিল তার৷ কিন্তু কিছু মানুষ তার কাছে একটা প্রস্তাব নিয়ে আসে৷ যাদের ডিমান্ড ছিল একটা দানব কে সামলে রাখার৷ সেই দানব টা হচ্ছে থেরাগ!
দানবটা কি করছে না করছে সব কিছুই মনিটরিং এ ছিল৷ থেরাগকে দিয়ে ঘটানো সব হত্যা কান্ডই পরিকল্পিত৷ আর অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে সে৷
বেসমেন্টের লোকটা হুডি টা পেছনে ফেলে দিল৷ একরাশ লম্বা কালো চুল গড়িয়ে পড়ল পিঠ জুড়ে৷
আনমনে হেসে উঠলো হোলগা৷ অসুস্থ হাসি৷

হোলগা জানেনা থেরাগ তার পিছু নিয়েছিল৷ প্রায় পরিত্যক্ত একটা বাড়িতে হোলগাকে প্রবেশ করতে দেখলো থেরাগ৷ বেশ কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে গেল মেয়েটা৷
বেরিয়ে যাবার পর থেরাগ সন্তর্পণে প্রবেশ করলো ভেতরে৷ ওর চোখও শেয়ালের৷ মস্তিষ্ক হায়েনার৷ আস্তে আস্তে নেমে এল নিচে৷ বেসমেন্টে৷
টেবিল আর বোর্ডে লাগানো কাগজ পত্র স্টিকার সব দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল থেরাগ৷ এতদিন যাকে সে শিকার হিসেবে ভেবে এসেছে এখন বুঝতে পারল সে ই তাকে নাকে দড়ি দিয়ে নাচাচ্ছে!
থেরাগ নিঃশব্দে হেসে উঠল৷ আরও কিছু কাগজ ঘাটল সে৷ বুঝতে পারলো ভীনদেশি মেয়েটাকে এখানে টেনে আনতেই তাকে ব্যবহার করা হয়েছে৷ হোলগাকে গুটি বানিয়ে৷
টেবিলের পাশেই একটা ময়লার ঝুড়ি৷ ওখান থেকে একটা কাগজ উদ্ধার করলো থেরাগ৷ বুঝতে পারলো জেরিনকে কীডনেপের কথা আর সেটা কোন এক উইলিয়াম কে দিয়ে!
নিঃশব্দে হাসছে থেরাগ৷ বেসমেন্ট থেকে উপরে উঠে এল৷ কিছু একটা খুঁজছে সে৷ কিচেনেই পেয়ে গেল উদ্দিষ্ট জিনিসটা৷ গ্যাস স্টোভ৷ সাথে সিলিন্ডার৷ সিলিন্ডারের নলটা একটানে খুলে ফেলল থেরাগ৷
ভুস ভুস করে গ্যাস বেরুচ্ছো ওটা থেকে৷ আবার নিচে বেসমেন্টে আসল সে৷ খোলা সিলিন্ডার টা টেনে নিচে বেসমেন্টে নামালো থেরাগ৷ কিছু কাগজ পত্র সংগ্রহ করে একটা প্যাকেট বানালো৷ তারপর আবার উপরে উঠে এল৷ দরোজার সামনে এসে নাক কুঁচকালো৷ নাহ গ্যাস এখান পর্যন্ত আসেনি৷ থেরাগ স্মোক করে৷ তার কাছে একটা জিপো লাইটার থাকে৷ সেটা প্যান্টে ঘসা দিয়ে জ্বালিয়ে ভেতরে ছুঁড়ে দিল৷ দরোজা টেনে বেরিয়ে আসল৷
তুষারপাত শুরু হয়েছে৷ সামনে একটু দূরে একটা দোকান৷ ওখান থেকে রয়েল মেইলে পোস্ট করা যায়৷ নিকি কে খুন করার পর জেরিন এর পিছু নিয়েছিল সে৷ জানে জেরিন কোথায় উঠেছে৷ সেই হোটেল বরাবর প্যাকেটটা পার্সেল করলো সে৷ সেই সময় বুমম করে একটা শব্দ হলো৷ দোকানি থেরাগকে বলল প্লিজ ওয়েট৷ বলে বাইরে বেরিয়ে এল৷
থেরাগ স্ট্যাম্প নিয়ে পার্সেলে লাগালো৷ প্রয়োজনীয় কয়েন রেখে সন্তর্পণে বেরিয়ে এল৷
বরফ পড়ছে৷ তার মাঝে আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছে পূব দিকে৷ থেরাগের মন ভাল হয়ে গেল দৃশ্যটা দেখে৷ সে আস্তে আস্তে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পা চালালো৷
মনে মনে থেরাগ বলল আমি কফি পছন্দ করি না৷ কিন্তু আজ খাব৷ আইরিশ কফি খাব৷ বহু থেরাগ থেরাগ খেলা হইছে! আজ থাইকা আমি আলতাফ৷ আলতাফ দ্যা সাইকো! জেরিন আমার৷ অন্য কেউ জেরিনের ক্ষতি করতে পারবে না ৷ কিছুতেই না৷ আগে হোলগা কে শেষ করবো এরপর জেরিনকে উদ্ধার করার জন্য নামবো…. একই কথা বারবার রিপিট করতে করতে হাটতে লাগল সে!

আমরা দানব সৃষ্টি করি৷ নিজেদের প্রয়োজনে৷ কিন্তু সেই দানব একসময় আমাদেরই টুটি চেপে ধরে!

(চলবে)

 -পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *