রানা! কিভাবে সম্ভব? গতকাল রাতে তার বাসায় তবে কে এসেছে? সব এলোমেলো লাগছে। পুলিশের চাকরিতে বহুবার লাশ দেখতে হয়েছে কিন্তু আজকের মতো কখনও এতোটা চমকে যায়নি রাজিব। নিজেকে সামলে নিয়ে দক্ষ হাতে বডি সার্চ করলো। বুক পকেটে একটা কলম পাওয়া গেলো। ওটা নিজের কাছে রেখে বডিটা পোস্টমোর্টাম করার জন্য পাঠিয়ে দিল। এখন যেভাবেই হোক তাকে একবার বাংলোয় ফিরতে হবে। গতরাতের বিষয়টার ধোঁয়াশা কাটাতে হবে।
দ্রুত বাংলোয় ফিরলো রাজিব। ওকে দেখে সুরেন্দ্র নিজেই বলল, সাহেব তো এখনও উঠলো না। আমি কি খাবার টেবিলে দেবো? লাগবে না তুমি যাও। বলে সুরেন্দ্রকে সামনে থেকে সরিয়ে দিল রাজিব।
গতরাতে যে রুমটাতে রানাকে থাকতে দিয়েছিল সেটার দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো। মন জানে রানা এখানে নেই। তবুও কেনো যেনো মানতে পারছে না। দরজা খুলতেই রোদের আলোয় ঘরটা ভরে গেলো। না কোথাও কেউ নেই। বিছানা যেমন ছিল তেমনই আছে। ধীর পায়ে ঘরে প্রবেশ করলো রাজিব। না তাকে আবেগের বশবর্তী হলে হবে না। আবেগ মানুষের যুক্তিকে গুলিয়ে দেয়। সে একজন পুলিশ অফিসার তাকে সেই দৃষ্টিতে ব্যাপারটা তদন্ত করতে হবে। সমস্ত ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজলো। না কোথাও রানার আগমনের কোনো চিহ্ন নেই। তবে কি কাল রাতে ওটা স্বপ্ন ছিল? এতো স্পষ্ট? তবে যে রানার বলা প্রতিটি কথা মিলে গেলো।সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। রুম থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলো রাজিব। লোকাল থানায় যেতে হবে। কেসটা যথেষ্ট গুরুতর। ঢাকায় যোগাযোগ করে এই মুহূর্তে তাকে ঢাকা যেতে হবে। থানার বর্তমান অফিসার তাকে আসতে দেখেই স্যালুট ঠুকলো। বলল, স্যার চেয়ারম্যান সাহেব এসেছেন।
ভেতরে ঢুকেই ভদ্রলোকের সাথে দেখা হলো রাজিবের। চমৎকার এক সুগন্ধ চারিদিকে। ভদ্রলোক কি সুগন্ধি ব্যবহার করেন কে জানে। চেনা পরিচিত কোনো সুগন্ধের সাথে মিল নেই। অন্যরকম, নেশা ধরানো। সাদা টিশার্ট ও গ্যাভার্ডিনের প্যান্ট পড়া ভদ্রলোককে দেখে কোনো ভাবেই লোকাল চেয়ারম্যান মনে হয়না। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট। অমায়ীক হেসে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলেন ভদ্রলোক। আমি জগিং করছিলাম, খবরটা শুনে থানায় ছুটে এলাম। খুবই দুঃখজনক। যদিও ডেডবডিটা আমাদের এলাকার মধ্যে পাওয়া যায়নি। তবুও অফিসারকে বলেছি, আমার পক্ষে যতদূর সাহায্য করা সম্ভব হয় করবো।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, বলল রাজিব। আসুন এককাপ চা খেয়ে যান।
না ভাই, আপনাদের কাজে সমস্যা করতে চাইনা। আপনারা আপনাদের তদন্ত চালিয়ে যান, আমি আসছি। বলে বেরিয়ে গেলেন তিনি।। শক্ত পোক্ত পেটানো শরীর, দেখলেই বোঝা যায় অনেক যত্নে গড়া।
যতক্ষন ভদ্রলোককে দেখা গেলো ততক্ষনই তাকিয়ে রইলো রাজিব। অদ্ভুত এক ছন্দ আছে লোকটার চলায়। লোকটা চোখের আড়াল হতেই লোকাল থানার অফিসার পাশ থেকে বলল “বড্ড ভালো মানুষ। কোথাকার কে মরেছে তার জন্য ছুটে এসেছেন।”
চলবে…..
-জাহেদা মিমি