বিশ্বকাপের আগে গ্রামের কাকা সাদাকালো ১৪” টিভি কিনে আনলো, তার সাথে দোকান থেকে বানালো ১২ ভোল্ট এর বিরাট ভারী ব্যাটারী। খেলা দেখতে হবে বিশ্বকাপ ফুটবল ১৯৯০, টিভিতে দেখাতো ইতালীয়া_৯০।
রেডিও তে খেলার খবর শুনি আর বহু কষ্টে খেলার ম্যাগাজিন ক্রীড়ালোক পড়ি। পড়ি ১৯৮৬ এর বিশ্বকাপে একা ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছে। শুধু ম্যারাডোনার গল্প শুনি,ছবি দেখি,ছোট খাটো,গাট্টাগুট্টি টাইপের সুন্দর চেহারা। কাকার বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিমি দূরে। কাচা রাস্তা, বর্ষাকাল, রাস্তায় কোথাও কোথাও হাটু সমান কাদা। বাবা মাকে ম্যানেজ করি, রাতে খেলা দেখতে কয়েকজন দাদার সাথে কাকাদের বাড়িতে যাবো। বিশ্বকাপ শুরুর আগেও একদিন টিভি দেখতে যাই। বিটিভিতে খেলার আলোচনা হচ্ছে। Italia 90 লেখা আসে,কেমন যেন ডিকডিক শব্দ হতে থাকে, আর শব্দের সাথে দেখি এক ছোট জাদুকর নিজের গোলপোষ্টের প্রায় সামনে থেকে বল দিয়ে এক এক করে তার থেকে অনেক লম্বা খেলোয়াড়কে পিছনে ফেলে এগিয়ে যায়। কোন শক্তিই তাকে আটকাতে পারে না, একজন বল নিয়ে দৌঁড়ায়,অন্যরা শুধু দৌঁড়িয়ে হয়তো সামনে বাধা সৃষ্টি করে। ছোট লোকটা ততোধিক দক্ষতায় আবার পেছনে ফেলে একদম গোল। ততক্ষনে চিনে ফেলেছি, ছোট যাদুকর আর কেউ না, ম্যারাডোনা।
আরেকটা গোল দেখলাম, আগের মতোই কতগুলো খেলোয়াড়কে কাটালো কিন্তু গোল হলো না। পরে ভিন্ন মাধ্যমে হেডে গোল করলো ফুটবল যাদুকর। কি গোল! যে গোলটা পরিচিত পেল পরবর্তীতে “Hand of God”
নামে। সেই ৯০ সালে ১১\১২ বছরের ছেলেটা যেন ম্যারাডোনার যাদুতে আটকিয়ে গেল, মহাভক্ত হয়ে গেল ম্যারাডোনার, সাথে তার দেশ আর্জেন্টিনার।
৯০ এর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ, আর্জেন্টিনা বনাম ক্যামেরুন। অন্ধকার রাত, বৃষ্টিতে রাস্তায় ব্যাপক কাদা, ছোট টর্চলাইট নিয়ে দাদাদের সাথে ছুটলাম জীবনের প্রথম বিশ্বকাপের কোন ম্যাচ দেখতে।
টিভি বারান্দায় দেওয়া হয়েছে, বিশাল উঠান, উঠানে তালপাতা, চটের ছালা, খেজুরপাতার পাটিতে বসে আছে কম করে ৬০\৭০ জন। তাদের পিছনে দাড়িয়ে আরো ২০\৩০ জন।বেশীর ভাগ দর্শকই খেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না, তবে ম্যারাডোনাকে অনেকে জানে। সবাই ম্যারাডোনার জন্য আর্জেন্টিনাকে নেয়, অল্প কিছু বলে, আমি কালোর পক্ষে মানে ক্যামেরুন।
খেলা শুরু হয়, অনেক পরে জেনেছি এটাকে পাওয়ার ফুটবল বলে। আজেন্টিনা বল পেলেই ক্যামেরুনের দু’তিন জন ঘিরে ধরে,বলেও মারে, খেলোয়াড়ের ও মারে।
ম্যারাডোনার কাছে বল গেলে মার শুরু হয় দ্বিগুন বেগে, যাদুকর শুধু ফুটবল মাঠে গড়াতে থাকে। সে এক কঠিন বাস্তবতা, সাথে ক্যানিজিয়া ছিল, তারও একই অবস্থা।
১ম হাফ শেষ হওয়ার আগেই ম্যারাডোনাকে স্ট্রেচারে করে বাইরে নেওয়া হয়।৭০ মিনিটের মধ্যেই দুটি লালকার্ডে ক্যামেরুন ৯ জন। কিন্তু কিসের কি,যে আসে সেই মারে। আর্জেন্টিনা কূল হারায়,শেষ পযন্ত আর্জেন্টিনা পরাজিত হয় ১/০ গোলে।
তারপর থেকে আর্জেন্টিনাকে আর ছাড়তে পারিনি।
সবসময়ই চায়, খেলা জয়লাভ করুক। একেক জন একেক দলের সাপোর্ট করে বলেই তো খেলার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়। খেলাকে কেন্দ্র করে কাউকে ছোট না করি।
জয় হোক মেসির, জয় হোক আর্জেন্টিনার।
-সুকান্ত কুমার ঘটক