বিমানের চাকা দেখতে বেশ অদ্ভুত। এত বড় বিমান কিন্তু ছোট ছোট কয়েকটি চাকা। অবশ্যই বিমানের আকারভেদে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাপের চাকা ব্যবহার করা হয়। যেমন B777 বিমানের ১৪ টি চাকা থাকে। সামনে ২ টা আর পেছনে ১২ টা চাকা। উড়োজাহাজের ট্যাক্সিং এর জন্য সবচেয়ে জরুরী যে অংশটি, তা হচ্ছে ল্যান্ডিং গিয়ার। আর ল্যান্ডিং চাকার উপর ভর করেই উড়োজাহাজের ট্যাক্সিং সম্পন্ন হয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেকোনো ধরনের বিমানের ক্ষেত্রেই চাকায় সাধারণ বাতাসের পরিবর্তে নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করা হয়।
সাধারণত বড় বড় যাত্রীবাহী বিমানগুলো ৩০,০০০ ফুট থেকে ৬৫,০০০ ফুট উচ্চতায় চলাচল করে। আর এই উচ্চতায় বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা মাইনাস ৪৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ৫৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণ বাতাসে সবসময়ই কিছু পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকবেই। যদি বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের টায়ারে বাতাস ব্যবহার করা হয়, তাহলে এই নিম্ন তাপমাত্রায় বাতাসের সাথে থাকা জলীয় বাষ্প জমাট বেঁধে ছোট ছোট বরফের টুকরায় পরিণত হবে। এই অবস্থায় যখন বিমানটি মাটিতে অবতরণ করবে, তখন এর টায়ারের চাপ পরিবর্তিত হবে। যার ফলে বিমানটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারে। নাইট্রোজেন গ্যাসের মেল্টিং পয়েন্ট হচ্ছে মাইনাস ২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কাজেই মাইনাস ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নাইট্রোজেন গ্যাস তরলে পরিণত হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
সাধারণত বিমান রানওয়ে অবতরণ করার সময় প্রায় ২৫০ কিলোমিটারের কাছাকাছি থাকে। গড়ে ৩৮ টন ভার বহন করে একেক টা চাকা। বিপুল পরিমাণ বোঝাসহ এই বিশাল গতিবেগ নিয়ে বিমানে যখন রানওয়ের মাটি স্পর্শ করে, তখন চাকার সাথে রানওয়ের প্রচণ্ড ঘর্ষণ তৈরি হয়। আর এই ঘর্ষণের ফলে তৈরি হয় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। স্ফুলিঙ্গ থেকে কখনো আগুন যদি ধরেও যায় তাহলে নাইট্রোজেন তার নিষ্ক্রিয় ধর্মের কারণেই আগুন নিভিয়ে দিবে।
এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিতে ল্যান্ডিং গিয়ার এবং সংযুক্ত পার্ট চাকাকে বিমানের একটি ক্রিটিকাল পার্ট হিসেবে ধরা হয়। আর এর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য routine inspection এর পাশাপাশি INT, SVC, A/C, C-check করার জন্য বলা হয়েছে কিন্তু তারপরও সম্পত্তি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বিজি-৪৯৪ সৈয়দপুর থেকে ওঠার পর চাকা খুলে পড়ায় জরুরি অবতরণ করতে হয় ঢাকায়। বিষয়টি দুংখজনক ও পরিতাপের।
প্রতিটি বিমান রিলিজ করার পর্বে তিন ধাপের কোয়ালিটি চেক করার কথা কিন্তু কর্তৃপক্ষ কতটুকু গুরুত্বের সাথে চেক গুলো করছেন জানা অতি জরুরি।
এভিয়েশন খাতকে বাঁচাতে হলে কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি সুপারভিশন করতে হবে। সেফটি হ্যাজার্ড কী, তা নিয়ে সুচারুভাবে কাজ করতে হবে। কেননা ফ্লাইট সেফটির সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় সম্পৃক্ত। প্রতিটি দিকই চিন্তা করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
-কাজী ইসমাইল আলম।