প্ল্যানিং

টিউশনির টাকা দিয়ে আশার জন্য কেনা শাড়ীটা আম্মার ভয়ে লুকিয়ে রেখেছি। আম্মা আমার রুমে ঢুকলেই বুকের মধ্যে হার্টবিট বেড়ে যায়। কখন যে আম্মার কাছে ধরা খাই আল্লাহ জানে। আর এই কথা যদি কোনোভাবে আব্বার কানে যায় তাহলে আর রক্ষা নেই। আব্বাকে আমি যমদূতের মতন ভয় পাই। সামনে দাঁড়িয়ে কথা বললে এখনো ভয়ে পা কাঁপে। আর আব্বা যদি জেনে যায় আমি একটা মেয়ের জন্য শাড়ি কিনেছি তাহলে যে কি করবে আমাকে। ভেবেই বুকের ভেতরটা শুকিয়ে যায়। এমনিতেই আমি বেকার ছেলে।এখনো কোনো চাকরি জোটাতে পারিনি। তাই বাবার হোটেলে খেয়ে কোনোমতে টিউশনির টাকা দিয়ে হাত খরচটা চালিয়ে নেই।

আশা আমার গার্লফ্রেন্ড। কয়েকদিন পর ওর জন্মদিন। অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল ওর জন্মদিনে ওকে একটা হালকা গোলাপি রংয়ের  শাড়ী দিবো। হঠাৎ মাসের আগেই টিউশনির টাকা পেয়ে গেছি বলে আগেভাগে শাড়ী কিনে রেখে দিয়েছি। আমি আবার কাছে টাকা রাখতে পারিনা। কখন যে টাকা খরচ করে ফেলি। এই ভয়ও মনে মনে ছিল।

আম্মা সচরাচর আমার রুমে আসে না। কিন্তু শাড়ী কেনার পর থেকে মনে হয় আমার রুমে আম্মার আনাগোনা বেড়ে গেছে। আম্মা রুমে ঢুকলে মনে মনে আমি বিপদের দোয়া পড়ি। আল্লাহ আম্মা যেন আমার ওয়ারড্রোবে হাত না দেয়। যেই আমি ঘুম থেকে ওঠার পর জীবনে বিছানা গোছাই না। সেই আমি ঘুম থেকেই উঠেই আগে বিছানা গোছাই। যেন আম্মার এই রুমে আসা না হয়। সকাল বিকাল রুম ঝাড়ু দেই। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করি সময় যেন দ্রুত কেটে যায়। আশার জন্মদিন যেন তাড়াতাড়ি আসে।

আজ আশার জন্মদিন। সকালবেলাই ওর সাথে দেখা করে ওর হাতে শাড়ি তুলে দিয়েছি। বলেছি যেন বাসায় গিয়ে শাড়ী পরে আমাকে ছবি পাঠায়। কিন্তু এক ঘন্টা হয়ে যাচ্ছে মেয়েটার ছবি পাঠানোর কোনো নাম নেই। বারবার ফোন দিচ্ছি রিসিভও করছে না। মেয়েটার এই বদ অভ্যাসটা গেলো না। কেউ ফোন না রিসিভ করলে আমার প্রচন্ড রাগ হয়। আশাকে ফোন দিচ্ছি এমন সময় বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। আম্মা রান্নাঘর থেকে বলে উঠলো ” রোজ, দরজা খুলে দে। আমি রান্না বসিয়েছি”। বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু উপায় না দেখে গেলাম দরজা খুলতে। দরজা খুলে দেখি আশা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখার সাথে সাথে আমার কলিজা শুকিয়ে গেলো। আমি আমতা আমতা করে বললাম “তুমি”। ও কোনো কথা না বলেই সরাসরি বাসার মধ্যে ঢুকে গেলো। আমি বললাম ” এই করো কি তুমি? আম্মা রান্না ঘরে আছে। যদি তোমাকে দেখে ফেলে তাহলে আমার বাবার নাম ভুলিয়ে দিবে।” এবার আশাই বলে উঠলো ” আমি ইচ্ছে করে আসিনি। তোমার আম্মাই আমাকে আসতে বলেছে।” আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কি এই মেয়ে! আম্মা ওকে আসতে বলেছে। আমি বললাম “আম্মা তোমাকে চেনে কিভাবে?” ও এবার ওর ব্যাগের মধ্যে থেকে একটা চিঠি বের করে আমার হাতে দিলো। আমি চিঠির ভাঁজ খুলে পড়া শুরু করলাম।

ডিয়ার ভবিষ্যৎ বউমা,

“আমার ছোট হারামজাদা পোলার কাছে থেকে জানলাম আমার বড় হারামজাদা পোলার প্রেমিকার সামনে জন্মদিন। এইজন্য সে নাকি টিউশনির টাকা দিয়ে শাড়ী কিনেছে। প্রথমে বিশ্বাস করিনি। কিন্তু যখন ওর ওয়ারড্রোবে সত্যি শাড়ী খুঁজে পেলাম তখন আর অবিশ্বাস করিনি।বাংলাদেশে আর কোনো ছেলে পাওনাই?আমার এই রামছাগল মার্কা ছেলেটাকে পছন্দ করলা! আমার ছেলের মতো এমন জন্মের অলস মার্কা মানুষ আমি আমার জীবনে দেখিনাই। আজ ২৫ বছর ধরে এই রামছাগল আমাকে জ্বালাচ্ছে। তুমি মনে মনে ভাবছ ওর বয়স ২৪? আরে এক বছর যে পেটে ছিল ওইটা ধরবা না? তখন তো কম জ্বালাই নাই।ওর কাপড়ের দিকে খেয়াল করছিলা? বছরে একবার কাপড় ধোয় কিনা সন্দেহ। আর এখনো তো ওর ছোটবেলার বদ অভ্যাস যায়নি। মাঝেমধ্যে বিছানায় হিসু করে। তুমি কও? এইটা কোনো কথা? জিজ্ঞাস করলে বলে কি “এটা নাকি ওর ছোটবেলার প্রিয় অভ্যাস। তাই সব ত্যাগ করলেও এই অভ্যাস ছাড়তে পারবে না”। কিন্তু আমি তো জানি আসল ঘটনা। ও আসলে ভূতে ভয় পায়। তাই রাতে ভয়ে বাথরুমে না গিয়ে বিছানায়……… ।সবথেকে বড় কথা আমার ছেলে যে প্রেম করতে পারে এইটাই আমার বিশ্বাস হয়নি প্রথমে। যে ছেলে আমার সামনে মাথা নিচু করে কথা বলে সেই ছেলে যে মেয়েদের সাথে মিশতে পারবে এটা কখনো ভাবিনি। যখন শুনলাম ও তোমার সাথে প্রেম করে তখনি তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। সত্যি কথা বলতে ছেলের আমার হাজার দোষ থাকলেও ওর মনটা অনেক ভালো । ও কখনো মানুষ ঠকাবে না। এই বিশ্বাস রাখতে পারো।

তোমার সাথে যোগাযোগ করার তো কোনো বুদ্ধি নাই। আর আমার যে ছেলে, ওকে বললে জীবনে তোমাকে বাসায় আনবে না। তাই তোমার জন্য কেনা শাড়ীটার মধ্যে চিঠিটা দিয়ে দিলাম। জন্মদিনের দিন অবশ্যই আমাদের বাসায় আসবে। তোমার জন্য মজার মজার সব রান্না করে রাখবো। আর হ্যাঁ, তুমি যে আমাদের বাসায় আসবে সেটা আমার ছেলেকে যেন আগেভাগে বলো না।”

ইতি
তোমার হবু শ্বাশুড়ি।

চিঠি পড়ে আশার দিকে তাকিয়ে আছি। এমন সময় আবার কে যেন কলিংবেল টিপলো। চিঠিটা আশার হাতে দিয়ে দরজা খুলে দেখি আব্বা। হাতে দুইটা নতুন ঝাড়ু। আব্বার হাতে ঝাড়ু দেখেই দৌঁড়ে আমার রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আজ আর রক্ষা নাই। ইচ্ছেমত একটার পর একটা কাপড় পরতে লাগলাম। যেন ঝাড়ুর বারি কম লাগে শরীরে। মনে মনে গুনতে লাগলাম আব্বার এটা কততম ঝাড়ুর বারি। ওপাশ থেকে আম্মা দরজা ধাক্কাচ্ছে আর আমি কাপড় পরেই চলেছি।

হঠাৎ ওপাশ থেকে আম্মাই বলে উঠলো ” রোজ, দরজা খোল বাবা। ওরে ভয় পাসনে। এসব তো তোর বাবার প্ল্যানিং”।

-রিফাত আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *