নিকির লাশ একটা ব্যাগে ভরে এম্বুলেন্সে তোলা হয়েছে৷ প্রাথমিক রেকি করা হয়েছে নিকির ঘরের৷ জেরিন লিভিং রুমে বসে আছে৷ একটা কাউচের উপর৷ প্রাথমিক তদন্তে তাকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি৷ শুধু বলা হয়েছে বসে থাকতে৷ তাই থেকেছে সে৷ কোন উচ্চবাচ্চ করেনি৷ যা দেখার আগেই দেখে নিয়েছে সে৷ দেখার কিছু নেই আর৷ সবগুলো ঘর লন্ডভন্ড৷ প্রথমে আঘাত হেনেছে আলতাফ৷ এরপর আরেকটা টিম এসেছে৷ ওরা ঘরগুলোর সবকিছু উল্টে পাল্টে কিছু একটা খুঁজেছে৷৷
এটাই জেরিনকে অবাক করেছে৷ তারমানে নিকি কাউকে নিশ্চয়ই ফাইলটার কথা বলেছিল৷ ওরা এসে নিকিকে মৃত পেয়ে ফাইলটাই খুঁজেছে৷ কারা?
গতকাল সন্ধ্যেয় উইলিয়ামের বাসায় ওরা পার্টিতে ছিল৷ নিকি পার্টিতে যায় নি৷ শপিং মলের সামনে নেমে গিয়েছিল৷ সাথে ছিল স্যাম৷ নিকি বলেছিল স্যাম তুমি ওকে নিয়ে যাও৷ আমার কিছু কাজ আছে৷
স্যাম বলেছিল ইটস ওকে৷ জেরিন আর কথা বাড়ায়নি৷ উইলিয়াম ফিরতি পথে নিজে ড্রাইভ করে তাকে লিফট দিয়েছেন৷ তখনও জেরিন এই দুইজনের ব্যবহারে সন্দেহজনক কিছু দেখে নি৷
জেরিন বেশ বুঝতে পারছে৷ এখানে তার আগমন অনেকেই জানে৷ আলতাফ তার বহু পুরোনো একটা ক্ষত৷ আলতাফ শত্রু নয়৷ মাথানষ্ট একজন মানুষ৷ সে তার উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ব্যস্ত৷ সে ফাইলও বোঝে না কন্সপিরিসিও বোঝে না৷
এরপর লন্ডন পুলিশ টীম৷ তাদের অনেকেই জেরিনের এই কেইসে আসাটা মেনে নিতে পারেনি৷ সেটা যে কারণেই হোক৷ স্যাম, নিকি, উইলিয়াম সহ যাদের সাথে পরিচয় হয়েছে প্রাথমিক ভাবে তারাও জেরিন আসার বিপক্ষে ছিলেন৷ কাল পার্টিতে সেটা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশও করেছেন উইলিয়াম৷ ঘরে উনি সম্পূর্ন আলাদা ব্যক্তি যেন৷ একজন মায়াময় পিতা৷ তার ষোল বছরের একটা মেয়ে আছে৷ জেরিনের সাথে উইলিয়াম পার্টিতে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন৷
মেয়েটার নাম ইরমা৷ ইরমা বলেছিল তুমি সেই জেরিন! বাংলাদেশ থেকে এসেছো৷ ড্যাড তোমার কথা বলেছেন৷ তুমি নাকি দুর্দান্ত কপ৷ জেরিন হেসেছিল৷
বলেছিল লেগে থাকো৷ এরপর জেরিন এর সাথে ইরমা যা কথা বলেছিল সবক্ষেত্রেই কোন না কোন ভাবে মিঃ উইলিয়াম জড়িত৷
জেরিন উদাস হয়ে যায় সেসময়ে৷ নিজের বাবার কথা চিন্তা করে৷ বাবা কে শেষত্বক দেখেইনি জেরীন আর তার মা৷ বাবা যখন নিহত হন তখন মঙপ্রু’র সাথে জঙ্গল ভেঙে জীবন বাঁচাতে ছুটছিল ওরা৷ পেছনের আকাশ লাল হয়ে উঠেছিল৷ সূর্য নয় আগুনের লেলিহান শিখায়৷ দীর্ঘদীন ওরা মঙপ্রু’র গ্রামে লুকিয়েছিল৷ মঙপ্রু নিজের মেয়ের মতো তার মাকে আর নিজের দাদুর মতো জেরিনকে আগলে রেখেছিল৷
ছোটবেলায় বাবা জেরিনকে মোয়েথাই এর শিক্ষা দেন৷ এরপর মঙপ্রু৷ দুটো বছর গড়ে প্রতিদিন সেসময়ে ১৪-১৬ ঘন্টা মোয়েথাই প্রাকটিস করেছে সে৷ আধুনিক মিক্সমার্শাল আর্ট টাইপ ফোর্সড মোয়েথাই নয়৷ সেই প্রাচীন মোয়েথাই৷ যেখানে শক্তির পাশাপাশি আত্মিক আর শারীরিক উন্নয়নটাও জরুরি থাকে৷ জেরিনও দারুণ একজন ছাত্র ছিল৷ মঙপ্রু তাকে তাই উজাড় করে শিখিয়েছেন৷
জেরিনের ভেতরে একটা জেদ কাজ করছিল৷ সেই সময় মঙপ্রু জেরিনকে বলেছিল মা, এই যারা তোমার বাবাকে মেরেছে তারা হয়তো একসময় তোমার পিছু নেবে৷ ওরা যা চায় সেটা পায় নি৷ হয়তো তোমার কাছে একদিন ওরা আসবে৷ সেই জিনিসটার খোঁজে৷ তখন তোমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে৷ হবে না?
জেরিন মাথা নেড়েছিল৷ সেদিন থেকেই….
মিস জেরিন কি ভাবছেন? পার্টিতে স্যাম এর কথায় অতীত থেকে বর্তমানে ফেরত আসে সে৷ হেসে বলেছিল কিছু না৷ উইলিয়াম আর ইরমা কি কথা বলতে বলতে হাসছিল৷ জেরিন ওদিকে তাকিয়ে আছে দেখে স্যাম বলেছিল স্যার মেয়েকে খুব ভালবাসেন৷ জেরিন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলেছিল এই ভালবাসাটা আমি খুব মিস করি!
এরপর উইলিয়াম স্যাম জেরিন সহ আরও দু’জন সাইকো’র ব্যাপার নিয়ে আলাপ করে৷ কথা হয়েছিল পরদিনই ওরা ঘটনাস্থল গুলো পরিদর্শন করবে এবং সেই মোতাবেক এনালিসিস এব ওয়ার্কে যাবে৷
অথচ জেরিন ফিরে এসে দেখলো নিকি মরে পড়ে আছে৷ ঘরদোয়ার লন্ডভন্ড৷ তৎক্ষনাৎ উইলিয়াম কে ফোন করে সে৷ উইলিয়াম আসার আগে সন্তর্পণে চেক করে৷ সবকিছু৷
হোমিসাইড পুলিশ এসে জেরিন এর ঘর সহ বেশ কিছু জায়গায় হিডেন ক্যামেরা খুঁজে পায়৷ জেরিন তার কানগুলো আগেই সরিয়ে নিয়েছে৷
লুকানো স্থান থেকে উদ্ধার করা হয় রেকর্ডিং সিস্টেম৷ সেখানে ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায়
নিকি উপর থেকে এসে দরোজা খুলছে৷ হঠাৎ সে পড়ে গেল৷ ফ্রন্টডোর এর পাশে একটা বড় ফ্লাওয়ার ভাস ছিল৷ ওটার উপর পিঠ দিয়ে পড়ে নিকি৷ সাইকোটা মেয়েটার চুলের মুঠি ধরে ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে৷ সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠছে৷ নিকি নড়তে পারছে না৷ অবিন্যস্ত ভাবে হাত পা নাড়ছে৷ মাথার একপাশে রক্ত৷ মুখের অর্ধেকটা ঢেকে গেছে৷ লোকটার অপর হাতে একটা বেসবল ব্যাট! পাঁচফুট এগারো হবে লোকটার উচ্চতা ৷ কিছুক্ষণ পর ওখান থেকে বের হয়ে প্রথমে সিঁড়ি বেয়ে নামল৷ সিঁড়ির গোড়ায় থমকে গেল৷ এরপর কিচেনের দিকে চলে গেল৷ তারএকটু পরই দেখা গেল চারজনের একটা দল প্রবেশ করেছে৷ ওরা সব তছনছ করছে৷ কিছু একটা খুঁজছে৷ ওরা প্রফেশনাল কিন্তু খুব বেশী যে তেমন নয়৷ প্রফেশনাল হলে এই ভিডিও গুলো আর চোখ গুলো নষ্ট করে যেত৷
চারজনের মধ্যে একজন লোককে জেরিনের পরিচিত মনে হল৷ মনে হলো কোথাও দেখেছে লোকটাকে৷ কোথায় মনে করতে পারল না৷
জেরিন উইলিয়াম স্যাম কারও মুখেই কথা নেই৷ চুপ হয়ে আছেন সবাই এবং গম্ভীর৷ দলের একজনের এভাবে মৃত্যু , আসলে মেনে নেওয়া কষ্টকর৷
উদ্ধার করা ভিডিও ফুটেজ নিয়েও উইলিয়াম চিন্তিত৷ প্রথমটা সাইকো৷ ঠিক আছে৷ এরপরেরটা৷ চারজন মানুষ? এরা কারা? একজন গোয়েন্দার বাসায় ঢোকার সাহস ওরা পায় কি করে! এরা কি ইন্টেলিজেন্স নাকি ইন্টারনেল এফেয়ার! নাকি অন্য কেউ? তাহলে অন্যকেউ টা কে?কারা? ওরা কি খুঁজতে এসেছে৷
যেটা খুঁজতে এসেছিল সেটা জেরিনের সাথে সম্পর্কযুক্ত কি! তাহলে জেরিন না থাকা অবস্থায় আসল কেন? সেদিন টানেলে ওরা পিছু নিল৷ গাড়িতে জেরিন ছিল! হুড পড়া একলোক৷ জেরিন কনফার্ম করেছে লোকটা সাদা৷ তারমানে সে আলতাফ হতে পারে না৷ তাহলে কে? উইলিয়াম এর হিসেব অনুযায়ী নিকি’র রেসপন্স টাইম স্লো ছিল৷ হিসেব করে দেখেছে সে৷ জেরিন গাড়ি ছেড়ে বের হবার প্রায় পাঁচমিনিট পর নিকি’র কল আসে৷ কেন? এ সময়টা কাকে দিয়েছে সে! নিকির পুরো কললিস্ট আনানোর জন্য বলেছে সে৷ দেখতে হবে ওখানে এমন কেউ আছে কি না৷
আলতাফ একটা সমস্যা৷ এই জেরিন কে কেন আনা হল একটা সাইকো কেইস সলভ করার জন্য! শুধুই সাইকো কেসের উপদেষ্টা হিসেবে নাকি অন্য কোন হিসেব আছে এর পেছনে?
উফ মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে উইলিয়ামের৷ এত প্রশ্ন অথচ সমাধান নেই! মানে পাচ্ছে না কোন৷
প্রাকটিস প্যাডে জেরিনের রণরঙ্গীনি মূর্তি দেখেই বুঝেছিল এ মেয়ে মনে প্রাণে একজন সোলজার৷ এ ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না৷ নিজের কাজের প্রতি কর্তব্যবোধ ও দায়িত্ববোধ না থাকলে দুটো ভাঙা রিব আর মচকানো পায়ের ব্যথা নিয়ে আসত না৷ মেয়েটা এসেছে শুধুমাত্র এই ভেবে যদি একটা মানুষের জীবন সে বাঁচাতে পারে! উইলিয়াম বোঝে৷ কিন্তু এখন একটা সন্দেহ ওর মনে দানা বাঁধছে৷ জেরিনকে শুধু সাইকো কেসের জন্য আনা হয় নি৷ অন্য ব্যাপারও আছে৷ কিন্তু কি সেটা?
জেরিনের কথায় উইলিয়াম বাস্তবে ফিরে আসলেন৷ উইলীয়াম স্যার৷ আমার একটা প্রশ্ন ছিল৷ জেরিনকে এই কথাটা দু’বার বলল৷ তারপর উইলিয়াম বললেন বল মিস৷
জেরিন বলল স্যার এই গোপন ক্যামেরা গুলো আপনাদের লাগানো কি?
উইলিয়াম বলল স্যরি মিস জেরিন৷ এসব কথা এখন থাক৷ বুঝতেই পারছো নিকি’র মৃত্যু ব্যাপারটা জটিল করে দিয়েছে৷ এভাবে ব্রুটালি মার্ডার আমি বহুদিন দেখিনি৷ আলতাফের ফাইল আমিও পড়েছি৷ এর বাইরে কি কোন কিছু আছে৷ যেটা আমরা জানি না৷
জেরিন বলল সেটা তো আমি আপনাদের কাছে জানতে চাচ্ছি৷ এভাবে নিকির খুন হওয়া অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ স্যরি খুন হওয়া প্রশ্নের জন্ম দেয় নি৷ নিকির এটিচ্যুড জন্ম দিয়েছে৷ চারজন লোক ঘরটা লন্ডভন্ড করলো কেন? আমার টেব টা নিয়ে গেল কেন? জবাব তো আমি চাইবো৷
স্যাম বলল ম্যাম চলো আমরা পরস্পর কে সাহায্য করি৷ এভাবে পাল্টাপাল্টি প্রশ্ন করলে আমরা কোন জবাবই পাবো না৷
জেরিন বলল উইলিয়াম স্যার আমার মনে হচ্ছে এই সাইকোর বাইরে টাইকো আছে কেউ! সেটা বহুবচনও হতে পারে৷
লন্ডনে আসার আগে আমি থাইল্যান্ডে বেশ বড় একটা অপারেশান শেষ করি৷ ওখানে ছোট্ট একটা মেয়ে কে বাঁচাতে যেয়ে আমি একটা ফাঁদে পড়ে যাই৷ ওখানকার একটা ক্রাইম সিন্ডিকেটের সাথে আমার সংঘর্ষ বাঁধে৷ ইচ্ছে করেই তার হেল্পিং হ্যান্ড গুলোর কথা এড়িয়ে গেল জেরিন৷ ভাগ্যক্রমে ওখানকার প্রভাবশালী দু’একজনের নাম পরিচয় জানা ছিল৷ মানে জেনেফেলেছিলাম৷ থাইপুলিশের মাধ্যমে এদের কিছু এরেস্ট হয়, সংঘর্ষে কিছু মারা যায়৷ ওটা একটা সিন্ডিকেট ছিল৷ ক্রাইম সিন্ডিকেট৷ ভারত পাকিস্তান থাইল্যান্ড এদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত৷ আরও দেশ আছে৷ সেসব দেশে তাদের একটিভিটিও লক্ষ্য করা গেছে৷ আমার যতদূর ধারণা এই লন্ডনেও এরা সক্রিয়৷ ড্রাগস, মানিলন্ডারিং, হিউমেন ট্রাফিক, সোনা, স্মাগলিং হেন কাজ নেই যাতে ওরা জড়িত না৷ আমাদের দেশে অনেক রাজনীতিবিদ ব্যবসায়ী এমনকি আইনের লোকও এদের সাথে জড়িত৷ ওরা হয়তো সন্দেহ করছে আমার কাছে এমন কিছু ইনফরমেশান আছে যেটা লন্ডনে ওদের সিন্ডিকেটের দু’একজন বা অনেকেই এর মাধ্যমে ফেঁসে যেতে পারেন৷ কাজেই…
উইলিয়াম বললেন হুমম৷ বুঝেছি৷
সেক্ষেত্রে ধরা যায় নিকি ডাবল এজেন্টের কাজ করছিল, কিন্তু সব গড়বড় করে দিল সাইকো কিলার টা৷
একজেক্টলি৷ বলল জেরিন৷
উইলিয়াম মাথা তুলে বললেন স্যাম নিকি’র কললিস্ট চেক করো৷ ভাল করে৷ সাসপিশাস কিছু পেলে আমাকে জানাও৷ আর জেরিন বুঝতেই পারছো ব্যাপারটা ক্রমশ ঘোরালো হয়ে উঠছে৷ তোমাকে আপাততঃ আমরা একটা হোটেলে তুলে দিচ্ছি৷ আগামী দু’দিন আমরা সাইকো কেসটা নিয়ে যতদূর সম্ভব ডীল করবো৷ তারপর তোমাকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে৷ বাকিটা আমরা সামাল দেব৷ এভাবে তোমার এবং অন্য অনেকের লাইফের রিস্ক নিতে পারি না৷
জেরিন মাথা নাড়ল৷ বাইরের দিকে আঙুল তুলে বলল স্যার একটা পাগল বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ কখন কার উপর আঘাত হানবে কিছুই ঠিক নেই৷ এর ওপর অন্যরকম একটা ষড়যন্ত্র টের পাচ্ছি৷ কেউ বা কারা নিকির কাছে এসেছিল৷
এখন সময় হয়েছে আমাদের ইনফরমেশন গুলো শেয়ার করার এবং কোন রূপ ভনিতা না করেই৷
আপনারা প্রথম ভুল করেছেন আমার আসাটা এখানকার টেবলয়েডে ছাপিয়ে দিয়ে৷ এতে করে সতর্ক হয়ে গেছে আরেক পক্ষ৷ যারা মনে করছে আমি কিছু ইনফরমেশান ক্যারি করছি৷ দ্বিতীয় ভুল করবেন যদি আলতাফকে ধরার পূর্বে আমাকে দেশে পাঠিয়ে দিন৷ এই মাথানষ্ট মানুষটা কখন কি করবে সেটা আপনি বুঝতেই পারবেন না৷ আমাদের প্রথমে ওরে ধরার জন্যই সর্বশক্তি নিয়োগ করা দরকার৷ চলুন আমরা ওটা ডিসকাস করি৷ এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে!
স্যাম বলল কথাটা কিন্তু ঠিকই বলেছে জেরিন, স্যার!
উইলিয়াম বললেন ঠিক আছে এই জায়গাটা আপাতত সিল করে দাও৷ একটা টিম কে বল নিকির খুনের ইন্সপেকশান করতে৷ আমরা কাল সকাল থেকে সাইকো কেসে পুরোপুরি নজর দিব৷
আর স্যাম তুমি লিস্টেড একটা হোটেলে মিস জেরিন কে উঠিয়ে দাও৷ আগামীকাল সকালে ওকে পিক করে নিয়ে আসবো৷ কাল থেকে আমরা উঠেপড়ে এটার পেছনে লাগবো৷
ওরা সবাই বেরিয়ে এসে যার যার গাড়িতে উঠল৷ মিডিয়ার লোকজনও পৌঁছে গেছে৷ এরা খবর কি ভাবে পায় কে জানে! উইলিয়ামকে ঘিরে ধরল ইনফরমেশানের জন্য৷ তিনি নো কমেন্টস বলে গাড়িতে উঠলেন৷ কিছু ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইট জ্বলল জেরিনকে উদ্দেশ্য করে৷
স্যাম আর উইলিয়ামের গাড়ি দু’দিকে ছুটল৷ কেউ লক্ষ্য করলো না, অনতিদূর থেকে একজন বাইকার পিছু নিল৷ উইলিয়াম নয়, যে গাড়িতে জেরিন আছে সেটা লক্ষ্য করে!
…
উইলিয়াম চিন্তিত৷ ভীষণ চিন্তিত৷ তার ক্যারিয়ারের অন্যতম জটিল কেস এটা৷ তিনি স্পষ্ট এ কেসে তৃতীয় পক্ষের গন্ধ পাচ্ছেন৷ সিন্ডিকেটের কথা তিনিও কিছুটা শুনেছেন৷ জেরিনের থাইল্যান্ড কান্ডের কথা তিনি কিছুটা জানেন৷ এবার মনে হলো বিস্তারিত জানা দরকার৷
এক মাথা নষ্ট সাইকো
জেরিনের এখানে আসা
নিকির খুন
জেরিন কে ফলো করা… কেন জানি তার মনে হচ্ছে সব একসূত্রে গাঁথা৷ হঠাৎ তার আরেকটা সম্ভাবনার কথাও মনে উদয় হল৷ জেরিনের কোন পুরোনো শক্রুও কি এখানে জড়িত! যদি তাই হয় তাহলে অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলে যায়…
…
উইলিয়াম এর শেষ কথাটা নিয়ে জেরিনও ভাবছে৷ হোটেলে নিজ বিছানায় শুয়ে৷ জেরিনেরও মনে হচ্ছে এই কান্ডে মানে নিকি কান্ডে তার পুরোনো কোন শত্রু জড়িত৷ চারজন মানুষের একজন কে তার চেনা মনে হয়েছে৷ কোথায় দেখেছে! লন্ডনে? নাহ এটা কোন সম্ভাবনা নয়৷
থাইল্যান্ডে? যদি হত তাহলে মনে পড়ত৷ রিসেন্ট কিছু না৷
তাহলে বাংলাদেশে? সম্ভব৷ হয়তো চার সাড়েচার বছর আগে৷ তখন তো সে আরমান চৌধুরি কেসে ইনভলভ ছিল৷ আরমান চৌধুরিকে একটা মেয়ে কিডনেপ করেছিল সেসময়৷ মেয়েটার নাম মনে করতে পারছে না৷ মেয়েটা শেষমেষ আত্মহত্যা করে৷ আরমান চৌধুরি সম্পর্কে একটা ফাইল দিয়ে যায় মেয়েটা৷ সেই ফাইল থেকে সে নিশ্চিত হয় বহু আগে তার বাবার মৃত্যুর পেছনে আরমান চৌধুরি জড়িত ছিলেন৷ তিনি ইনফরমেশান লিক করে থাইল্যান্ড সিন্ডিকেট এর কাছে বাবার পরিচয় ফাঁস করেন৷
যেদিন বাগান বাড়িতে আরমান চৌধুরিকে খুন করে জেরিন সেখানে একজন মানুষ ছিল না৷ আরমানের সাথে ছায়ার মতোন থাকা তার ড্রাইভার৷ দেহরক্ষি৷ লোকটা ঠান্ডা মাথার খুনী৷ উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তাকে সেসময় কিছুই করা যায় নি৷ তাছাড়া জেরিন সাসপেনশানে ছিল সে সময়৷ লোকটার নাম কি ছিল , কি ছিল… জেরিন মনে করতে পারছে না৷
কিন্তু সেই লোক লন্ডন আসবে কি ভাবে৷ আরমান চৌধুরি কে মারার শোধ তোলার মতো আর তো কেউই নেই৷
জেরিন স্মৃতি হাতড়াচ্ছে৷ আর কোন লোককেই মনে ধরছে না তার৷ বার বার ঘুরে ফিরে চিন্তাটা ঐ ড্রাইভারে এসে স্থির হচ্ছে৷ কেন?
এখন দুটো ইনফরমেশান তার খুব দরকার
এক লোকটা আরমান চৌধুরির মৃত্যুর পর কি করছে কোথায় আছে৷
দুই লোকটার লন্ডন পর্যন্ত আসার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা আছে কি না৷
বিছানা থেকে উঠে পড়ল জেরিন৷ হোটেলে আসার সময়ে একটা ফোনবুথ দেখেছে সে৷ ওখান থেকে ফোন করাই সবচেয়ে নিরাপদ৷
দুটো ফোন করল জেরিন৷ একটা লোকাল অন্যটা দেশে৷ স্বাভাবিক কথাবার্তার মধ্যদিয়ে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশান দিল সে৷ রিসিভার জায়গামতো রাখতে রাখতে হঠাৎ নামটা তার মনে পড়ল৷
শওকত! লোকটার নাম শওকত ছিল!
দশমিনিট পর দেশে আবার ফোন করল জেরিন এবং ইনফরমেশান পেয়ে গেল৷ তার চিন্তার সাথে ওদের ইনফরমেশান মিলে গেছে৷ লোকটার নাম শওকত৷ তবে এই মূহুর্তে ওরা আর কোন ইনফরমেশান দিতে পারলো না ওরা৷ সময় চেয়েনিল ওরা দেশ থেকে৷
রিসিভার নামিয়ে আবার ফোন করল জেরিন৷ এবার উইলিয়াম কে৷
উইলিয়াম ফোন তোলার সাথে সাথে জেরিন বলল স্যার! আমি জেরিন৷ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারে আপনাকে এই ভোর বেলায় ফোন করতে বাধ্য হলাম৷ ইমিগ্রেশন এ খোঁজ নিন স্যার, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব৷ গত দু’তিন মাসে শওকত নামের কেউ বাংলাদেশ থেকে এসেছে কি না! তাহলে অনেক প্রশ্নের উত্তর আমরা পেয়ে যাবো৷
উইলিয়াম বললেন আমি দেখছি জেরিন৷ তুমি এখন কিছুটা সময় রেস্ট নাও৷ কাল একটা লম্বা দিন শুরু হতে যাচ্ছে৷
ফোন নামিয়ে রেখে উত্তেজনায় কাঁপছে জেরিন৷ সে শিওর৷ শওকতই হবে৷
আরমান চৌধুরি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকলে শওকতও আছে৷ দেশে সিন্ডিকেটের লোক এখনও রয়ে গেছে৷ ওরাই হয়তো শওকত কে রিক্রুট করেছে৷ জেরিন নিশ্চিত লন্ডনে তাদের লোক আছে৷ সিন্ডিকেটের লোক৷ ওরাই শওকত কে আনিয়েছে! শওকত জেরিন কে খুন করলে কারও কিছু আসবে যাবে না৷ প্রমাণ করা যাবে প্রভুর খুনের প্রতিশোধ নিতে শওকতই এই হত্যা কান্ড ঘটিয়েছে!
আলতাফ
সিন্ডিকেট
শওকত
এরা হলো প্রথম তিন পক্ষ৷ তাহলে চতুর্থ পক্ষটা কারা? চতুর্থ পক্ষ? এই কথাটাই জেরিন কেন ভাবছে? নাকি এই তিন পক্ষের মধ্যে কেউই সকলের অগোচরে চতুর্থ পক্ষ হয়ে কাজ করছে৷
সাড়ে চারবছর পর আলতাফ হঠাৎ লন্ডনেই তার কর্ম কান্ড শুরু করবে কেন? কেন জেরিন কে আহব্বান জানানো হবে লন্ডনে আসার? আলতাফ কখনই এভাবে কাউকে দিয়ে ফলো করাবে না, জেরিনকে৷ সে একা কাজ করে৷
তাহলে? অনেক হিসেব জেরিন মেলাতে পারছে না৷
এবার কি হবে? …
(চলবে)
-পলাশ পুরকায়স্থ