তিন সপ্তাহ পর৷ ক্যাম্পবেলের বাড়িতে সবাই মোলাকাত হয়েছে৷ শিবলি, হাসান, তাজ, রফিক সাথে স্যাম, হিউ এবং বাংলাদেশ থেকে আরেকজন নতুন মেয়ে ইরিনা৷ ইরিনা আর্কিওলজিস্ট৷ সে কেন এসেছে সেটা পরে বলছি৷
জেরিন এখন একটা লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে৷ গত দুই সপ্তাহ পুরো বিছানা বন্দী ছিল সে৷ একটু ভাল হবার পর ক্যাম্পবেল নিজ দায়িত্বে নিজের বাড়িতে এনেছেন ওকে৷ বহুদিন একা একা থেকেছেন তিনি৷ জেরিনের গ্রান্ড পা ডাকটা ওনাকে উদ্বেলিত করে তোলে৷ কাজেই চিকিৎসা কালীন সময়ে তিনি অনুরোধ করেছিলেন জেরিন কে৷ জেরিন ফেলতে পারেনি৷ ডাকসাইটে লেডী গোয়েন্দা জেরিনেরও মনে একটা শিশু বাস করে৷ আর সেই শিশু ভালবাসার কাঙাল!
দিনটা রৌদ্রজ্জ্বল৷ সামনে চেয়ার পাতা হয়েছে৷ বারবিকিউ পার্টি৷
সবাই গোল হয়ে বসা৷ জেরিন এসে বসেছে কিছুক্ষণ হল৷
স্যাম বলল ম্যাম আপনি যা করেছেন তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ৷ এরপর দুটো খাম এগিয়ে দিল স্যাম৷ বলল একটাতে আপনার এখানে ভিজিটের ডীমান্ড করা টাকা আছে৷ আর অন্যটাতে আপনার এই ইউ কে এর অনারারি নাগরিকত্ব৷
আপনাকে জনসমক্ষেই এটি দেওয়া হত কিন্তু আপনার পরিচয় আর আমরা রিভিল করতে চাচ্ছি না বলে এই অবস্থা৷
বুঝবেন আশা করি৷
জেরিন হেসে খাম দুটো নিল৷ বলল মিঃ স্যাম অসংখ্য ধন্যবাদ৷ আমি বাংলাদেশের মেয়ে৷ বাংলারই থাকবো৷ অনারারি নাগরিকত্বটা আমার প্রয়োজন নেই৷
স্যাম বলল ম্যাম আপনার হয়তো নেই৷ আর আমরাও আপনাকে জোর করছি না৷ তবু এটা আপনার থাকল৷
শিবলি বলল জেরিন তোমার সাথে এদের পরিচয় নেই৷ হয়তো চেন সবাইকে৷
জেরিন হেসে বলল তাজ কে চিনি৷ ও আমাকে একটা কেইসে দারুণ হেল্প করেছিল৷
মিঃ রফিককেও চিনি৷ বহু আগে চাকুরীর প্রথম দিকে কাজ করেছি তার সাথে৷
হাসান! তুমি সেই ক্যাডার না৷ শম্পা যাকে নিয়ে “আলোহীন কিছু জোনাকি নামের একটা উপন্যাস লিখে সাহিত্যপদক পেয়েছিল! তুমি বেঁচে আছ কি ভাবে?
হাসান বলল ম্যাম ফাঁসিটা একটা নাটক ছিল৷ ইন্টেলিজেন্স আমাকে দেশের কাজে আমার মেধা লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছিল৷ আমার এনালাইটিকেল এবিলিটি নাকি সবার নেই৷ কাজেই তারা সন্তর্পণে আমাকে এখানে পাঠিয়ে দিয়েছেন৷ আরও উন্নত ট্রেনিং এর জন্য!
শুধু ইরিনাকে চিনলাম না৷
ইরিনা মেয়েটা প্রায় জেরিনের সমানই লম্বা হবে৷ একহারা গড়ন৷ একটু ভাঙা গালে পুরুষালি ছাপ৷ কিন্তু সব মিলিয়ে একটা কমনীয় ভাব আছে ওর মাঝে৷
ইরিনা বলল ম্যাম আমি একজন আর্কিওলজিস্ট৷ একটা অভিযানে আমরা যাব৷ এখান থেকে তাজ , মিঃ রফিক, শিবলি আর আমি এই চারজন যাব৷ আমরা আসলে আপনাকেও নিতে চাইছিলাম এই অভিযানে৷
জেরিন কিছু না বলে উঠে দাঁড়াল৷ মৌণ রোদ ঝরা প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ৷ তারপর বলল আমার পক্ষে এই অবস্থায় কোথাও যাওয়া সম্ভব না৷ তাছাড়া আমি ঠিক করেছি দেশে ফিরে চাকুরীটা ছেড়ে দেব৷ স্বাধীন ভাবে কাজ করা যাচ্ছে না এই সিস্টেমে৷ কাজেই এই সিস্টেম থেকে আমি বেরিয়ে যেতে চাই!
শিবলি বলল চাকুরী ছেড়ে কী করবে তুমি? এই এক কাজ ছাড়া আর কিছু পারো?
জেরিন বলল চাকুরী ছাড়ার কথা বলেছি৷ গোয়েন্দাগিরি ছাড়ার নয়৷ প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটিং করবো আমি৷ লাইসেন্সের জন্য এপ্লাই করেই এসেছিলাম৷ কিন্তু এখানে যে এত কিছু ঘটবে চিন্তাই করিনি!
হিউ বলল ম্যাম এসব পরেও আলোচনা করা যাবে৷
এই সাইকো কেসটার অনেক কিছুই আমরা জানি না বা ক্লীয়ার হচ্ছে না৷ আমাদের একটু বলবেন কি!
জেরিন বলল বলুন কী জানতে চান?
স্যাম বলল ম্যাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে জিনিসটা আমাদের কাছে ধোঁয়াশা ঠেকছে সেটা হল এই লোক থেরাগ কিন্তু এই লোক আলতাফ নয় সেটা আপনি বুঝলেন কি ভাবে? আর কখন?
জেরিন একটা চেয়ারে বসে পড়ল৷ লেমনেডে চুমুক দিয়ে বলল প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম৷ কিন্তু কিছুটা কনফিউশানে ছিলাম৷ আপনারা সাইকোটার কীলিং এর যে ছবি গুলা দেখিয়েছেন সেটা থেকেই প্রথম ডাউট হয় আমার৷
আলতাফ ডান হাতি ছিল৷ থেরাগ বাম হাতি৷ আমি আপনার সামনা সামনি দাঁড়িয়ে যদি ডান হাতে আঘাত করি তাহলে সেটা আপনার মাথার বামে লাগবে৷ আর বাম হাতি হলে ডানে৷ আঘাত গুলোই ছিল আমার প্রথম ক্লু৷ শেষে ওয়ার হাউজে চেহারা আর উচ্চতা দেখে কনফার্ম হই এ আলতাফ নয়৷ অন্য কেউ মানে থেরাগ৷
কিন্তু ম্যাম হাসান বলল থেরাগ আলতাফ হয়ে এসব করল কীভাবে? আর একেবারে প্রায় নিঁখুত ভাবে আলতাফ হিসেবে নিজেকে চালিয়ে দিল! আমি কিছু বুঝতে পারছি না!
তাছাড়া আরেকটা টিম আপনার পিছু লাগল, শওকত নামের একটা প্রফেশনাল কীলার তাদের সাথে যোগ দিল? হোলগা, নিকি, উইলিয়াম এরা কেন আপনার পেছনে লাগল? বলল তাজ,
জেরিন হেসে বলল আরে দাঁড়াও তোমরা৷ একসাথে এত প্রশ্নের জবাব আমি দিব কিভাবে? তবে সব মিলিয়ে আমি একটা থিসিস দাঁড় করিয়েছি৷ ওটা তোমাদের সাথে শেয়ার করব৷ কিছু জিনিস অবশ্য ভুলও হতে পারে, খাপছাড়া লাগতে পারে৷ তবে আমার কাছে এর চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা নেই৷ হয়ত এটা নিয়ে আরও কাজ হবে নতুন তথ্য বেরিয়ে আসবে…
জেরিন তার কথা শুরু করল৷ সবাই মনযোগ দিয়ে শুনছে,
ঢাকায় আরমান চৌধুরির নিহত হবার পর আমি ফারার হয়ে যাই৷ শওকত কোন রকমে বুঝতে পারে আমিই এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত৷ শওকত ছিল অনেকটা জন্তুর মত৷ মানে প্রভুভক্ত কুকুরের মতোন৷ সে চিন্তা করলো যে ভাবেই হোক সে প্রতিশোধ নেবে৷
আমি সে সময় ইন্ডিয়া চলে যাই৷ উত্তর কোলকাতার এগার বার বছরের একটা মেয়ে কে বাঁচাতে আমি থাইল্যান্ড যাই৷ সেখানে একটা সিন্ডিকেট ছিল৷ যারা বহুবছর আগে আমার বাবাকে হত্যা করেছিল৷ সেই সিন্ডিকেটটা বিভিন্নদেশে বিস্তৃত৷ যার একটা লিংক ছিল আরমান চৌধুরি৷ ওকেই দেশে আমি প্রথম হত্যা করি৷
থাইল্যান্ডে যখন আমার পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় তখন পুলিশ আমার কাছে সহায়তা চায়৷ কেননা ওরা জানত আমার কাছে একটা ফাইল আছে৷ যাতে সিন্ডিকেটের থাইল্যান্ড অংশের মাথাকে টার্গেট করা যাবে৷
বাবার রেখে যাওয়া ফাইলে আরমান চৌধুরি সম্পর্কে কোন তথ্য ছিল না৷ শুধু একটা প্রশ্নবোধক ছিল৷
আরমান চৌধুরির কীডনেপার ছিল শিরিন নামের একটা মেয়ে৷ সে কিছু ডক্যুমেন্ট আত্মহত্যার পূর্বে আমাকে দিয়ে যায়৷ সেটি থেকেই আরমান চোধুরীর পরিচয় আমার কাছে ফাঁস হয়৷ আরমান চৌধুরি হিউম্যান ট্রাফিকিং এ জড়িত ছিল৷ সেই সময়ে এই লোকটাই বাবার পরিচয় ফাঁস করে দেয় থাই সিন্ডিকেটের কাছে৷ যে কারণে বাবা নিহত হন আর আমরা মানে আমি আর আমার মা থাইল্যান্ডের গহীন অরণ্যে অনেকদিন লুকিয়ে থাকি৷
থাইল্যান্ডে সিন্ডিকেটের মাথা কাটা যাওয়ায় সিন্ডিকেটের টনক নড়ে৷ ওরা বুঝতে পারে একে একে আমি লিস্ট অনুযায়ী ওদের উপর আঘাত হানব৷
খবরটা পৌঁছে যায় লন্ডনে৷ অবশ্য লন্ডনের সিন্ডিকেট আরমান চৌধুরী নিহত হবার পরপরই এটা বুঝতে পারে৷
সেই সময়ে আমি গা ঢাকা দিই৷ ওরা আমার খোঁজ না পেয়ে একটা ট্রেপ সেট করে৷ আমাকে বের করে আনার৷ মানে জনসমক্ষে আনার৷ সেই ট্রেপ সেট করতে ওরা এখানকার করাপটেড কিছু পুলিশ অফিসার রাজনৈতিক পার্সনকে ব্যবহার করে৷ সম্ভবত এটা এম আই সিক্স থেকে মেনটেন করা হয়৷ ওরা চাইছিল না, এদেশের গুরুত্বপূর্ণ কোন রাজনৈতিক নেতার নাম যেন জনসমক্ষে না আসে৷ সম্ভবত এই লোকটা প্রচুর ক্ষমতাবান৷ সে ভেবেই নিয়েছিল আমি তথ্যটা ফাঁস করে দিতে পারি৷
প্রথমে ওরা চিন্তা করলো সঠিক টোপ এর৷ সব মাছ সব টোপ খায় না৷ ওদের প্রাথমিক চিন্তা ছিল আমাকে বের করার এবং এখানে টেনে আনার৷
আমার সব গুলো কেইস ওরা স্টাডি করলো৷ দেখল আলতাফ নামের এক সাইকো আমার হাত থেকে পালিয়ে গেছে৷ কাজেই ওদের প্রথম টার্গেট ছিল আলতাফ কে খুঁজে বের করা! কিন্তু ওকে খুঁজবে কোথায়? তাছাড়া আলতাফকে পেলেও যে কাজ হবে এমন তো নয়৷
কাজেই ওরা চিন্তা করলো ওরা একটা আলতাফই তৈরি করবে৷ এবং সেই মতোন কাজে লেগে গেল৷
জেরিন লেমনেডে চুমুক দিয়ে একটু দম নিল৷ এবার শিবলিকে বলল তুমি এবার কিছুটা বল৷ তোমাকে কিছু জিনিস খোঁজ করতে দিয়েছিলাম৷ ওটা পেলে এই আলতাফ তৈরির ব্যাপারটা হয়ত ব্যাখ্যা করতে পারবে৷
শিবলি বলল হ্যাঁ৷ আমি খোঁজ নিয়েছি৷ এবং মিঃ স্যাম এ ব্যাপারে আমাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছেন৷
থেরাগের সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারটা একটু ব্যাখ্যা করি৷ এটাই হচ্ছে আলতাফ তৈরির মূল বিষয়৷
সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারের মধ্যে একটা ডিসঅর্ডার এর নাম ডিসোসিয়েটিভ ডিসঅর্ডারস।
এটাতে আবার ভাগ আছে৷ যেমন ডিসোসিয়েটিভ এমনিশিয়া : মানে হল সাময়িক ভাবে একজন মানুষ তার মেমরি হারিয়ে ফেলে৷ সেটা কয়েকদিন থেকে কয়েক বছর কিংবা সারা জীবনের জন্যও হতে পারে৷
এরপর হল ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডার বা মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারও বলা যায়৷ এক্ষেত্রে একজন মানুষ তার নিজের মধ্যে এক বা এর অধিক আলাদা সত্বা অনুভব করে৷ অনেক সময় নিজেকেই সে অন্য লোক বলে ভেবে নেয়৷
আরেকটি হল ডেপুডারালাইজেশান: এক্ষেত্রে একজন মানুষ নিজেকে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন কিংবা তার বাস্তবতাকে বিকৃত করে তোলে৷ তারা তাদের নিজেদের কে নিজস্ব স্মৃতি, অনুভূতি কিংবা চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের অন্য মানুষে পরিগনিত করে ফেলে৷
যাক আমি আর ভেতরে যাব না৷ তবে থেরাগের অবস্থা বোঝার জন্য এই তিনটে ডিসঅর্ডার সম্পর্কে কিছুটা জানতে হবে বিধায় বলা৷
থেরাগের লাশ পাবার পর আমরা অনেক কিছু বুঝতে পারি৷ অনেক রহস্য উন্মোচন হয়৷
মিঃ স্যাম এবার আপনি বলুন বাকি টা৷
মিঃ স্যাম বলা শুরু করলেন
থেরাগের লাশ পাবার পর, যখন মিস জেরিনের জ্ঞান ফিরল তখন তিনি আমাদের বলেন এ আলতাফ নয়, অন্য কেউ৷ তিনি আরও বলেন
এ এমন কেউ যে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত, ম্যানিয়াক এবং অনেকটা আলতাফের মেন্টাল ডিসঅর্ডারের কাছাকাছি কেউ৷
তখন আমরা হাতের ছাপ ডিএনএ এবং আনুষঙ্গিক অনেক ব্যাপার নিয়ে কাজ শুরু করি৷ এবং ভয়ঙ্কর কিছু সত্য বেরিয়ে আসে!
থেরাগ একটা মানসিক এসাইলেমের রোগী ছিল৷ তার নাম তুরাগ আলি৷ বাংলাদেশ থেকে আসা ব্রিটিশ সিটিজেন৷ তৃতীয় পুরুষ৷ মেরিনে ছিল সে৷ স্ত্রী’র বহুগামিতার প্রমাণ পেয়ে সে তার স্ত্রীকে এবং পরবর্তিতে আরও দু’তিন জন কে হত্যা করে সে৷ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত লোকটা ডিসোসিয়েটিভ এমনেশিয়ায় ভুগছিল যখন সে পুলিশের কাছে ধরা পড়ে৷ এসিইলেমে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং ব্যাপারটা ভুলে যাই আমরা৷ অসুস্থ মানুষকে কেই বা মনে রাখে৷
থেরাগের প্রেমিকা পরিচয়ে হোলগা তাকে এসাইলেম থেকে নিয়ে যায় নিজে দেখাশোনা করবে বলে৷ পেছনে অবশ্য সিন্ডিকেটের লোক ছিল বলে সহজেই ম্যানেজ হয়৷
ওরা তাকে নতুন পরিচয় দেয় আলতাফ নামে৷ যে থেরাগ হয়ে এদেশে এসেছে৷ ক্রমেই তাকে ব্রেইনওয়াশ করা হয়৷ সেখান থেকে পার্সোনালিটি ডিসওর্ডার এবং ডেপুডারালাইজেশনে ভোগে সে৷ ইনফ্যাক্ট ভোগানো হয়৷
তাদের টার্গেট ছিল দুটো৷ ডাবল এজেন্ট খতম এবং জেরিনকে টেনে আনা৷ নিনা নিকি সহ যারা নিহত হয়েছে তারা সবাই ই ডাবল এজেন্ট ছিল৷ থেরাগ নিজেকে আলতাফ মনে করছে৷ তাকে কিছু ইনপুট দেওয়া হয়েছে৷ সেই ইনপুট অনুযায়ি থেরাগ নিজেকে আলতাফ মনে করে হত্যাকান্ড গুলো ঘটিয়ে মনে করেছে জেরিন এসব দেখে তাকে আইডেন্টিফাই করার জন্য আসবে৷ এবং তাই ই হয়েছিল৷
হোলগার একটা গূরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিল এখানে৷
সিজোফ্রেনিয়ার অনেক রোগীকে ট্রিটমেন্টে কিছু ফলস এলিমেন্ট ব্যবহার করা হয়৷ যেমন একটা ঘটনা বলি৷ এলেক্ম (ছদ্মনাম কেননা এলেক্সের ঘটনাটা সত্যি) একটা ছেলে সব সময় মনে করতো তাকে কেউ কিংবা কোন কিছু সবসময় আক্রমণ করতে আসছে, ছাদ ভেঙে পড়ছে ইত্যাদি৷ তাকে তার বাবা এসাইলেমে রেখে যান৷ মাঝে মাঝে উইকএন্ডে তিনি তার ছেলেকে বাড়ীতে নিয়ে আসতেন বা ঘুরতে নিয়ে যেতেন৷ তখন তাদের সাথে একটা মেয়ে থাকত৷ যে নিজেকে এলেক্মের লাভার হিসেবে কাজ করতো৷ এলেক্স ভাবত এ তার প্রেমিকা এবং মেয়েটা যতক্ষণ থাকত এলেক্স একেবারে সুবোধ বালকের মতো আচরণ করতো৷
তো, থেরাগের ক্ষেত্রে হোলগা এই ভূমিকাই পালন করতো৷ টার্গেট ফিক্সড করে দিত৷ স্টিমূলেশান দিত৷
অথচ সে নিজেই যে থেরাগের শিকার হবে ভাবতে পারেনি৷ আমার ধারণা মিস জেরিনের কীডনেপ হবার ব্যাপারে যে হোলগা জড়িত সেটা কোনভাবে বুঝে ফেলে৷
জেরিন যে হোটেলে পরে উঠেছিলেন সেখানে একটা প্যাকেট পার্সেল হয়ে আসে৷ থেরাগই সম্ভবত সেটা পাঠিয়েছিল৷ সেটি পাওয়ায় আমরা একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পেরেছি৷
এই হল ঘটনা৷ এবার জেরিন বলল৷ তারপর আরও যোগ করলো অনেক কিছুরই ব্যাখ্যা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়৷ আসলেই না৷
ক্যাম্পবেল তখন ডাক দিল সবাই কে৷ জেরিন শিবলিকে ইশারা করল৷ শিবলি সবাইকে নিয়ে ক্যাম্পবেল এর কাছে গেল তাকে সাহায্য করতে৷ শুধু স্যাম আর জেরিন একা রইল তখন৷
জেরিন স্যাম কে বলল মিঃ স্যাম আপনাকে একান্তে কিছু কথা বলা দরকার৷
স্যাম বলল বলুন ম্যাম৷
জেরিন পকেট থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে দিল৷ বলল এখানে লন্ডন সিন্ডিকেটের কিছু তথ্যপ্রমাণ আছে৷ এরা অনেকেই এখন হোমরাচোমরা মানুষ৷ অনেকের নামই নেই৷ ওরা নতুন যুক্ত হয়েছে৷ পুরো সিন্ডিকেট কে কিছু করতে পারবেন না হয় তো৷ তবে মাথা গুলা ছেঁটে দিতে পারবেন৷
যদি কাজ হয় ভাল৷ যদি কাজ না হয় তাহলে বুঝবো আপনি গাদ্দারি করেছেন৷ আর যদি তা বুঝতে পারি আমি আবার ফিরবো!
স্যাম হেসে বলল অলরেডি কাজ শুরু হয়ে গেছে৷
জেরিন বলল আপনাকে একটা ধাঁধা দিয়েছিলাম From 92 peers SM সলভ করতে পেরেছেন?
স্যাম মাথা নাড়ল৷
কি? জেরিন প্রশ্ন করল
স্যাম বলল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরানব্বুই জন হেরিডিটারি পিয়ার্স থাকেন৷ এস এম এমন কারও ঘনিষ্ট আত্মিয়৷ এই এস এম যথেষ্ট ক্ষমতাবান একজন ব্যক্তি৷ যার অতীত অস্পষ্ট!
জেরিন বলল পেন ড্রাইভে এই এস এম এর নাম আছে মিঃ স্যাম৷
স্যাম মৃদু হেসে বলল কোন একদিন সকালে তিনি কোন একটা দুর্ঘটনায় পড়বেন মিস জেরিন৷ লিস্টে থাকা সবাই ই এমন ভাবে… স্যাম কথাটা আর শেষ করল না৷
জেরিন বলল আর একটা প্রশ্ন ছিল মিঃ স্যাম৷
বলুন ম্যাম!
উইলিয়াম কি শেষ পর্যন্ত জানত হোলগাই তার মেয়ে আর থেরাগের হাতে….
না ম্যাম৷ বোধ হয় জানত না!
হিউ’র ডাকে স্যাম হিউ’র দিকে এগিয়ে গেল৷
জেরিন লাঠিতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো৷ সামনের ডান দিকে একটু এগুলো দারুণ পাহাড় আর জঙ্গলের ভিউ ধরা পড়ে৷
ডালপালা ঘাসপাতা নাড়িয়ে একঝলক ঠান্ডা বাতাস জেরিন কে স্পর্শ করলো৷
যে আলতাফ কে ধরতে সে এতদূর এল সেই আলতাফই অধরা থেকে গেল৷ চোখ বন্ধ করে জেরিন বলল আলতাফ তুমি কোথায়?
শিবলি জেরিন কে ডাকছে৷ পেছন ফিরে রওয়ানা হলো জেরিন৷
হঠাৎ পেছনে বাতাস আর পাতা শব্দ তুলল সরসর করে৷ চমকে পেছনে ফিরে তাকালো সে৷ তার মনে হলো ফিসফিসিয়ে কে যেন নাম ধরে ডাকছে তাকে, দীর্ঘশ্বাসের মতোন
জে……….রি………ন………
-পলাশ পুরকায়স্থ