অনেকক্ষণ আগেই সূর্য ডুবে গিয়েছে। শান্ত নীল সন্ধ্যা নেমেছে। আকাশটা মেঘে ভরে আছে। মেঘ জমেছে হাসানের মনেও। শিকাগো ডাউনটাউনের সারি সারি অট্টালিকা পেছনে ফেলে লেক মিশিগানের তীর ঘেঁষে লেক শোর ড্রাইভ দিয়ে এগিয়ে চলেছে হাসানের বিএমডব্লিউ। কিছুক্ষণ আগে সে অপলাকে নামিয়ে দিয়ে এসেছে শিকাগো রিভার সংলগ্ন ডাউনটাউনে অবস্থিত বিখ্যাত হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে। বিদায় নেবার সময়ও হাসান ভাবতে পারছিল না—অপলা আবার এভাবে দূরে চলে যাবে। কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে নিতেই হয় মাঝে মাঝে সে যত কঠিণ আর নির্মম হোক না কেন। হাসান একবার বলেছিল অপলাকে কনফারেন্স শেষ করে আর কয়েকটা দিন থেকে যেতে। কিন্তু অপলা কোনো উত্তর দেয়নি চুপ করে থেকেছে। মৌনতা সব সময় সম্মতির লক্ষণ নয়। মৌনতা কখনো কখনো অপরাগতারও লক্ষন। হাসান বুঝে গেল অপলার নীরবতার অর্থ। তাই ব্যর্থ মনোরথ হয়েই ফিরে যাচ্ছে সে ভগ্ন হৃদয়ে।
বাসায় ফিরে হাসান দেখল রুবেল দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে হাসান কিছু বলল না। রুবেল এগিয়ে এসে গাড়িতে উঁকি দিল। দেখল, অপলা নেই। সে মাথা ঝাঁকিয়ে জানতে চাইল, ‘ভাবী কই?’ হাসান বোকার মতো তাকিয়ে রইল রুবেলের দিকে। সে কোনো উত্তর দিল না। রুবেল বলল, ‘ওই মিয়া, ভাবীরে কই রাইখা আসলেন?’ ‘ডাউনটাউন—হায়াত রিজেন্সীতে।’ থমথমে গলায় বলল হাসান। ‘ঐখানে কি?’ ‘ওর কনভেনশন আছে কাল-পরশু দুইদিন।’ ‘তাইলে আপনি ফিরে আসলেন ক্যান—তার সাথে থাকতেন? আরে ফাইভ স্টার হোটেলে থাইকা রোমাঞ্চ করার চান্সটা মিস করলেন মিয়া। ধুর, আপনারে দিয়া কোনো কাম হইব না।’ হাসানের হঠাৎ মনে হলো, তাই তো, রুবেল তো ঠিকই বলেছে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবল, অপলাকে বললে সে কি রাজী হতো? হাসান বলল, ‘আরে না। তাই হয় নাকি। ওর হয়তো অফিস কলিগদের সাথে মিটিং থাকতে পারে। তাছাড়া এসব কনভেনশনে গ্রুপ ডিনার থাকে—আমি থাকলে শুধু ঝামেলাই হতো।’ ‘আচ্ছা বাদ দেন। জিনিসটা কাজে লাগাইছিলেন?’ ‘কোন জিনিসটা—কিসের কথা বলছো?’ ভ্রূ কুঁচকে হাসান জানতে চাইল। ‘আরে কালকে আপনেরে দিয়ে গেলাম না—প্যাকেট? দুই একটা কাজে লাগাইছেন?’ রুবেল অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে হাসছে। হাসান কী বলবে ভেবে পেল না। অন্য কোনো সময় হলে রুবেলের উপর বিরক্ত হতো সে। কিন্তু কিছু বলল না। হাসানের কথা বলার মুড নেই—আবার রুবেলকে চলে যেতেও বলছে না। ‘হাসান ভাই, ঐ কনভেনশন না কনফারেন্স—ঐটা শেষ হইলে ভাবীর জন্যে একটা বারবিকিউ পার্টি দিতে হবে বুচ্ছেন। যুথিরেও আসতে বলব। ভাবীর সাথে পরিচয়টা হইল—তখন তার কথা বলার একটা সঙ্গী হবে। ঠিক আছে না?’ ‘কিন্তু অপলা তো আসছে না। কনফারেন্স শেষ করেই ফিরে যাবে।’ ‘মানে? বুঝলাম না,ফিরে যাবে মানে?’ রুবেল এমন ভাবে তাকাল হাসানের দিকে যেন হাসান হিব্রু কিংবা অন্য কোনো দূর্বোধ্য ভাষায় কথা বলছে। সে মাথা চুলকে কিছু একটা বলতে যাবে আর ঠিক তখনই যুথির ফোন এলো। রুবেল ফোন ধরে বিরক্ত কণ্ঠে বলল, ‘যুথি, তোমারে একটু পরে কল দিতেছি। একটা ঝামেলার মধ্যে আছি।’ ‘তুমি এখন কোথায়?’ ফোনের ভেতরে দিয়ে যুথির কণ্ঠ শোনা গেল। ‘কোথায় আবার হাসান ভাইর এখানে। তোমাকে না বললাম একটা ঝামেলা মধ্যে আছি।’ ‘কিসের ঝামেলা?’ ‘আছে, তুমি বুঝবা না। আর সব কথা তোমার শুনতে হবে?’ ‘হ্যাঁ হবে।’ ‘আমি এখন রাখি পরে কথা হবে।’ ‘এই তুমি ফোন রাখবা না। তুমি এক্ষুণি আসো তোমার সাথে আমার কথা আছে।’ রুবেল ফোন চাপা দিয়ে তাকাল হাসানের দিকে। হাসান তাকে ইশারায় চলে যেতে বলল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সে বলল, ‘ঠিক আছে, আসতেছি বেশিক্ষণ কিন্তু থাকতে পারব না।’
রুবেল চলে যেতেই হাসান ঘরে ঢুকে বসে রইল চুপচাপ। ক্ষণে ক্ষণেই অপলার কথা মনে হচ্ছে তার। দীর্ঘ সময় পার করে হাসান প্রস্তুতি নিল এক দীর্ঘ রাতের প্রতীক্ষায়। মাঝে মাঝে কোনো কোনো রাত খুব দীর্ঘ মনে হয়। আজ এমনই একটা রাত এবং সে জানে আজ রাতটি তার অস্থিরতায় কাটবে। এতদিন পর অপলা ফিরে এসেছিল, এসে আবার চলেও গেল। দুটো দিন বেশ কেটেছে তার আর অপলার সান্নিধ্যে। রাতে ঘুমানোর আগে অপলা ফোন করল হাসানকে। হাসানের ক্ষীণ আশা ছিল, অপলা হয়ত একবারের জন্যে হলেও তাকে ফোন করবে। ফোনটা তাই বিছানায় নিয়েই সে ঘুমাতে গেল। অপলার ফোন পেয়ে হাসান উঠে বসল। হাসানের সঙ্গে সময়টা তার ভাল কেটেছে এবং হাসান তাকে সময় দিয়েছে এজন্য সে কৃতজ্ঞ। শুধু এটুকু বলার জন্যেই অপলার ফোন করা। খুব সকালে কনফারেন্সের রেজিস্ট্রেশন আর ব্রেকফাস্ট মিটিং তাই বেশি কথা বলার সুযোগও হলো না অপলার। সে গুড নাইট বলে ফোন কেটে দিল।স্বাভাবিক ভাবেই রাতে ভাল ঘুম হলো না হাসানের। এবং কয়েকবার ঘুম ভেঙেও গেল। অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে শেষ রাতের দিকে সে গভীর ঘুমে ঢলে পড়ল।
খুব সকালে হাসানের ঘুম ভেঙ্গে গেল আচমকা। অনেকক্ষণ থেকেই তার ফোন বেজে চলেছে। সে ফোনটা নিয়ে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে অপলা বলল, ‘কতক্ষণ থেকে ডোর বেল বাজাচ্ছি—নক করছি, দরজাটা খোলো।’ ‘মানে কি?’ হাসান বলল অবাক হয়ে। ‘মানে হচ্ছে আমি তোমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি দরজাটা খোলো। খুলেই দেখো।’ ‘কী? এক মিনিট, আমি আসছি।’ হাসান দ্রুত সিঁড়ি বেঁয়ে নেমে দরজা খুলতেই তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এটা যে স্বপ্ন ছিল সেটা বুঝতে কিছু সময় লাগল হাসানের। সে সাইড টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে অন্ধকারের মধ্যে তাকিয়ে রইল শূণ্যে।
অনেকক্ষণ ধরে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ করছে কেউ। এক রাতেই হাসানের হেলুসিনেশনের মতো কিছু হয়ে গেল। কোথাও কোনো শব্দ হলেই তার মনে হচেছ এই বুঝি অপলা ফিরে এসেছে। ক্লিয়ার সাইন অফ অডিটরি হেলুসিনেশন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সকাল আটটাও বাজেনি। কাল রাত থেকেই মনটা ভীষণ বিক্ষিপ্ত ছিল হাসানের। স্বপ্নের কথা ভেবেও খানিকটা মন খারাপের মতো হলো। রাতে একেবারেই ঘুম হয়নি তাই এখন এতো সকালে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় মেজাজ খারাপ হলো খুব। তার ধারণা এটা রুবেলের কাজ। সাত সকালে এসে হাজির হয়েছে। এই ছেলেটাকে নিয়ে আর পারা যাচ্ছে না। এত বিরক্ত করতে পারে। এর আক্কেল জ্ঞান যে আর কবে হবে কে জানে। এবার ডোর বেলের আওয়াজ শোনা গেল। কে আসল এই ভাবতে ভাবতে হাসান নেমে এলো ওপর থেকে। আচ্ছা, সত্যি সত্যি অপলা এলো নাকি? হতেও তো পারে। কে জানে সে হয়ত মাইন্ড চেঞ্জ করেছে—বলা তো যায় না। মানুষের মন বলে কথা। নাহ, তাই বা কী করে হবে—এতক্ষণে ওর কনফারেন্স শুরু হয়ে যাবার কথা। এটা রুবেল না হয়েই যায় না। আজকে এই ছেলের খবর আছে। সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে সে। দিস নিড টু বি স্টপড!অত্যন্ত বিরক্ত চেহারা নিয়ে দরজা খুলে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল হাসান। সত্যি সত্যি অপলা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। কালো ট্রাউজার, কালো ব্লেজার আর অফ হোয়াইট রঙের টপস পড়ে দাঁড়ানো মেয়েটিকে অপলার মতই লাগছে। হাসান দু’হাতে চোখ কচলে দেখল এবং নিশ্চিত হলো যখন অপলা বলল, ‘কি, সাত সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিলাম?’ হাসানের ঘোর কাটতে সময় লাগল। সে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে এখনো তাকিয়ে আছে অপলার দিকে। ‘কি ব্যপার, ভেতরে ঢুকতে দেবে নাকি দাঁড়িয়েই থাকব এখানে?’ হাসান সরে দাঁড়াতেই অপলা ভেতরে ঢুকে পড়ল। হাসান কোনো কথা না বলে অপলার লাগেজ নিয়ে পেছনে পেছনে ঢুকল। অপলা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘সেদিন যা যা বললে তা কি ঠিক?’ হাসানের মুখের হাসি বিস্তৃত হলো। সে বলল, ‘তোমার এখনও সন্দেহ আছে?’ অপলা মাথা নেড়ে জানাল, না। ‘তোমাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন, অপলা। এবার যখন পেয়েছি আর হারাতে চাইনা।’ ‘আমিও না।’ ‘তোমার কনফারেন্স?’ অপলার প্রফেশনাল আউটফিটের দিকে চোখ বুলিয়ে বলল হাসান। ‘ম্যানেজ করে এসেছি।’ ‘তোমাকে ফিরে যেতে হবে না?’ ‘না।’ সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে অপলা তার টিম ম্যানেজারকে বলেছে, কাজটা সে আর করতে চায় না। কারণটা পারসোনাল এবং ফ্যামিলি রিলেটেড তাই ডিটেইল বলা যাচ্ছে না বলে সে দুঃখিত। ম্যানেজার বলল, কনফারেন্সটা শেষ করে যাও। ও বলল, কাজটাই তো ছেড়ে দিচ্ছি। শুধু শুধু কনফারেন্সে থেকে আর কী হবে? অপলা দেরি না করে রুম চেক-আউট করে একটা ক্যাব নিয়ে চলে এসেছে হাসানের বাসায়। হাসানের অবাক দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে অপলা আবার বলল, ‘কাজটা আমি ছেড়ে দিয়েছি।’ ‘সিরিয়াসলি!’ ‘হ্যাঁ।’ ‘সো, দিস ইজ ফর রিয়েল? আই মিন উই আর ফ্যামিলি এগেইন?’ ‘কোনো সন্দেহ আছে?’ ‘এখন আর নেই।’ বলেই হাসান হাসল। তার মুখটা প্রশস্ত করে দুই ঠোঁটে লেপ্টে এক নিদারুণ ভঙ্গিমায় হাসতে থাকল সে,সম্ভবত পৃথিবীর প্রশস্ত হাসি। রাতের ডিনার শেষ করে পেছনের ছাওনির নীচে বসে আছে হাসান আর অপলা—হাতে গ্রিন টি।
আজকের সন্ধ্যা-রাতটা অন্যরকম। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর আকাশে একটি বিরল চাঁদ উকি দিয়েছে। ধীরে ধীরে রক্তিম হয়ে উঠছে। আকাশে কিছুটা কুয়াশা থাকায় সন্ধ্যার পরপরই চাঁদটি দেখা যায়নি। দুজনের কেউ কোনো কথা বলছে না শুধুই অনুভব করছে। চারিদিকে সুনসান নীরবতা। শুধু কিছু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ থেকেই হাসান উসখুস করছিল অপলাকে একটা কথা বলতে চায়। নীরবতা ভেঙ্গে সে বলল, ‘অপলা, তুমি কি জানো আমি কতটা খুশি হয়েছি।’ ‘জানি।’ একটু থেমে অপলা বলল, ‘তুমি কি জানতে আমি ফিরে আসব?’ ‘একবার মনে হয়েছিল। আবার মনে হয়েছিল নাও আসতে পারো।’ ‘তার মানে আমি ফিরে না এলেও তুমি কিছু বলতে না?’ হাসান কোনো উত্তর দিতে পারল না। ‘শোনো হাসান, নিজের অধিকারটা নিজেকেই আদায় করে নিতে হয়। মাঝে মাঝে চেয়ে নিতে হয়। তুমি কি ভেবেছ, না চাইতেই সব কিছু পেয়ে যাবে? সব কিছু কি এতো সহজ?’ হাসান চুপ করে রইল। অপলা আবার বলল, ‘তুমি আমার ফিরে আসার অপক্ষায় ছিলে কিন্তু তুমি আমাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাও নি কোনোদিন কোনো উদ্যোগও নাও নি, কেন?’ হাসান মিন মিন করে বলল, ‘তুমি যদি না আসতে চাও…’ অপলা হাসানের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল, ‘না আসতে তো চাইতেই পারি, তাই বলে তুমি বলবে না? নাকি বললে তোমার ইগো তে লাগত? নিজেকে ছোট মনে হতো?’ হাসান উত্তর দিল না। ‘কেন, তুমি জোর করতে পারতে না?’ ‘তুমি তো জানই আমি কোন কিছু নিয়ে জোর করাটা পছন্দ করিনা।’ ‘জানি। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে জোর খাটাতে হয়। নাহলে অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হতে হয় জীবনে। ভালবাসার জোর ভালবাসা দিয়ে ভালবাসা আদায় করতে হয়, এটা কি তুমি বোঝ?’ ‘বুঝি তো।’ ‘তাহলে?’ অপলার হঠাৎ মনে হলো ধ্যাত, এই মানুষটার সাথে রাগ করে লাভ নেই। আজকের এই মুহূর্তটাকে কিছুতেই নষ্ট করা যাবে না। সে প্রসঙ্গ বদলে বলল, ‘আচ্ছা, রুবেলের ব্যাপারটা কি বলতো? ও আসলেই তোমাকে খুব পছন্দ করে তাই না?’ ‘কেন রুবেল কি করেছে আবার?’ ‘কি আর করবে? তুমি যা পারো নি সেটা সে করেছে।’ ‘মানে কি?’ অপলা কিছু বলল না। তার ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। হাসান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে দেখে সে বলল, ‘রুবেল আর যুথি কাল রাতে হোটেলে গিয়েছিল—আমার সঙ্গে দেখা করতে।’ ‘কি?’ ‘ঠিকই শুনেছ।’ ‘কিন্তু কেন?’ ‘তোমার হয়ে ওকালতি করতে। আমার বিরহে তুমি পাগল হয়ে আছো সেটা বলতে। আমার ফোন পেয়ে তুমি কেমন অস্থির হয়েছিলে সেটা জানাতে।’ ‘তাই বুঝি?’ হাসান লজ্জা পেয়ে হাসল। সে অবাক হয়ে ভাবছে। রুবেলের প্রতি ভেতরে ভেতরে কৃতজ্ঞ বোধ করল। রুবেল যা করেছে তা ছিল তার ভাবনার বাইরে। অপলা আর কিছু বলল না। মিটি মিটি হাসল শুধু। এমন সময় অপলার ফোন এলো। ওরিগন থেকে তার বান্ধবী শিল্পীর ফোন। কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিতেই হাসান জানতে চাইল, ‘কার ফোন ছিল?’ ‘শিল্পীর। আমি এখন ফিরে যাচ্ছি না শুনে রাইসা অনেক কান্না কাটি করছে।’ একটু চুপ থেকে অপলা বলল, ‘মেয়েটা আমাকে ভীষণ মিস করবে।’ হাসান বলল, ‘তুমি রাইসাকে মিস করবে না?’ ‘অবশ্যই করব বাট আই হ্যাভ এ বেটার আইডিয়া।’ ‘রিয়েলি? হোয়াট’স দ্যাট?’ ‘হাউ’বাউট উই হ্যাভ আওয়ার অউন রাইসা? তুমি আমাকে আমার নিজের একটি রাইসা এনে দিতে পারো না?’ ‘কেনো পারব না?’ ‘তাহলে আর দেরী কেন?’ অপলার ঠোটে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি খেলা করল। হাসান হাত বাড়িয়ে দিল অপলা ধরল সে হাত। তাঁরা দুজন দুজনের কোমর জড়িয়ে ধরে ঢুকে পড়ল ঘরের ভেতর। একটি রৌদ্রকরোজ্জ্বল শুভ্র সকাল আর রূপালী দুপুর পেরিয়ে হাতছানি দিচ্ছে এক কুয়াশাচ্ছন্ন মায়াবী রাত আজকের পুরো সময়টা কেবলই ভালবাসার ক্ষণ। আজকের রাতটা হবে অন্যরকম। আজকের রাত শুধুই ভালবাসার রাত ভালবাসাবাসির রাত। হাসান আর অপলা ঘরের ভেতর ঢুকে পড়তেই যেন আকাশ ফুঁড়ে বের হয়ে এলো রুবেল। সে বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘যাক এতদিনে দুইজনের অপেক্ষার পালা শেষ হইছে। আলহামদুলিল্লাহ্! এবার ডাইরেক্ট একশন!’ বলেই সে নিশ্চিন্ত মনে তার ভক্সওয়াগন স্টার্ট দিয়ে ভটভট করে চলে গেল হাসানের বাসার পেছনের গলির ভেতর থেকে। রুবেল গাড়িতে উঠেই উচ্চ কণ্ঠে গেয়ে উঠল, ‘আজ পাশা খেলব রে শ্যাম… ও শ্যামরে তোমার সনে… একেলা পাইয়াছি রে শ্যাম…’ কিছুক্ষণের মধ্যেই রুবেলের গাড়ি হাসানদের আবাসিক এলাকা ছেড়ে হারিয়ে গেল হাইওয়েতে।
(সমাপ্ত)
ফরহাদ হোসেন
লেখক-নির্মাতা
ডালাস,টেক্সাস