-এই দেশ স্বাধীন না হলে আমাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো তা একটু ভেবে দেখেছেন আপনারা ! মন্ত্রী মহোদয়ের কথা শুনে মিটিংরুমে হঠাৎ যেন নিরবতার শিরশির হাওয়া বয়ে গেল। কথাটায় সায় দিলেও কোনরকম শব্দ করার সাহস পেল না কেউ। সবাই শুধু পাশের জনের সাথে শেয়ার করলো- স্যার ঠিকই বলেছেন, স্যার ঠিকই বলেছেন।
শুনুন। দেশটা স্বাধীন হওয়ায় আমি মন্ত্রীত্ব পেয়েছি। আপনারা অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন চেয়ার পেয়েছেন। এবার মনোযোগ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করুন। দেখবেন আরো পাবেন। আরো বেশি পাবেন। যা আপনারা কল্পনাও করেননি।
জ্বী স্যার, জ্বী স্যার।
দেশটা যদি স্বাধীন না হতো তাহলে কি হতো বলুন তো? কি, উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না আপনারা ?
সোজা কথা। একদম সোজা কথা। আপনারা কেউই এই চেয়ারের মালিক হতে পারতেন না। আমি- আপনি, আমরা সবাই হতাম অফিসের পিয়ন। কেউ ঝাড়ুদার, কেউ দারোয়ান, কেউবা সর্বোচ্চ ড্রাইভার।
ঠিক স্যার, ঠিক স্যার। সমস্বরে বলে উঠলো সবাই।
মিটিং রুমের বাইরে দরজার পাশে একটা কাঠের টুলে বসে আছে অফিসের দারোয়ান নেছার মিয়া। দরজার ফাঁকফোকর দিয়ে মন্ত্রীমহোদয়ের কথাবার্তা তার কানে ভেসে আসছে।
এইমুহূর্তে তার বাবার কথা মনে পড়ছে খুব। দেশ স্বাধীন হওয়ার ঠিক পরপর তার বাবা তাকে এই কাঠের টুলে বসিয়ে বলেছিলেন- বাপ, যতদিন বাইচ্ছা থাকস এই টুলের কোনো অমর্যাদা করিস না। ঠিক মতন দায়িত্ব পালন করিসরে বাপ।
মায়ের মতো একটা দেশ পেয়েছে ঠিকই কিন্তু উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই টুলে বসে কী জানি ভাবতে থাকে নেছার মিয়া। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে-পরে তার বাপ-পুতের চাকরীর মধ্যে একটা ফারাক খোঁজার চেষ্টা করে সে। অনেক ভেবে চিন্তে সে বিড়বিড় করে বলে-
নাহ ! কোনো ফারাক নেই ! টুলের রং পরিবর্তন হওয়া ছাড়া চুল পরিমানও ফারাক নেই।
-পার্থ তালুকদার