প্রতিটি দুপুর যখন বিকেলের দিকে হাঁটতে শুরু করতো, সবার ভাতঘুমের অগোচরে আমি পেয়ারা গাছের উঁচু ডালে কিংবা কামিনী তলায় আপন মনে ঘুরে বেড়াতাম। একদিন জানালার ফাঁক গলে অরু আপা তার আয়তনেত্র দুটি নাচিয়ে বলল অন্তু একটু এদিকে আয় তো। অরু আপা আমাদের প্রতিবেশী। স্কুলের গণ্ডি এখনো পার হননি। তবে দেখে মনে হয় কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। আমি জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়ালাম। বললেন আয় ভেতরে আয়। কাজ আছে।
আমি ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকলে অরু আপা আমার ভয়টাকে আরো বাড়িয়ে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন। বললেন তোর চোখের পাওয়ার কেমন রে? আমি চশমার পাওয়ারের কথা শুনেছি কিন্তু চোখের পাওয়ার এই প্রথম শুনলাম। বললাম আপা চোখের পাওয়ার কি?
বললেন ঠিকঠাক দেখতে পাস তো?
আমি বললাম স্কুলে বোর্ডের সব লেখাই তো দেখি। বইয়ের লেখাও দেখি। কোনোদিন সমস্যা হয়নি।
সুঁইয়ে সূতা লাগাতে পারিস?
পারি মানে। আম্মাকে কত হেল্প করি!
আচ্ছা গুড। এই নে সুঁই আর সূতা। এটা লাগিয়ে দে।
ততক্ষণে আমার ভয় কেটে গেছে। আমি অনায়েসে সুঁইয়ে সূতা লাগিয়ে দিলাম।
অরু আপা এবার বললেন এই হুকটা আমার কামিজে লাগিয়ে সেলাই করে দে।
আমার বুঝতে একটু সময় লাগলো। ততক্ষণে আপা তার ফর্সা উন্মুক্ত পিঠ দিয়ে আমার দিকে পেছন ফিরে বসেছেন।
আমার হাত কাঁপছে। বললাম আপা আমি তো এই কাজ কখনো করিনি। তোমার পিঠে সুঁই লেগে যেতে পারে।
লাগলে লাগুক। তুই সেলাই কর।
এভাবে প্রায় প্রতিটি দুপুর অরু আপার সান্নিধ্যে আজ লুডু খেলা, কাল মালা গাঁথা, পরশু মিলাও ট্রাম্প খেলায় বেশ গুটি গুটি পায়ে চলতে লাগলো। আমার কৈশোরের পুরো অসহায়ত্ব জুড়ে বসল অরু আপা। আমার মনে ভালোলাগারা ঝড় হয়ে বলতে লাগলো ভালোবাসি ভালোবাসি। অরু আপা ভালোবাসি।
একদিন মেঘেরা খুব ঘন হয়ে অঝোর ধারায় ঝরতে লাগলে অরু আপা বললেন আয় আজ একটা মজার খেলা খেলি। তোর হাত পরিষ্কার আছে তো?
আমি বললাম হ্যাঁ আছে তো।
এই নে বলে আমার হাতে একটি বডি লোশন ধরিয়ে দিলেন।
একটানে সে তার কামিজ খুলে সামনের দিকটা আড়াল করে বললেন এটা ভালো করে আমার পিঠে লাগা।
আমি বাধ্য ছেলের মতো কাঁপাকাঁপা হাতে অরু আপার পিঠের লাল তিল কালো তিল গুনতে লাগলাম।
দিন দিন আমার কিশোর মনে এক অজানা ক্ষুধা অপরিণতভাবে জাগতে লাগলো। শরীরেও। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম অরু আপাকে বিয়ে করবো। দিনমান ভাবনাগুলো স্বপ্নে এসেও ধরা দিতে লাগলো। দেখলাম আমার আর অরু আপার বিয়ে হয়েছে। একটা ছেলে হয়েছে। কিন্তু কি অদ্ভুত ছেলেটাও আমার বয়সী। ক্লাস থ্রিতে পড়ে।
আজ আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। আয়নায় আজ নিজেকে একটু ভালো করে দেখে নিলাম। একটু বড় বড়ই মনে হচ্ছে। চোখে একটু সুরমা মাখলাম। অরু আপা জরুরী তলব পাঠিয়েছে। আজই কথাটা বলতে হবে।
ঘরে ঢুকতেই অরু আপা একটি চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বললেন এটা এক্ষণি শাহেদ ভাইকে দিয়ে আয়। জরুরী।
আমার ভীরু অবুঝ মন অনেক কিছু বুঝে নিল। আমি চিরকুট নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কাঠের পুলের উপর গিয়ে দাঁড়ালাম। অরু আপার সকল কাজ করে দিলেও এই কাজটি যে আমি করছি না সেটা আমি নিশ্চিত। কিন্তু গলার কাছটায় কী যেন জমে আছে। কী সেটা, কান্না!
-জামান একুশে