বাড়ীটার সামনে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইল রাজিব। পুরোনো আমলের দোতালা বনেদি বাড়ী। চারদিকে নিচু প্রাচীর একটু বেশিই যেন খোলামেলা। তবে পুরো বাড়ী জুড়ে প্রচুর গাছপালা, দিনের বেলায়ও ছায়াময় করে রাখে। আর এখনতো বাজে রাত আটটা। যথেষ্ট আলো আধারের খেলা চারদিকে। একতলার সিঁড়ির দুটো ধাপ ওঠার পরই বিশাল বারান্দা। বারান্দায় কোনো রেলিং নেই। বড় বড় টব সারিবদ্ধ করে রাখা। উপরের সিলিং থেকেও প্রচুর টব ঝোলানো। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় বাড়ীতে এতো জায়গা, গাছপালা থাকা সত্ত্বেও এতোগুলো টবে গাছ লাগাবার মানে কি? যাদের বাসায় জায়গা নেই তারাই টবে গাছ লাগায়।
বারান্দায় পা রাখতে না রাখতেই দু জন লোক বেরিয়ে এলো ঘরের ভেতর থেকে। বললো,
স্যার শাওয়ার নিচ্ছেন আপনারা ভেতরে এসে বসুন। গ্রামের লোকের মুখে শাওয়ার শব্দটি শুনে কানে বাজলো রাজিবের।
চলুন ভেতরে বসা যাক, বললো মারুফ।
নাহ, বারান্দায়ই বসি, ভালো লাগছে। এমন পরিবেশতো সচরাচর পাওয়া যায় না।
ঠিক আছে আপনাদের জন্য দুটো চেয়ার এনে দিচ্ছি। বললো দুজন লোকের একজন।
মারুফ নিজ থেকেই বললো, চেয়ারম্যান সাহেব খুব সৌখিন মানুষ, গাছপালার খুব শখ উনার, দেখেছেন পুরো বাড়ী ভরে ফেলেছেন গাছপালা দিয়ে। একটা ময়না পাখিও পোষেন, বারান্দার ওপাশে আছে, চলুন দেখাই।
বারান্দাটা বেশ বড়। এক পাশ থেকে অন্যপাশ তেমন একটা চোখে পড়ছে না। আধো আলো আধো অন্ধকারে। দুজনে হেঁটে পাখির খাঁচাটির পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই কে যেনো বলে উঠলো, কুটুম্ব এসেছে, বসতে দাও।
চমকে উঠলো রাজিব। মারুফ জোরে শব্দ করে হেসে উঠলো।
কি স্যার, চমকে গেলেন তো। আপনাকে চমকে দেয়ার জন্য আগে বলিনি। এই ময়না পাখিটি কথা বলতে পারে।
ময়নাটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রাজিব। পাখিটাকে তার কেনো জানি সত্যিকার পাখি মনে হচ্ছে না। আলো আধারে যতটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে পাখিটা কেমন যেনো স্থীর হয়ে আছে। যেদিকে তাকাচ্ছে সেদিকেই তাকিয়ে আছে। তারা সরে আসতেই অন্য একধরনের বিচিত্র শব্দ করা শুরু করলো ময়ানাটি। ধুপ ধুপ, মাটি কাটার শব্দ, শুনলে মনে হয় অনেক দূর থেকে আসছে।
শুনছেন স্যার ময়না শব্দ করছে। আরেকবার এসেছি সেবার শুনি কোদাল দিয়ে মাটি কোপানোর শব্দ করছে। মাঝে গাড়ির শব্দও করে।
তাদের কথার মাঝখানেই চেয়ারম্যান সাহেব এসে উপস্হিত হলেন।
হাসিমুখে হাত বাড়িয়ে হেন্ডশেক করলেন।
বললেন, দেখুন তো কি কান্ড, গেস্ট এসে বসে আছেন আর হোস্ট এর দেখা নেই। চলুন ভেতরে গিয়ে বসা যাক।
তিন জনই ভেতরে বসার ঘরে প্রবেশ করলেন। বসার ঘরটি বেশ বড় এবং চমৎকার ভাবে সাজানো। দু পাশে দুই সেট সোফা রাখা। একপাশে কাঠের অন্যপাশে বেতের। টেবিল ল্যাম্পের আলোয় এক মায়াময় পরিবেশ।
এছাড়াও বেতের দুটো মোড়া রাখা আছে এক কোনায়। মাছের বেশ বড় একটি একুরিয়াম রাখা। মাছগুলো মনের আনন্দে ছুটোছুটি করছে। এই রুমের দেয়ালে একটি বাঘের চামড়া ও একটি হরিনের চামড়া ঝোলানো। রাজিবকে ওগুলোর তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখে হাসলেন চেয়ারম্যান সাহেব, বললেন ভয় নেই এগুলো আমি শিকার করিনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি খুব ভীতু মানুষ, পশুপাখি শিকার আমার ধাতে নেই, এগুলো আসল না নকল। সিনথেটিক। দেশের বাইরে থেকে আনা।
এর মধ্যেই কাজের লোক দুজন আঙ্গুরের শরবত ও সাথে পনিরের সমুচা নিয়ে এলো। ছোট একটা বাটিতে সস।
আঙ্গুরের শরবত টা মুখে দিতেই একটা রিফ্রেসিং ভাব চলে এলো শরীরে।
এটাতে আঙ্গুরের সাথে পুদিনা দেয়া। লোকটার টেস্ট আছে বলতে হবে।
রাজিব যে চেয়ারটাতে বসেছে তার পাশেই ছোট্ট টি টেবিল এর উপর টেবিল ল্যাম্প ও একটি ক্যাকটাসের টব রাখা। রাজিব গ্লাস টাতে ছোট আরেকটা চুমুক দিল। সবার অগোচরে বাকী শরবতটুকু টবের গাছে ঢেলে দিল।
রাজিব নিজে থেকেই বললো, আপনাদের বাড়ীটা খুব সুন্দর। অনেক গাছপালা।
পুরনো ও আধুনিকতার সমন্বয়টা খুব ভালো লাগছে।
জ্বী, বাড়ীটা আমার দাদার তৈরী, বাবা কিছুটা সংস্কার করিয়েছিলেন আর আমি এবার এসে অনেকটা করিয়েছি।
হুম ফ্লোরটা নতুন করিয়েছেন, বললো রাজিব।
জ্বী, নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ভাবলাম থাকবোই যখন, তখন একটু ভালোভাবেই থাকি।
চলুন আমাদের পারিবারিক সংগ্রহশালাটা আপনাকে দেখিয়ে আনি। আশা করি ভালো লাগবে।
রুমটায় ঢুকে সত্যি চমকে গেলো রাজিব।
চলবে…….
-জাহেদা মিমি