নুরার দিন কাটে ভয়াবহ রকমের মানসিক যন্ত্রণায়। সারাদিন টো টো করে ঘুরতে থাকে এ বাড়ি থেকে সে বাড়িতে। তার বাড়ির কোন খবর নেই। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ি থেকে বের হয়। বদুকে ডেকে নিয়ে বাজারে যায়। দুজনে নাস্তা শেষ করে বের হয় সমাজের অকল্যাণে। তাদের কল্যাণ হলে সমাজের অকল্যাণ অনিবার্য।
নুরার এমন অনিয়ন্ত্রিত সময়ে লাগাম টেনে এনে দেয় বদু। প্রখর রোঁদে বদুকে সাথে নিয়ে দিশেহারার মতো হাটছে সে। থমকে দাড়ায় বদু।
– ভাই, ঢাকার সাব আমনের তে কোন জমি কিনতে চাইছে?
– ——– মারানির পোলা, (এমন আরো কিছু জঘণ্য গালি বের হয়ে আসে নুরার মুখ দিয়ে) তুই আমার কাডা ঘায়ে নুনের ছিডা দিতে চাস?
– না ভাই, এড্ডা কতা মুনো পড়ল।
– কি কতা? খুইল্লা ক খানকির পোলা।
– আমনেগো জমিনগুলোর সব কাগজ আছে আমনের কাছে?
বদুর কথা নুরার মাথায় ঢুকে না। রাগ যায় বেড়ে। তেড়ে মারতে আসে নুরা। বদু বলে,
– আগে আমার কতাডা হোনেন।
– ক, কি কবি।
– লন, আমরা নায়েব অফিস যাই।
– নায়েব অফিস গেলে কি অইব?
– কিছু পাইতে পারেন। আমনেগো বাড়ির জমিন ডাহার সাব কিনত চাইব কেন? এট্টু চিন্তা করেন।
– এহন মনে হয় একখান ভালা কতা কইছস। ল, যাই।
– খাড়ান, আগে আমনের বাড়ির কাগজগুলা নিয়া নেন।
– ল, বাইত যাই।
– আম্নে বাইততে আইয়েন, আমার এট্টু পেডে কামড় মারছে।
– আইচ্ছা তুই রেডি হ।
নুরা হনহন করে বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়। বদু আস্তে আস্তে পিছোতে থাকে। রাস্তার বাঁকে আড়াল হতে সে পেছন দিকে হাটা শুরু করে। কিছুদূর আসতেই একটি লোক তার পথরোধ করে দাড়ায়। বদু বিস্ময়ে হতবাক। তার গ্রামে তার সামনে দাড়ানোর মতো লোক খুব একটা নেই।
– কে আম্নে? কি চান?
লোকটি তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে,
– তোমার নাম কি?
– আমার নাম দিয়া আম্নের কি কাম?
– চুপ, নাম বল।
বদু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে লোকটির দিকে। লোকটিকে কখনো দেখেনি সে। ধুরন্ধর লোক বদু। ধমক খেয়ে চুপসে যায় সে। তার মনে ঢুকে ভয়। ভীতস্বরে উত্তর দেয়,
– আমার নাম বদু।
– আমার সাথে চল।
– কোথায়?
– কোন কথা বলবে না।
লোকটি তাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সাথে নিয়ে চলে।
বাজারের পাশেই একটি সিএনজি দাঁড় করানো ছিল অনেকক্ষণ থেকে। বদুকে নিয়ে লোকটি সিএনজিতে উঠে বসার সাথে সাথে গাড়ি ছুটে চলে ঢাকার দিকে। একটানা ছুটে সিএনজি পৌঁছে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে বদু হতভম্ব। পুলিশ হেড কোয়ার্টারে বদু কখনো আসে নি। এসপি অফিসের নাম শুনলেই বদুর কাপড় নষ্ট হবার অবস্থা হয়। সেখানে হেড কোয়ার্টার। চারদিকে পুলিশ আর পুলিশ দেখে বদুর চক্ষু চড়কগাছ। হঠাৎ করে সে লোকটির পা জড়িয়ে ধরে। হাউমাউ করে কেঁদে উঠে সে।
-স্যার, আমি কোনো খারাপ কাম করি নাই। আমারে ছাইড়া দেন।
-ওঠ, তোর কোন দোষ নাই। তোর একটু কাজ আছে। তোকে এখন ম্যাডামের কাছে নিয়ে যাব। ঠিক ঠিক সব প্রশ্নের উত্তর দিবি। উল্টাপাল্টা উত্তর দিলে বিপদে পড়বি।
– স্যার, আমি কি করছি?
– তুই কিছুই করিস নি। চল, আমার সাথে। তোর কিছুই হবে না। চোখ মুছে আমার সাথে চল।
তবু বদুর মনের ভয় কাটে না। ভয়ে ভয়ে চোখের পানি মুছে লোকটির পিছু নেয়।
এসি রুমের দরজা ঠেলে প্রবেশ করে এসআই জুবায়ের। ঢুকেই সালাম ঠোকে।
– স্যার, বদুকে নিয়ে এসেছি।
– জোবায়ের, বদুকে কিছুক্ষণ একাকী বসিয়ে রাখো।
– জ্বী স্যার।
বেরিয়ে যায় জোবায়ের। ওয়েটিং রুমে গিয়ে বদুকে এক কাপ চা দেয়ার ব্যবস্থা করে। চুপচাপ বসে থাকার কথা বলে বেরিয়ে যায় সে। প্রায় দেড় ঘন্টা পরে ফিরে আসে জোবায়ের। এসি ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে করতে এক সময় ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে বদু। জোবায়ের ডেকে তোলে বদুকে। লাফিয়ে উঠে বদু।
-স্যার, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মাফ করে দেন।
– ঠিক আছে চল। যা বলবি সাবধানে। ম্যাডামকে স্যার বলবি। ভুলেও বেয়াদবি করবি না।
চলবে——–
-বাউল সাজু