উত্তরাধিকার ( ২য় পর্ব )

নুরার মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা। শাহরিয়ার সাহেবের গাড়ি নুরাকে তার বাড়ির কাছে নামিয়ে দিয়ে যায়। তার বাড়ি ঢাকা শহরের দক্ষিণে। এখনো গ্রামের পরিবেশ রয়ে গেলেও আধুনিক শহরের অনেক সুবিধা ভোগ করা যায়। গ্যাস লাইন ব্যতীত সব রকম নাগরিক সুবিধা আছে এখানে। গাড়ি তার বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছে। কিন্তু নুরা ইচ্ছা করে তার বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে নেমে পড়ে। বাকিটা পথ সে রিক্সায় যায়। তার সাথে শাহরিয়ার সাহেবের ব্যবহার তাকে ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে।

সর্বোপরি মুখের উপর দালাল বলায় তার সম্মানে আঘাত হেনেছে। লজ্জায় অপমানে তার ছুচোলো মুখ লাল হয়ে আছে। রিক্সা থেকে নেমে হনহন করে বাড়ি এসে ঢোকে। তার বউ সকালে না বলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবার কারণ জানতে চেয়ে বেধরক পিটুনি খায়। কুকুরের মতো জিহ্বা বের করে শ্বাস নিতে থাকে সে। এতোক্ষণে তার মাথা কাজ করতে শুরু করে। ভায়োলেন্স বিহীন নুরার বুদ্ধি কূলের নাগাল পায় না। তাকে জানতে হবে কে এই শাহরিয়ার? কেন তাদের ভিটেমাটি কিনতে চায়?

নুরার সাথে কথা শেষ করে দোতলায় নিজের কক্ষে ফিরে শাহরিয়ার ওরফে রিয়াদ। তার ঘরে ওয়াল পোট্রেট করা একটি ছবি। রিমলেস চশমা চোখে বেশ অভিজাত চেহারার সৌম্য দর্শন এক বৃদ্ধের ছবি। রিয়াদ ছবির সামনে নীরবে দাড়ায় কিছুক্ষণ। স্মিত হাসি মুখে তাকিয়ে দেখছে সব কিছু ছবির ভদ্রলোক। রিয়াদের বাবার ছবি এটা। তিনি গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর হলো। তার বাবার কঠোর পরিশ্রম তাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তার বাবা শূন্য থেকে তিল তিল করে তাদের ভাইবোনকে মানুষ করেছে।

রিয়াদের একমাত্র বোন রিশা তার বড়। সে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিসিএস দিয়ে এডমিন ক্যাডারে জয়েন করেছে। রিশার বিয়ে হয়েছে তারই ক্যাডারের একজনের সাথে। রিয়াদ নিজে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করে জাপানে চলে যায় মাস্টার্স করার জন্য। মাস্টার্স শেষ করে দু/তিন বছর সেখানে ব্যবসা করে সে। বেশ অল্পবয়সে বেশ টাকা পয়সার মালিক হয়।

রিয়াদের বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে তার মতো সরকারী চাকরি করুক। কিন্তু রিয়াদ ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং খুব অল্প সময়ে ব্যবসায় সফলতার দেখা পায়। তার বাবা মায়ের পরামর্শে দেশে ফিরে আসে সে। দেশে এসে নতুন করে ব্যবসায় যোগ দেয়। ব্যবসাটা রিয়াদ বেশ ভালো বুঝে। তাই তার বাবা একমাত্র ছেলের ইচ্ছার বিরোধিতা করে নি। বাবা রিটায়ার করে টাকা পয়সা ছেলের ব্যবসায় খাটায়। বাপ ছেলের চেষ্টায় তারা এখন ঢাকা শহরে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। বাবা মারা যাবার পর তাদের মা রিয়াদের সাথে থাকে। তাদের গ্রামের বাড়িতে খুব একটা যাওয়া হয় না। তাদের মা মাঝে মাঝে বাড়ি গেলেও রিয়াদ কখনো বাড়ি যায় না। গ্রামের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। রিয়াদের ব্যবসা দাড়ানোর পর সে তার গ্রামের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে। রিয়াদ গুলশানে বাড়ি করে। তার বড় বোন রিশার পছন্দে বিয়ে করে রিয়াদ। তার স্ত্রী রিয়া পুলিশ ক্যাডারে চাকরি করে।

নুরার ঘর ভর্তি ছেলে মেয়ে। প্রায় প্রতি বছর তার বউয়ের কোল জুড়ে আসে একজন। তার বাপের মতো সেও লাঠি নীতিতে বিশ্বাসী। দুপুরে খেয়ে ঘুম দেয় সে। এক যোগ্য চেলার ডাকে ঘুম ভাঙ্গে তার। ইবলিসের চরিত্রের সাথে মিলে যায় নুরার এ চেলার আচরণ।
– ভাই, কোন সোম আইছেন ডাহাত তন?
বদুর প্রশ্নে ভাবনার ডালপালা গজায় নুরার।
– আইছি তো দোফোর বেলা।
– যেই কামে গেলেন, হেইডার খবর কি?
– আর কইস না, আজব খবর নিয়া আইছি।
– কি আজব খবর?
– তুই ব, আমি হাত মুখ ধুইয়া আই।
বলে নুরা ঘর থেকে বের হয়। কোথায় যেন একটা সুতো আলগা হয়ে আছে। সেটা জায়গা মতো বসাতে পারলেই সমাধান পেয়ে যাবে।
চলবে———–

-বাউল সাজু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *