সিঁদুর লাল

নাম আমার সিঁদুর।
কোনো এক সিঁদুর রাঙা দিনে,
টুকটুকে লাল মেয়ে,পরীর দেশ থেকে নেমে এসেছিল আমার মায়ের কোলে।
ডানাকাটা সেই পরী আমি,নাম আমার সিঁদুর।

বাড়ী!!
ওমা,এও বুঝি নয় জানা!
ঐ যে দূরে গোলপাতা ছাউনী,সবুজের ঘের চারিদিক,
উঠোনে খড়ের গাঁদা,পাশেই নদী – খরস্রোতা!

বাবা!!
চেনো বুঝি তারে!
কুমার বাবা আমার।কারিগর সে।গাঁয়ের লোকে শিল্পী বলে ডাকে।
পূজোর সময়,ঘুম নেই চোখে,
হাতে যাদুর পরশ,রাজ্যের মায়া চোখে।
পরম যত্নে শিল্প গড়ে- দেবী সুন্দর,আহা প্রতীমা।
বাবার শৈল্পিক মনে,
দেবী হাসে,দেবী কাঁদে,দেবী জাগে।
অসুরের বধ বাবার হাতে।

মা!!
তার কথা আর কিবা বলি!
সিঁথিতে সিঁদুর,হাতে শাখা পলা।
ঘোমটার ঈষৎ ফাঁক গলে,মায়া ভরা চোখ,বিষণ্ন দেবতা।
শিল্পীমন স্বামীর জন্য,মন জমিনে আসন পাতা।

সেবার পূজোয়,মেলা বসেছিল।
নাগরদোলায় স্বপ্ন নেচেছিল।
বাবার ছোঁয়ায় দেবী অপরূপ,কত যে মণ্ডা মিঠাই!
মনে আনন্দের বাণ ডেকেছিল।

ঘনিয়ে সন্ধ্যা,রাত্রি নামে,
মন্ডপে তখন বেজে চলেছে বাদ্য,
মুহুর্মুহু উলুধ্বনি।
ফিরছিলাম বাড়ীর পথে,
না,অমাবস্যা তিথি তো নয়।
হঠাৎ চমকে গেলাম,থমকে গেলাম!
পাশের বাড়ী নয়া জামাইবাবু,এক গাল হেসে,হাঁটে পাশাপাশি।
এ কথা, সে কথা,আরো কথা—
তারপর???
চেনা আদলে,
হায়না দেখি,লোভাতুর কামনা দেখি।
লকলকে জিহ্বা দেখি,
নিঃশ্বাসে বিষবাষ্প,ঢেকে নেয় আদিঅন্ত।
দমকে দমকে মরণ দেখি।
চারপাশে পশুর আওয়াজ, সাম্বা নৃত্য দেখি।
মানুষ নয়, দেবতা নয়,প্রাণ নয়,
ক্ষয় দেখি,নরপশু আর বিকৃত লালসা দেখি!

তারপর কত কত পূজা চলে যায়!
মার সিঁথিপাটি আর লাল নয়।
মুছে গেছে সিঁদুর,শিল্পী বাবার সহমরণে।
বাবার অসহায় মুখ দেখি,
শিল্পের সাথে শিল্পীর সহমরণ দেখি!

আমার যে মরণ সেই রাতে,
যে লাশ চিতায় পোড়ে,
স্মৃতিপোড়া লাশের গন্ধ বাতাসে।
তার জন্য সিঁদুর রাঙানো চোখ আজ,
দাউ দাউ জ্বলে, এক রাত।
সিঁদুর রাঙা ভোর যদি আসে আবার!!

আমি সিঁদুর,
আজো সিঁথিপাটি,রাঙানো সিঁদুরের দাগ,
সেই কবে, বাবা নাম রেখেছিল!
নাম আমার সিঁদুর,দগদগে লাল!!!

 -ফারহানা নীলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *