সার্কাস ( ৪র্থ ও শেষ পর্ব )

হীরাকে সারাদিন বেধেঁ রাখা হয়েছে। রাতে জলপাই গাছের নিচে উলঙ্গ অবস্থায় পরে ছিল সে । তাকে তুলে এনে ঘরে শুইয়ে দেবার পরপরই সে দুটো আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটিয়েছে।
প্রথমে সার্কাসের পার্টির রান্না করে মর্জিনা মেয়েটিকে নিয়ে। মেয়েটি দুধের গ্লাসটা যেই দিতে গেল, ওমনি খপ করে মেয়েটাকে হীরা ধরে ফেলল। মেয়েটার চিৎকার শুনে ঘরে গিয়ে দেখা গেল, হীরা মেয়েটার চুল মুঠো করে ধরে আছে। খারাপ ভাষায় মেয়েটিকে গালিগালাজ করছে,

‘নটি বেটি, তোর আনা দুধ আমি খামু, পাইছস্ কি? ভাবিস কেউ কিছু জানেনা? রাইতের বেলা কাশেমের লগে শুইতে যাস। নেংটা হইয়া ফস্টি করস! দিনের বেলা সাধু?’

কোন উপায়ে হীরার হাত থেকে মেয়েটার চুল ছাড়ানো গেল না। শেষে চুল কাটতে হলো।

দ্বিতীয় ঘটনা রাণী মেয়েটাকে নিয়ে। হীরার নোংরা কাপড় খুলে গা মুছিয়ে অন্য কাপড় পড়াতে গিয়ে ঘটনা ঘটল। আচমকা খাঁমচি দিয়ে মেয়েটার চোখ আহত করেছে। হীরার নখের খোঁচায় চোখ থেকে রক্ত পড়ছে মেয়েটার। তাকে এলাকার হাসপাতালে নিয়ে কিছু হলো না। তখনই লোক দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে রংপুর মেডিকেলে।

এমন আচানক দুটো ঘটনা ঘটানোর পর তাকে ফয়েজ চৌধুরীর ইশারায় ঘরের খুঁটির সাথে বেধেঁ রাখা হলো দিনভর। কাউকে হীরার ঘরে যেতে দেয়া হচ্ছেনা। সে সব কাপড় খুলে প্রায় নগ্ন অবস্থায় আছে বলে। মাথার উপর ফুল স্পীডে ফ্যান ঘুড়ছে,তবুও নাকি তার গরম লাগছে।

এর মধ্যে মেরির মা গিয়ে একবার খাইয়েছে হীরাকে। শুধু মেরির মা’কে দেখলে শান্ত থাকে হীরা । মেরির মা হীরাকে বুকের সাথে ধরে খানিকক্ষণ কাদঁলেন কারন হীরা মেরির মাকে অনুনয় করে বলছিল, তার হাত খুলে দিতে। মেরির মা চাইলেও তা করতে পারবে না। ফয়েজ চৌধুরী তাকে দিনে দুপুরে মাটি খুড়ে কবর দিবে জানলে।

মধ্যরাতে ফয়েজ চৌধুরী হীরার ঘরে ঢুকে বিস্মিত হলেন। উনিশ বছরের অতি সুন্দরি বালিকা হীরার শরীরের গঠন যে কোন পুরুষের মতিভ্রম ঘটাতে পারে। ফয়েজ চৌধুরীর বিস্মিত হবার কারন তা নয়। কারন হলো, হীরা নতুন বউদের মতো লজ্জামাখা গলায় তাকে সালাম দিয়েছে ঘরে ঢুকতেই। তারপর বলল,

‘আফনে এতগুলা দিন পর আসছেন, অথচ আমি নেংটা হয়ে আছি। বড়ই লজ্জা পাইতেছি। আমি শরমিন্দা! ‘

ফয়েজ চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে হীরার বাধঁন খুলে দিলেন এই এক কথায়।

‘শরমিন্দার কিছু নাই, আমি তোমার স্বামী । তুমি তোমার কাপড় পড়ো। ‘

হীরা শান্ত বালিকার মতো উঠে মেঝেয় পরে থাকা কাপড় রেখে আলমারি খুলে নতুন কাপড় বের করে পড়ল। আচঁল তুলে মাথায় দিয়ে নতুন বউয়ের মতো খাটে ফয়েজ চৌধুরীর পাশে গিয়ে বসে বলল,

‘আফনে খাইবেন কিছু ? থানায় আফনেরে তারা খাইতে দিলনা! আফনের ক্ষুধা লাগে নাই?’

ফয়েজ চৌধুরী চমকে উঠলেন। তার সত্যিই কিছু খাওয়া হয়নি। সারাদিন থানার এস. পি তাকে বসিয়ে রেখেছে। দু’কাপ চা অবশি দিয়েছিল। চা খেয়ে ক্ষিধা ব্যাপারটা বুঝতে পারেননি তিনি।

এমন একটা সাধারন ঘটনায় তাকে এমন বিপত্তিতে ফেলবে বুঝতে পারেন নি। তার মেয়েদের গোসলের সময় কলপাড়ের ফুটো দিয়ে যে দু’জন ছেলে তাকিয়ে ছিল, তাদেরকে হালকা মারধর করার জন্য কাশেম, খালেককে তিনিই বলেছিলেন। হারামজাদারা দিয়েছে রামধোলাই। একজনের তো হাতের কুনুই খুলে গেছে। ছেলেদুটো এখন হাসপাতালে। এলাকার চেয়ারম্যান তাদের হয়ে থানায় জি ডি করেছেন তার বিরুদ্ধে। অথচ শালার পুতরে এখানে আসার আগেই পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছেন তিনি। থানায় দেখা হওয়ার পরর এস. পি’র সামনে হাত কচঁলে বলছে,

‘কি করবো চৌধুরী সাফ, এলাকার চেয়ারম্যান হয়ে এলাকার বিরুদ্ধে তো যাইতে পারিনা।’

শালা….. কির পুত, হারামজাদা… জি ডি তে লেখছে কি? আমি নাকি মাইয়াগোরে শরীরের ব্যবসায় লাগাই। মাইয়ারা ছেলে দুটারে দু ঘন্টার চুক্তিতে ঘরে নিয়েছিল। ঘটনা এলাকার মানুষ টে্র পাওয়ায় তাদেরকে পার্টির লোকদিয়ে পিটিয়ে নিয়েছি। এলাকার লোকজন তাদের পক্ষে চেয়ারম্যানকে বিচার দিয়েছে। চেয়ারম্যান বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় জি ডি করেছে।

আজ তিনদিন ধরে সে থানায় ঘুরপাক খাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে বারবার ডাকছে। আজ কিছুক্ষণ আগে থানায় চেয়ারম্যান আর এস. পি কে সে একলক্ষ টাকা দিয়ে সব মিটমাট করে ফিরেছে। এতক্ষণে পেটে ক্ষিধা জানান দিচ্ছে। কিন্তুু ঘটনা তো হীরার জানার কথা না। সে জানল কেমনে?

অবাক চোখে সে হীরার দিকে চেয়ে রইল। হীরা তার দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে টেবিলে রাখা তার জন্য দুধের গ্লাস ফয়েজ চৌধুরীর দিকে এগিয়ে দিল,’খান, শরীরে শক্তি পাইবেন’

ফয়েজ চৌধুরী এগিয়ে দেয়া দুধের গ্লাস এক চুমুকে শেষ করলেন। কোন কিছু না ভেবে তার কিশোরী স্ত্রীর দিকে হাত বাড়ালেন।

অতি চালাকির সাথে হীরা তার বেধেঁ রাখা দঁড়িতে ফয়েজ চৌধুরীরকে বেধেঁ ফেলল। ঘটনা আগে থেকে একটুও আন্দাজ করতে না পেরে ফয়েজ চৌধুরী প্রথমে একটা ছোটখাট ধাক্কা খেলো। পরে আতঙ্কিত হয়ে চিৎকার দিতে চাইতেই হীরা চেঁচিয়ে উঠল,

‘চিল্লাবি না। আজ শুক্রবার। তোর পেয়ার কাশেম মর্জিনার সাথে ফূর্তি করতেছে। খালেক আছে থানায়। তারে কাল সকালে ছাড়বে। পার্টির লোকজন সব ঘুমাইছে। তুই চিল্লাইয়া কি করবি? তোর লোকজন তরে এমনভাবে দেখলে কইবো কি….হি… হি… হি…।’

কি অদ্ভুত হাসি। শরীরের মধ্যে ঢুকে যায়। হৃৎপিন্ড কেঁপে ওঠা হাসি! ফয়েজ চৌধুরী ঝাঁঝালো গলায় বলল,

‘চাস কি মাগি? ‘

হীরার গলায় নয় একটা পুরুষালী ভারী কন্ঠ হীরার মুখে বলল,

‘তোর পাপের ব্যবসা শেষ করতে চাই। হাজার হাজার মাইনষের অভিশাপের টাকা তোরে আজ বাঁচাতে পারবেনা।’

তারপরই আবার হীরার কিশোরী গলা শোনা গেল,
‘ স্ত্রী, সন্তানের খাবার না দিয়া সেই টাকায় বদ লোকগুলা তোর সার্কাস দ্যাখতে আসে। অনাহার সন্তানগোরে বুকে জড়াইয়া মায়ে তোরে আর তোর সার্কাসেরে অভিশাপ দেয়। তুই জানস না? আইজ থেইক্যা না থাকব বাঁশ না বাজবো বাঁশি। ‘

হীরার উচ্ছৃঙ্খল খোলা চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে। রক্তাভ চোখ দুটো ধকধক করে জ্বলছে, চোখের কোটর থেকে যেন বেড়িয়ে আসতে চাইছে। ফয়েজ চৌধুরী ভয়ে উৎকন্ঠায় মিইয়ে গেলো।

হীরা এক টানে তার শরীর থেকে কাপড় খুলে ফেলে দিল। নিজের পেটে ইশারা করে বলল,

‘বাচ্চাডা কার? সত্যি কইরা ক দেহি..’

ফয়েজ চৌধুরী কাপাঁ কাপা গলায় সাথে সাথে বলল,

‘আমার.. আমি সত্যই বলছি,আমার’

‘তাইলে…?’

‘সার্কাস ব্যবসা চালাতে হলে বাচ্চাকাচ্চা চলেনা। তাই আমি বলছিলাম…। ‘বাকি কথা ফয়েজ বলতে পারেনা। হীরা তার নাকের ডগায় নিজের মুখটা নিয়ে এসেছে। এই মুখ হীরার নয় অন্য কারো। একে সে চেনেনা। অচেনা সেই মানুষের হাত ফয়েজ চৌধুরীর বুকের উপর রাখল আস্তে।

পোষ্ট মর্টেম হয়েছিল ফয়েজ চৌধুরীর শরীরের। রিপোর্টে বলা হয়েছে, হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল তার। হীরা ন’মাস পর একটা ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছে। হীরা তার অনেক সুন্দর একটা নাম দিয়েছে ‘রুমান’।

বেলা প্রধান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *