‘মিনা’র কি হইছে?’
‘মাইয়া’
আবার একটা ‘শরীরের’ জন্ম হয়েছে। হ্যা শরীর-ই তো। দিনে দিনে এই শরীরে কত লজ্জা, গ্লানি, অপমান,লাঞ্ছনা পুষে রাখবে! এতসব শরীরে ধারন করতে করতে সে হাজার বার মরে মরে বেচেঁ থাকবে। নিজের সাথে একান্তে বারবার তা আঘাত করে যাবে আজন্ম।
দুনিয়াতে আসার আগে কতগুলো সম্পর্ক তার জন্য অপেক্ষা করে ছিল! বাবা, চাচা, মামা, ফুপা, ভাই দাদা, নানা আরও কত….
এই সম্পর্কগুলোর দু’টো হাত আছে। মিনা’র মেয়ের বাড়ন্ত শরীরে অগোচরে এগিয়ে যাবে সেই শরীরের দিকে। একটা মেয়ে জানে কতগুলো চেনা অচেনা হাত তার শরীরে ছুয়ে গেছে, একটা পুরুষ জানে চেনা অচেনা কতগুলো শরীরে তার হাত ছুয়ে মজা নিয়েছে।
মেয়ে জন্মাবার পর থেকেই আমরা মেয়েরাই তাকে শিখাই ‘তুমি একটা শরীর’! এভাবে বোস না, হেটোঁ না, উচু গলায় গান গাইবে না, সাইকেলে মেয়ে মানুষ মানায়? ছোট জামা পড়বে না, পায়জামা পরার বয়স এখন, বড় ওড়নায় বুক ঢাকবে, বাড়ির বাহিরে যাবে না।
এগুলো করলে মানুষ তোমার চরিত্রে আঙ্গুল তুলবে। তোমাকে নিয়ে নোংরা কথা ছড়াবে। তোমার উপর সমাজ আঙ্গুল তুলবে। তাহলে তুমি শেষ। সমাজে বেঁচে থাকতে পারবে না। একটা শরীরকে শুদ্ধ রাখাই যেন নারী জন্মের কারন। যেন তোমার শরীরে সমাজের নোংরা হাত উঠলে তুমি অচল, কেন? একটা শরীর নারীর পরিচয় হয় কেমন করে? তোমার শিক্ষা, তোমার সত্তা, তোমার কর্ম, তোমার অর্জন কিছু না?
আমরা মা, চাচী,খালা,বোন, নানী, দাদী -ই শিখাই নারী তুমি একটা শরীর। এই শরীরই তোমার পরিচয়। স্কুল থেকে ফেরার পথে যে কুকুরগুলো শরীরটার উপর ঝাঁপিয়ে পরে সে শরীরে পর্দা ছিলনা বলে যারা কথা তোলে তাদের মধ্যে অধিকাংশই সেই মা, চাচী, খালা, নানী, দাদী। একটা শরীর কোন কুকুরের আঁচড়ে কলঙ্কিত হয় না। কলঙ্কিত হয় তখন যখন সেই শরীরের উপর অঙ্গুল তুলে আরেকটি নারী। নারী শরীর। যে শরীরের রয়েছে এমন আচরের দাগ।
সংসার ভেঙ্গে যাওয়া নারী, প্রতারকের শিকার কোন নারী, অবহেলার কষ্টে পতীত নারী, ধর্ষিত নারী,সমাজের অঙ্গুল তোলা নারীগুলোর পাশে এসে দাঁড়াই একবার আমরা নারী। পুরুষ কত নারীকে আর আঙ্গুল তুলতে পারে দেখি একবার আমরা নারী।
সমাজের ঐসব কুৎসিত পুরুষের কথার থেকে বেরিয়ে আসুন একবার নারী। এসে দাঁড়ান অসহায়, অপমানিত, লাঞ্ছিত নারীর পাশে। দেখুন কি বিপ্লব ঘটবে সেদিন! শরীর আর জন্মাবে না। মানুষ জন্মাবে বারবার মিনা’র কোলে। শুধুই মানুষ। কারন একটা নারী শরীর পারে পুরুষের সকল সমান তালে সামলিয়ে নিজের সংসারও সামলাতে। পুরুষ যা কোনদিন পারেনি পারবেনা। নারীর বিধাতার দেয়া বিশাল এই ক্ষমতাকে চিনুন শুধু একবার।
(নিজে নিজেকে কুলষিত করতে ভালবাসে যে নারী এ লেখা তার জন্য নয়)
–সাবিনা ইয়াসমিন বেলা