মায়া (১ম পর্ব)

আজ অনেক পরে অনলাইনে এলেন! কেমন আছেন?

সব কাজ সামলে এসেছি৷ তাই দেরী হল৷ ভাল আছি৷ আপনি কেমন?

আছি একমতোন৷ অফিসে কাজ বেড়েছে৷ আছি ভাল৷ তা আজ কি কি করলেন সারা দিন?

আর আমার করা! যা করি প্রতিদিন তাই করলাম৷ আপনি তো জানেনই৷
অফিসের কথা বললেন যে৷ কি এমন কাজ পড়ল হঠাৎ!

আর বলবেন না৷ ইয়ে মানে আমার একটা প্রমোশন হয়েছে৷ নতুন দায়িত্ব বুঝে নিতে হলো তো৷ বুঝেনই৷

ও… কনগ্রেটস৷ সুখবর টা পেয়েছেন কবে? যদি আগেই পান তাহলে শেয়ার করলেন না কেন?

আরে না৷ গতসপ্তাহে পেয়েছি৷ দেখলেন না অনিয়মিত ছিলাম কিছুদিন৷ আজ কনফার্ম হয়েই জানালাম৷

হুমমম…

আচ্ছা আপনি মেসেজ দিতে বেশ দেরী করেন? যদি কিছু মনে না করেন… বলবেন কি, দেরীর কারণ টা৷

আসলে আমার টাইপ করতে একটু সময় লাগে৷ তাছাড়া দেখেছেনই তো আমার বানানও ভুল যায় অনেক সময়! এত করেও বানান ঠিক করতে পারি না৷ দুঃখিত

আরে না৷ বুঝলেই হলো৷

…..কিছুক্ষণ নীরবতা৷

একটা কথা বলি ৷

বলুন৷

অধেকদিনই তো কথা বলছি আপনির সাথে৷ তুমি করে লিখলে কেমন হয়৷ মানে যদি আপনার আপত্তি না থাকে আরকি৷

না কোন আপত্তি নেই৷ বলুন তুমি করে৷

তাহলে তো তোমাকেও তুমি করে বলতে হবে….

এই পর্যায়ে মায়ার হৃদস্পন্দন একটু বেড়ে যায়৷

মায়া লিখে…

আমি চেষ্টা করবো৷

রিফাত লিখে…

ঠিক আছে তুমি চেষ্টা করো৷ যখন হবে তখন হবে৷

মায়া ও রিফাতের পরিচয় ফেসবুকে৷ রিফাত কবিতা লেখে সেই সুত্র ধরে মায়ার সাথে পরিচয়৷ মায়া বলেছিল আপনি তো দারুণ কবিতা লিখেন৷ আমার ভাল লাগে খুব৷

রিফাত লিখেছিল বাহ৷ ভাল লিখি সেটা তো জানতাম না৷ ভাল লেগেছে জেনে কৃতজ্ঞ হলাম….

এভাবেই শুরু৷

রিফাত একটা কবিতা পোস্ট করে অপেক্ষা করে৷

মায়া দীর্ঘ বিরতি নিয়ে তারপর কবিতায় মন্তব্য করে৷ তাও বেশ ভুল বানানে৷ রিফাতের সয়ে গেছে৷

রিফাত মায়া কে বন্ধু বার্তা পাঠায়৷ মায়া সাড়া দেয়৷

রিফাত মায়ার প্রোফাইল দেখে৷ তারমনটা কেমন করে উঠে৷ মায়ার নাম টা যেই রাখুক ঠিকই রেখেছে৷ গোধূলীর রঙে রাঙা একখন্ড মেঘ যেনো মায়া৷ তাদের কথোপকথন চলতে থাকে৷ সময় বয়ে যায়৷ এক সময় আপনি থেকে সম্পর্কটা তুমি তে নেমে আসে৷

রিফাত দেখা করতে চায়৷ মায়া বলে সবুর করো৷ সময়ে আমি দেখা করবো…

আচ্ছা আজ কি কোন লিখা লিখেছো?

রিফাত বলে হ্যাঁ লিখেছি৷

কই আমি তো কিছু পেলাম না!

রিফাত বলে আমি পোস্ট করিনি৷ তাই পাওনি৷

মায়া বলে কেন পোস্ট করনি কেন?

রিফাত বলে ইচ্ছে হয়নি৷ আগে তোমাকে পড়াই তারপরে পোস্ট দিব৷

মায়া বলে আমার পড়তে সময় লাগবে৷ এককাজ করো তুমি আবৃত্তি করে দাও না৷
ভয়েস রেকর্ডার থেকে… আমি তো তোমার কন্ঠ শুনিনি আগে!

রিফাত নিশ্চুপ৷

মায়া লিখে কি হলো! কথা বলছো না যে…

রিফাত নিশ্চুপ৷

মায়া চুপ করে বসে থাকে৷ সে মনে করে রিফাত তার কথায় রাগ করেছে৷

মেসেজ আসে একটা রিফাতের৷ সো লিখেছে একটু দেরি হলো৷ ভয়েস রেকর্ড করলাম৷ আপলোড করছি৷ শোন

হ্যাঁ এখন শোনো৷ আপলোড হয়েছে৷

মায়া অবাক হয় মেসেজে কোন কবিতা নেই! আছে রিফাতের কন্ঠস্বর…

রিফাত রেকর্ডিং এ বলেছে…

“মায়া তোমার সাথে কতদিন থেকে কথা বলছি৷ কবিতা লিখছি তোমার জন্য৷ না না যে কবিতা গুলো পোস্ট দিই সেগুলা নয়৷ পুরো একটা ডায়রির প্রতিটা পাতায় তোমার জন্য একটা করে কবিতা৷ বছর ধরে তোমার সাথে কথা বলছি৷ লিখছি ৷ দেখা করার কথাও বলেছি৷ তুমি রাজি হওনি৷

আমি তোমার সামনে বসে নিজ হাতে আমার ডায়রিটা দিতে চাই৷ তোমাকে৷ জানো কি ওই ডায়রীটার নাম কি দিয়েছি! ভালবাসা!

রিফাত দেখে মায়া আর অনলাইনে নেই৷ রিফাত পাগললের মতো মেসেজের পর মেসেজ পাঠাতে থাকে….

মায়া কাঁদছে৷ অনলাইনের কানেকশান অফ করে দিয়ে কাঁদছে৷ মেসেজ আসলে সরাসরি সে পড়তে পারে না৷ ভয়েসে কনভার্ট করে তাকে পড়তে হয়৷ এজন্য মেসেজের উত্তর দিতে তার দেরী হয়৷ কবিতা গুলো টেক্সট থেকে ভয়েসে কনভার্ট করে শোনে সে৷ মায়া অন্ধ! পৃথিবীর আলোর সাথে তার পরিচয় নেই৷ দৃষ্টিহীন চোখে মায়া কাঁদে৷ কেঁদেই চলে৷

আলোহীন চোখে কি জল থাকে না!

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *