মাতৃত্ব

মৃণ্ময়ীর এত সাহস! ফ্লোরাকে রেখে দিতে চায়! অবিবাহিত মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা… সমাজ তো চোখ রাঙাবেই! অন্তরাল সিনেমাটা দেখা শুরু করে হোঁচট খায় নাহরিন। রিমোটটা হাতে,গলা টিপে ধরে টিভির! হঠাৎ করেই আজ সিনেমা দেখা শুরু করেছিল নাহরিন। অন্তরাল নামটা ভালো লাগাতেই আটকে গেলো সে!
নাহ্ আজ রাতে আর ঘুম হবে না। এমন কত রাতই ঘুমোয় না নাহরিন। কিন্তু আজ মৃণ্ময়ী আর তার ঔরসে অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে…. নাহরিন পালাতে চায়… অনেকদূর!

তখন দেশে ভোটের সময়। চারিদিকে ইলেকশনের ডামাডোল। সৌমিকের এমন আগোছালো চেহারা আর দীপ্ত চাহনী… নাহরিন এড়াতে পারে না। এটাকে ভালবাসা বললে ভুল হবে… একটা সম্মোহিত আবেশ!
সৌমিক সারাদিন ঘোরোফেরে… ভ্যাগাবন্ড! রাতেই নাকি তার যত কাজ!
আলিম সাহেব বড় নেতা। আজকাল প্রায়ই ডেকে পাঠায় সৌমিককে। এবারের কাজটা জটিল। একজনকে সরিয়ে ফেলতে হবে। সময় একরাত…

সৌমিক পেছাতে জানে না। এটাকে সে চ্যালেঞ্জ হিসাবেই নেয়। টালি করে আশপাশ। আলিম সাহেবের ছেলে অনীক। অনীক একবার চরম অপমান করেছিল সৌমিককে। নাহরিনের দিকে নজর দিয়েছিল অনীক। সৌমিক ব্যাপারটা ভোলেনি।
ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি খেলে যায়। সৌমিক আজ আলীম সাহেবের কাজটা শেষ করবে।
রাত গভীর হতেই বেড়িয়ে পড়ে সৌমিক। বাসটাতে বসার জায়গা পায় না। এই সময়ে শিকারটা বনানীতে থাকে। অতএব গন্তব্য… বনানী। মিরপুর থেকে বনানী যাবার সরাসরি বাস নেই। চেয়ারম্যান বাড়ীতে নেমে পড়ে সৌমিক। পকেটে হাত দিয়ে হাঁটতে থাকে সে।

স্টার কাবাবের সামনের রাস্তা দিয়ে এগোয় সৌমিক। মাথাটা পরিষ্কার একদম। রাস্তার পাশে একটা গাড়ী দাঁড়িয়ে। ঐ তো অনীক। সৌমিক কয়েক সেকেন্ড সময় নেয়… তারপর একটা আওয়াজ। অনীক লুটিয়ে পড়ে….

আলীম সাহেব ঝানু লোক। সৌমিকের পেছনে তাঁর লোক….
সৌমিক জানে না! ঘটনা ঘটার সাথে সাথে মাথায় একটা আঘাত… আর কিছু মনে নেই সৌমিকের!
…. শেষ করে দে হারাম…. আলীম সাহেব হিংস্র শার্দূলের মত বলে ওঠেন।
ইলেকশনের আগে কিছুই জানতে দেওয়া যাবে না। অনীকের লাশ দাফন হয় গোপনে।

নাহরিন টের পায় অনাগত অস্তিত্ব! সৌমিককে বলা হয়নি। সৌমিককে কেউ দেখেনি আর! সৌমিকের আহ্বান ছিল… নাহরিন উপেক্ষা করতে পারেনি। তারপর থেকে সৌমিকের সাথে আর দেখাও করেনি নাহরিন। কিন্ত এখন কি করবে….

নাহরিনের সাহস ছিল না। সমাজের শেকলে আটকে ছিল ভবিষ্যত। নাহরিন অনেক ভেবেও অনাগত এই জীবনকে স্বাগত জানাতে পারেনি। গ্রিনরোডের একটা নার্সিংহোমে রেখে এসেছিল সৌমিক আর তার মিলিত অপরাধ!

অপরাধ! কি জানি! নাহরিন আজো ভাবে! এতদিনে কত বড় হতো? সৌমিক জানলে কি বলতো? আচ্ছা সৌমিক এভাবে পালিয়ে কেন গেলো? হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি নাহরিন। মৃণ্ময়ীর মত সাহসী সে কেন হলো না!
সিনেমা তো তিন ঘন্টায় শেষ হয়! জীবন তো সিনেমা নয়! নাহরিন জীবনের বুকে মাথা রাখে…. হাঁপরে হাঁতুরীর আওয়াজ।
মা কেন এমন করলে? চমকে ওঠে নাহরিন। ছেলে না মেয়ে ঠাওর করতে পারে না নাহরিন! আহা সেও তো মা হয়েছিল মাস দুয়েক! মাতৃত্ব করেনি প্রবঞ্চনা! শুধু নিজেই নিজেকে ঠকিয়েছে….

ফারহানা নীলা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *