ভালোবাসা, প্রেম নয়

কি! কোথায় যাবেন! আসুন নামিয়ে দেই।

পারমিতা দেখল শাহেদ রিক্সা করে যাচ্ছে। তাকে উদ্দেশ্য করেই বলছে।

মানুষ গাড়ি দিয়ে লিফট দিতে চায়। মানা যায়। কিন্তু রিক্সা নিয়ে কেউ এরকম বলে! তাছাড়া রিক্সায় ঘনিষ্ট না হয়ে কি বসা যায়! পারমিতা ভাবতেই পারছেনা। দেখতে গোবেচারা লাগলেও ভেতরে ভেতরে দেখি ছেলে ভালোই স্মার্ট।

না ঠিক আছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

আরে আসুনতো। এখন কিছু পাবেন না। মেঘ করে আসছে। উঠে পড়ুন।

শাহেদকে পারমিতার ভালো লাগে। দেখে মনে হয় লক্ষ্মী ছেলে। ওদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকে। বিকেলে মাঝে মাঝে ছাদে উঠলে শাহেদকে দেখে। বিড়ি সিগারেট খায় কিনা কে জানে। নাহলে ছাদে উঠবে কেন।

কি শপিং করলেন! শাহেদ হয়তো জার্নিটা সহজ করতে চাইছে।

পারমিতা ভয়ে আছে পাছে কেউ দেখে ফেলে। স্মিত হেসে বলল এইতো টুকিটাকি কিছু।

শুনুন একটা কথা বলি!

বলুন।

আপনি বেশি হাসবেন না।

কেন কেন! পারমিতা অবাক হল।

শাহেদের মুখে মুচকি হাসি। বলল যদিও হাসি হৃদরোগ প্রতিরোধ করে বলে জানি কিন্তু আপনার হাসি অনেকের হৃদরোগের কারণ হতে পারে।

এটা যে একটা প্রশংসা পারমিতার বুঝতে রাত পর্যন্ত সময় লেগেছে। সেই থেকে পারমিতার যখনি মনে পড়ে কথাটি তখনি হাসি পায়। আবার যখনি হাসি পায় তখনি শাহেদকে মনে পড়ে।

এরপর শাহেদের সাথে বিকেলে প্রায়ই ছাদে দেখা হলে কথা হতো। পারমিতা বেশি বেশি হাসতো। তার মনে হতো কেউ হার্ট এটাক করে মরুক।

এরই মধ্যে অনেকগুলো বসন্ত চলে গেল। শহরে মানুষ আর যানজট হুহু করে বেড়ে গেলো। শাহেদরা শুধু বাসা না দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমাল।

ধানমন্ডি সাতাশে অনেকক্ষণ ধরে পারমিতা দাঁড়িয়ে। কিছু পাচ্ছে না। একটা প্রাইভেট কার এসে তার গা ঘেঁষে থামল।

কি! কোথায় যাবেন! আসুন নামিয়ে দেই।

কণ্ঠটা শুনেই পারমিতার বুঝতে সময় লাগলো না এটা শাহেদ।

শেষ পর্যন্ত তাহলে বেঁচে আছেন? পারমিতার কথায় প্রচ্ছন্ন খোঁচা।

হুম আছিতো। তবে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে পারিনি। হার্টে চারটা ব্লক ধরা পড়েছে। বলে হা হা করে হাসলো।

পারমিতা আগের মতোই মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখে থাকলো শাহেদকে। ভাবলো কতবার বলতে চেয়েছি ভালোবাসি। বলা হয়নি। পারমিতার এখনো ইচ্ছে করছে বলতে ভালোবাসি। পারমিতা জানে এটা কখনোই বলা হবে না। কিছু কথা কখনো বলা হয়না।

-জামান একুশে

ছবি কৃতজ্ঞতা- সাখাওয়াত তমাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *