পুরুষেরা যখন এমন কোন মেয়েকে খুঁজে পায় যে কোন অবস্থাতেই তাকে ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেনা তখন সে তাকে বাদ দিয়ে এমন কাউকে খোঁজা শুরু করে যে তাকে যথেষ্ট পরিমান কষ্ট দিয়ে ভালোবাসা নামক খেলায় উত্তেজনা ধরে রাখতে পারে।
পড়ার পরেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল শর্মীর। যত্তসব আজগুবি কথাবার্তা!!! রুমেন আহমেদ নামের এই তরুন লেখকটা এইসব লিখে উঠতি বয়সের মেয়েদের মাথা খাওয়ার ধান্দা করেছে। আচ্ছা দেখি এরপর কি লিখেছে।
কোন সম্পর্কে পুরুষের শুরুর দিকের ভালোবাসার পরিমান যদি বেশি হয় তবে চোখবন্ধ করে ঐ সম্পর্ককে ক্ষণস্থায়ী হিসেবে ঘোষনা করা যায়।
নাহ! ইম্পসিবল!! এই লেখকের বই আর পড়াই যাবেনা। বাস্তবের সাথে একেবারেই মিল নেই। শর্মী অলরেডি একবছর পার করে ফেলেছে ফারহানের সাথে। শর্মীর প্রতি ছেলেটার ভালোবাসা প্রথম দিন থেকেই অন্নেক বেশি। বছর পেরিয়ে গেলেও কমাতো দূরে থাক আরো বেড়েছে। ফারহানকে এখন অনেক নিজের বলে মনে হয়। ফারহান যখন শর্মীকে বৌ বলে তখন শর্মীর মনে হয় ঠিকই তো বলেছে। সেতো ফারহানের বৌ ই। শুধু আনুষ্ঠানিকতাটাই যা বাকি। সেটাও হয়ে যাবে ফারহান একটা চাকরি পাওয়া মাত্রই। অথচ কি বিপদটাই না ঘটতে যাচ্ছিল কয়েকটাদিন আগে। ডেংগুকে সাধারন জ্বর ভেবে উড়িয়ে দেওয়ার ফলটা হাতে নাতে পেয়েছিলো ফারহান। সেই সময় দিনরাত হাসপাতালে থেকে শর্মীই দেখাশুনো করেছিলো তার। এমনকি বাথরুমে পর্যন্ত সেই নিয়ে যেত। বরাবরই বাড়ির বাইরে বেশি সময় দেওয়ায় বাড়ির মানুষদের সাথে সম্পর্কটা ফারহানের কমফোর্ট জোনের বাইরে থাকায় ফারহানের বন্ধুরাই শর্মীকে রিকোয়েস্ট করেছিলো ফারহানের পাশে থাকার জন্য। শর্মী না করতে পারেনি। সারাদিন অফিস শেষ করে শর্মী সোজা চলে যেত হাসপাতালে। প্রথম প্রথম ফারহানকে বাথরুমে নিয়ে যেতে একটু অস্বস্তি হলেও পরে মনে হয়েছিলো ফারহান তো তারই। এতো তারই দায়িত্ব। এরপর থেকেই এই বউ বউ ফিলিংসের সূচনা। সেই ফিলিংসটাই পূর্নতা পেয়েছিলো ফারহান যখন শর্মীর জন্মদিনে সব বন্ধুদের সামনে নিজের হাতে পায়েল পরিয়ে দিয়েছিলো। শর্মী এতোটাই লজ্জা পেয়েছিলো যে সোজা বাথরুমে ঢুকে নিজেকে আড়াল করেছিলো। বাথরুমে থরথর করে কাঁপতে থাকা শর্মী কোনরকমে নিজেকে সামলে বের হতেই দেখে দরোজার সামনে ফারহান দাঁড়িয়ে। আবেগের আতিশায্য বোধহয় ভর করেছিলো দুজনের উপর। এঁকে অন্যকে তীব্রভাবে জড়িয়ে ধরে বেগ আবেগের পোষ্টমর্টেমটাও সেরে ফেলেছিলো। নিজেকে তাই পুরোদস্তুর বউ ভাবার সুযোগ পাওয়া আর অধিকার নামক শব্দটার সাথে পরিচয় হওয়া যখন শর্মীকে লাল নীল দুনিয়ার সন্ধান দিয়েছিলো ঠিক সেরকমই এক পাগলাটে বিকেলে ফারহানের সাথে বাইক বিলাসের মাঝেই আচমকা ব্রেকে ছিটকে পড়েছিলো শর্মী। জ্ঞান ফিরতে রাত পেরিয়েছিলো। সিরিয়াস কিছু না হলেও ডান পাটা ভেংগে গেলো। পাক্কা তিনমাস বেড রেস্টের ডাক্তারি পরামর্শপত্র হাতে নিয়ে শর্মী যখন বাসায় ফিরলো তখন খুব একটা খারাপ লাগা তার মাঝে কাজ করছিলো না। ফারহানের ব্যাপারটা শর্মীর বাসায় যেহেতু সবাই জানতো তাই এই তিনমাস ফারহানের সেবা যত্ন পাওয়ার স্বাভাবিক প্রত্যাশাটা বরং শর্মীর মাঝে সুখ সুখ অনুভূতির জন্ম দিয়েছিলো।
প্রথম দু’দিন পেরোনোর পর যখন ফারহান ফলমূল নিয়ে তাকে দেখতে এসেছিলো শর্মী তখন ফুল না নিয়ে ফল নিয়ে আসার জন্য ফারহানকে আচ্ছামতো শাষিয়ে দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলো বউয়ের ব্যাপারে আরেকটু সতর্ক হতে হবে জনাব। বউ নিয়ে কেবলই ঘুরে বেড়ানো নয় বরং তাকে ভালোভাবে জানতে,বুঝতে আর বউয়ের দায়িত্ব নিতে শেখাটাও সমান জরুরী। ফারহান কি বুঝেছিলো কে জানে। এরপর দিন সাতেক তার কোন খোঁজই পেলোনা শর্মী। না ফেসবুকে না ফোনে। আমরা ধরে নিতে পারি ফারহান হয়তো শর্মীর দেওয়া হোমওয়ার্কগুলো এতটাই সিরিয়াসলি করছিলো যে শর্মীর ফোন ধরার সুযোগ সে পায়নি। গভীর মনোযোগের ব্যাপারতো!! খটকা তাই শর্মীর মনে লাগতেই পারে। যদিও সে সেটা দূরে সরিয়া দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছিলো। কিন্তু নবম দিনে যখন ফারহানকে অনলাইনে দেখার পরও কোন রিপ্লাই পেলোনা তখন শর্মী প্রথম ধাক্কাটা খেলো। নারী হৃদয় বলে কথা। কুসুমের মতো নরম। ডিমটাকে পোচ করে ফেলার পর কুসুমটা যেমন শক্ত হয়ে যায় শর্মীর ক্ষেত্রেও বোধহয় তেমনটাই হলো। তাইতো তিনমাসে বেড রেস্ট শেষে সে যখন আবার নিজের পায়ে দাঁড়ালো ফারহানের দূরে সরে যাওয়াটা তখন তার কাছে স্পষ্ট রুপেই প্রকাশিত সত্য। এই তিনমাসে শর্মীর একের পর এক চেষ্টা কিভাবে যেন ব্যর্থ করে দিলো ছেলেটা। হয়তো ছেলে বলেি পেরেছে। শর্মী এতোকিছু জানেনা। জানতে চায়ও না। তবুও প্রথম প্রেম বলে কথা। রেশ তো রয়েই যায়। এর মাঝেও শর্মীর কেবল একটা জিনিসই জানতে ইচ্ছা করে। ছেলেটা তার সাথে এমন করলো কেন? এই উত্তরটা না জানা পর্যন্ত শর্মীর অস্বস্তি লাগে। শর্মী শুনেছিলো মানুষ মারা যাওয়ার পর নাকি সবকিছু দেখতে পারে। তারমানে শর্মী যদি মারা যায় এখন তাহলে সে জানতে পারবে ফারহান এখন কি করছে, কেন এমন করলো তার সাথে! কিউরিসিটি বড় ভয়ানক! শর্মী আরেকবার রুমেন আহমেদের বই খুলে দেখে।
সত্যিকারের ভালোবাসায় নাকি একজন আরেকজনের দৃষ্টি ব্যবহার করতে পারে। অপর প্রান্তে থাকা মানুষটার কর্মকান্ড তখন দূরে থেকেও নিজের চোখের মতো করে দেখা যায়।
এটুকু পড়েই থামে শর্মী। তার ভালোবাসা তো সত্যি! তাহলে সে কি দেখতে পারবে ফারহান এখন কি করছে!! নাহ লেখকটা একেবারেই যাচ্ছেতাই। যতসব আজগুবি কথাবার্তা!! তবে তাকে একটা পথ তো বেছে নিতেই হবে প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য। রুমেন আহমেদের উপর ভরসা করা ঠিক হবে নাকি লোখমুখে শুনে আসা মরে যাওয়ার গল্প অনুযায়ী সামনে আগানো উচিত হবে শর্মী ঠিক তা ভেবে পায়না।
শর্মী ঠিক কোনপথে এগিয়েছিলো তা আমাদের অজানা। তবে ফারহান নামক প্রশ্নটার উত্তর সে ঠিকঠাকই পেয়ে গিয়েছিলো।
-রুমেন আহমেদ