পোর্ট্রেট অফ এ সাইকো (২য় পর্ব)

জেরিন ইমিগ্রেশনে দাঁড়িয়ে আছে৷ হিথরো এয়ারপোর্টে৷ প্রায় পাঁচফুট আট ইঞ্চি উচ্চতা৷ কালো উলের ট্রাউজার, কালো গেঞ্জি উপরে ডেনিম জ্যাকেট আর কালো ট্রেইনার পরনে৷ চোখে একটা মানানসই সানগ্লাস৷ ওটা ছাড়িয়েও বাম চোখের ভ্রু’র কাছাকাছি একটা কাটাদাগের কিছুটা দেখা যাচ্ছে৷ একই অবস্থা বা চোখের নিচের দিকেও৷ বোঝা যায় দাগটা সম্প্রতি সৃষ্টি হয়েছে৷

ফ্লাই করার সময় থেকে ইমিগ্রেশনে আসার পর পর্যন্ত যতজনের দৃষ্টি জেরিনের উপর পড়েছে প্রায় ততজনই দ্বিতীয় বার চোখ ফিরে তাকিয়েছে৷ মেয়েটার নিঃশব্দ পা ফেলা, তামাটে ত্বক আর একহারা গড়নই বলে দেয় বাঘিণীর ক্ষিপ্রতা আর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব খেলা করছে চোখের মনিতে৷ চুল টা টাইট করে বেনী বাঁধা৷ একটাই৷ যেমনটা বাঁধে মিক্সমার্শালআর্ট বা থাই বক্সিং পটু খেলোয়াড়, ঠিক তেমনই৷

জেরিন কে সম্প্রতি আহব্বান জানানো হয়েছে৷ লন্ডনে৷ একটা সাইকো কেসের তদন্তে সাহায্য করবার জন্যে৷ কেননা লন্ডন গোয়েন্দা পুলিশ ধারণা করছেন আজ থেকে প্রায় চার সাড়েচির বছর আগে বাংলাদেশে ক্রাইম ওয়ার্ল্ড কাঁপিয়ে দিয়েছিল “আলতাফ দ্যা সাইকো” একেরপর এক খুন করেছিল সে সময় সাইকোটা৷ এক্স আর্মি পার্সন, হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমবেটে পটু লোকটা কিভাবে পাল্টে গিয়েছিল অসুস্থ একজন মানুষে সেটা এখনও ধারণার বাইরে৷
সময় ও সুযোগ বুঝে আলতাফ তার শিকারে ঝাঁপিয়ে পড়তো৷ প্রথমে ভিকটিম মেয়েটিকে মাথায় থান ইট দিয়ে আঘাত করতো, সেই মৃত প্রায় মেয়েটিকে তারপর……
এসব কিছুই তার মানসিকতার চরম অসুস্থতাই নির্দেশ করে৷
নিজের বুদ্ধিমত্তা কৌশল আর জ্ঞান কে পুঁজি করে প্রায় ধরে ফেলেছিল আলতাফ কে! একটুর জন্য হাত ফস্কে বেরিয়ে গেছে সাইকোটা৷ যাবার আগে জেরিন কে বলেছিল আবার ফিরে আসবো জেরিন, হয় তুমি না হয়….এরপরই অদৃশ্য হয়ে যায় লোকটা৷
জেরিন অন্য একটা কেইস এ জড়িয়ে পড়ে৷ আরমান চৌধুরীর কিডনেপ কেসে (প্রতিশোধ দ্রষ্টব্য)
কেঁচো খুঁড়তে যেয়ে সেই কেইসে বেড়িয়ে পড়ে সাপ, না না, সাপ নয়, পুরা তিমি মাছ৷

দেখা যায় বহু বছর আগে থাইল্যান্ড দূতাবাস এর একজন কর্মী নিহত হন, জেরিনের বাবা৷ আরমান চৌধুরীই সেই সময় দেশ থেকে ইনফরমেশান লিক করেন৷ যার কারণে এক্সোপোজ হয়ে যান জেরিনের বাবা৷ আর্মি ইন্টেলিজেন্স থেকে যিনি থাইল্যান্ডে গোপন মিশনে ছিলেন(প্রতিদ্বন্দ্বী)।

আরমান চৌধুরীকে জেরিন উদ্ধার করে ঠিকই৷ কিন্তু কিছু ডক্যুমেন্ট সেসময় তার হাতে আসে৷ যাতে দেখা যায় আরমান সহ দেশের বেশকিছু ক্ষমতাবান লোকেরাও থাই ক্রাইম সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত৷ এমনকি পুলিশের হোমড়া চোমড়া অনেকেই এর মধ্যে আছেন৷
জেরিনকে সেসময় সাসপেন্ড করা হয়! জেরিন কোন উপায় খুঁজে পায় না আরমান চৌধুরীকে সাজা দেবার৷ বরন্ঞ্চ আরমান চৌধুরী রাজনীতিতে প্রবেশের উপায় খুঁজতে থাকেন!
প্রতিশোধ নেবার জন্য আরমান চৌধুরীকে খুন করে ফেরারী হয় সে৷ সাসপেন্সশন চলছিল সে সময়৷

পালিয়ে চলে যায় কোলকাতা৷ উত্তর কোলকাতার এক ঘিঞ্জি ফ্লাটে উঠে পড়ে ছদ্মনামে৷ কথায় বলে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙে৷ জেরিনের অবস্থাও ঠিক তাই৷ সেখানে আনঅফিশিয়ালি অন্য একটা কেসে জড়িয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত হয়ে আসে সে৷ সেখানে ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষের সাথে হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমবেট ফাইটে দুটো পাঁজরের রিব ভাঙে, ডান পা প্রায় মচকে ছুটে আসার উপক্রম হয়৷ বাম চোখের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত আক্ষরিক অর্থেই ফেটে যায় প্রতিপক্ষের ফিস্টের আঘাতে৷ সেই সময়ে সেলাই দিতে যেয়ে ডাক্তার বলেছিলেন এভাবে, দাগ থেকে যাবে মিস…৷
জেরিন বলেছিল থাকুক৷ সমস্যা নেই!
বেশ কিছুদিন বেড রেস্টে ছিল জেরিন৷ হঠাৎই ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে হয়েছে৷ সবে ক্রাচ ছেড়ে এক্সারসাইজ করা শুরু করেছে ৷ এর পূর্বে অবশ্য তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এবং সাসপেনশন উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে৷

একদিন ৷ জেরিন ঘরে হালকা শারীরিক কসরত করছিল৷ নিজের ফিটনেস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আরকি৷ কলিং বেলের শব্দ হল৷

জেরিন দরজা খুলে দিয়ে দেখল অফিসিয়াল পোশাক পরে দু’জন লোক দাঁড়িয়ে আছেন৷ অবশ্যই তারা উর্ধ্বতন ৷ জেরিনকে হাত নেড়ে একজন বললেন ইটস ওকে৷ স্যালুট দরকার নেই! ভেতরে আসা যাবে?
জেরিন হেসে বলল অবশ্যই স্যার! আপনারা আমাকে ডেকে পাঠালেই তো পারতেন৷
আগের অফিসারটিই বললেন, সময় নেই৷ ইটস আর্জেন্ট, কাজেই আমরা চলে এলাম৷ তাছাড়া তোমার খোঁজ খবরও তো নেওয়া উচিৎ৷
জেরিন বলল আমি কৃতজ্ঞ স্যার৷ বসুন৷ কিছু চা নাস্তার ব্যবস্থা করি৷
অফিসার বললেন নো জেরিন৷ আমি জানি তুমি একা আছো৷ কাজেই এসব ঝামেলায় যাবার দরকার নেই৷
আমি আমার কথা গুলো সেরে নিই৷
জেরিন ওদের সামনে বসতে বসতে বলল ঠিক আছে স্যার!
অফিসারটি বললেন আরমান চৌধুরীর কেসের ব্যাপারটা দারুণ হ্যান্ডল করেছো তুমি৷ কিন্তু সেসময় তোমার সাসপেনশান এ যাওয়াটা আসলে ঠেকানো যায়নি! পরবর্তিতে আমরা তোমার ব্যাপারটা নিয়ে সক্রিয় হই৷ থাইল্যান্ড থেকে তোমার পাঠানো তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে বেশ কিছু রদবদলও হয়েছে৷ ধরপাকড়ও৷ দু’একজন আবার দেশও ছেড়েছে৷

জেরিন শুনছে৷ কিছু বলছে না৷ কি বলবে! আমাদের দেশে চুনোপুঁটিই সব সময় ধরা হয়৷ বেশি সমস্যা হলে শিং মাগুর, রাঘব বোয়াল সবসময়ই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়৷ একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে জেরিন বলল আমাকে কি করতে হবে স্যার বলেন?

অফিসার একটু ইতঃস্তত করে বললেন তোমার কি খেয়াল আছে জেরিন প্রায় চার বছর পূর্বে ইউনিফর্ম ধারী এক সাইকো কিলার এর কেস তুমি নিয়েছিলে! প্রায় সফল হতে হতেও পারলে না৷ হাত ফসকে বেরিয়ে গিয়েছিল সেই সাইকোটা৷

জেরিনের মুখভঙ্গি ইউনিফর্ম ধারী সাইকোর কথা শুনে মূহুর্তে শক্ত হয়ে গেল৷ সে বলল মনে আছে স্যার! আলতাফ দ্যা সাইকো৷ পুরা মাথাখারাপ কিন্ত অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটা লোক৷ বিকৃত মানসিকতা আর আর্মি স্কিল নিয়ে প্রায় অপ্রতিরোদ্ধ এক সাইকো স্যার! আমি সেদিন পড়েই মরে যেতাম সাততলা থেকে৷ ঐ সাইকোটা আমাকে বাঁচিয়েছিল৷ বলেছিল আবার ফিরে আসবে! কিন্তু হঠাৎ তার কথা উঠল কেন স্যার৷ তবে সে কি….

জেরিনের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিলেন তারপর বললেন আলতাফ ফিরে এসেছে জেরিন এবং আরও ধ্বংসাত্মক রূপে ফিরেছে!

জেরিন অবাক হয়ে বলল কিন্তু দেশের পত্রপত্রিকায় এমন কোন খবর তো স্যার দেখিনি৷

অফিসার বললেন বাংলাদেশে নয় জেরিন৷ সে ফিরে এসেছে অন্য জায়গায়৷ এবার সে তার পাগলামি শুরু করেছে লন্ডনে! লন্ডন পুলিশ হতাশ হয়ে আমাদের সাহায্য চাইছে৷ ওরা বলছে তুমি যেন তাদের সাহায্য করো৷ সেই মোতাবেক একটা চিঠিও এসেছে আমাদের কাছে৷ এবং অবশ্যই তা প্রপার চ্যানেল মেন্টেন করে৷

জেরিন বিস্ময় বোধ করলো৷ আলতাফ! লন্ডনে! সে বলল আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না স্যার৷ বাংলাদেশ এ সে গত চার সাড়ে চার বছর ধরে নিষ্ক্রিয়৷ এটা কনফার্ম৷ কিন্তু চারবছর পরে সক্রিয় হলো তো হলো, তাও একেবারে লন্ডনে৷ ইন্ডিয়া শ্রীলংকা কিংবা এশিয়ার কোন দেশ হলেও বলতাম সম্ভব৷ কিন্তু একেবারে লন্ডনে… ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না৷

আমরাও ঠিক বুঝতে পারছি না জেরিন৷ বেশকিছুদিন আগে ওখান থেকে একটা ইনক্যুয়ারি এসেছিল৷ ওরা বেশ কিছু দেশে বেশ কিছু সাইকোপ্যাথ দের ঘটনা স্টাডি করে এবং আমাদের সাথে কথা বলে৷ আমরা ইউনিফর্ম ধারী সেই আলতাফের ডিটেলিং পাঠাই৷ মানে কেইসে সেই সময়ে তুমি যে বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছিলে সেই মোতাবেক৷ ওরা সেটা নিয়ে একজন কে ট্রেস করার চেষ্টা চালায়৷ ফাঁদ পাতে৷ কিন্তু হারামী সাইকোটা সেই ফাঁদ কেঁটে বেরিয়ে তো যায়ই৷ উল্টো এজেন্টকে খুন করে রেপ করে চলে যায়৷
জেরিন বলল ওসব দেশে তো আর আমাদের মতো এলোমেলো অবস্থা না৷ ওখানে সব কিছুই অর্গানাইজড, ল’ এন্ড অর্ডার অনেক বেশি কার্যকরি, সিসি মিসি কত ক্যামেরা আর টেকনলজি… এরপরও ওরা হদিস বের করতে পারছে না!

জেরিনের অফিসার মুচকি হাসলেন বললেন তুমি জানো বোধকরি জেরিন লন্ডনে একটা যাদুঘর আছে৷ যে সব কেইসের সমাধান হয় নি ঐ সব কেইসের বা অপরাধির বিভিন্ন ক্রাইমে ব্যবহৃত জিনিসপত্র নানান এভিডেন্স এসব নিয়ে যাদুঘরটা৷ ওখানে সলভ না হওয়া কেসে গুলোর সমস্ত উপাদান গুলো রাখা হয়েছে৷ জ্যাক দ্যা রিপারের মতো খুনীকে ওরা ধরতে পারেনি৷ আরও আছে৷

বর্তমানে ঘটে যাওয়া এই ক্রাইমটা এনালাইসিস করে এরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছে যে চার বা সাড়ে চার বছর আগে ঘটে যাওয়া আলতাফের কেইসের সাথে ওটার অনেক মিল৷ সে কারণেই তোমাকে চেয়ে পাঠিয়েছে ওরা৷ ওরা ধারণা করছে সেই খুনিটাই ফিরে এসেছে!

জেরিন বলল কিন্তু স্যার এই হারামীটা ঐ খানে গেল কি করে? ইউ কে যাওয়া চারটিখানি কথা নয় কিন্তু স্যার৷ তাছাড়া অভিজ্ঞতাও একটা ফ্যাক্টর৷ ওসব যায়গায় চলে বেড়াতে হলে যথেষ্ট অভিজ্ঞতার প্রয়োজন!

অফিসার বললেন জেরিন তুমি কেন ভুলে যাচ্ছ আলতাফ এক্স আর্মি পার্সন৷ কমিশনড অফিসার ছিল৷ ওর স্পেশালিটি ছিল গেরিলা ওয়্যার আর ট্রাকিং৷ লুকিয়ে থাকায় ওস্তাদ ছিল ও৷

লন্ডন থেকে ইনক্যুয়ারি আসার পরে আমরা কিছুটা খোঁজখবর নিয়েছি৷ আগেও লন্ডন গিয়েছিল আলতাফ৷ কোন একটা ট্রেনিং বা ওমন কিছু তে৷ আর্মিওয়ালারা শুধু এটুকই বলেছে৷ আসলে এর বেশি ওরাও বলতে পারবে না৷ অনেক ধরণের রুলস এন্ড রেস্ট্রিকশান মানতে হয় তাদের৷ হয়তো আলতাফ সম্পর্কে ওরা কখনই ঝেড়ে কাশবে না জেরিন৷

তাছাড়া দেখো , ওর নামও কিন্তু আলতাফ নয়৷ সামথিং সোলায়মান ওর নাম৷ কিন্তু রিপোর্টে দু’একবার উল্লেখ করা ছাড়া সব জায়গায়ই কিন্তু আলতাফই লিখেছো৷ তারমানে কি দাঁড়ায়? মানে দাঁড়ায় সাইকো’র আলতাফ পরিচয়টাই তুমি খেয়াল রেখেছো, এক্স আর্মি পার্সনের নয়৷

জেরিন বলল বুঝলাম স্যার! কিন্তু ও হচ্ছে ঠান্ডা মাথার ধুরন্ধর এক অসুস্থ লোক৷ গোটা ব্যাপারটাই ওর কাছে একটা খেলা৷ আর বিকৃত রুচি মেটানোর ব্যাপার৷ লো-প্রোফাইল মেয়েদের প্রথমে মারতো৷ গোপিবাগের ঘটনার পর থেকে সে হাই প্রোফাইল প্রসদের পেছনে পড়ে৷ মানে তার টেস্ট পরিবর্তিত হয়৷ এরপর সে আমার পেছনে লাগে৷ তারমানে আমার মতো মেয়েরাও এখন তার হাত থেকে নিরাপদ নয়৷ আমরা সে সময়ে যে জিনিসটা করতে পেরেছি , সেটা হল তার পরিচয়৷ তার পরিচয়টা এক্সপোজ করতে পারার কারণেই সে এদেশ থেকে পিঠটান দিয়েছে৷ কিন্তু ওখানে পৌঁছলো কেমন করে৷ আর্মিতে থাকাকালীন ও যখন লন্ডনে যায় সে সময়কার রেকর্ড কি যোগাড় করা যাবে স্যার! ওখানে কোথায় তখন থেকেছিল কার সাথে কথা বলেছিল কাদের সাথে চলেছিল সেটা বের করতে পারলে অনেক কিছুই সহজ হয়ে যাবে৷ মানুষ একটা প্যাটার্নে চলে স্যার৷ সেই প্যাটার্ণ সাধারণত ভাঙে না৷ তবে….
অফিসার বললেন তবে কি জেরিন?
জেরিন বলল তবে স্যার যে প্যাট্যার্ণ ভাঙতে পারে তার চেয়ে দুর্ধর্ষ মানুষ আর নেই৷ ওমন মানুষকে ট্রেস করা খজর মাঝে সুঁই খোজার সামিল৷ আলতাফ কে লন্ডনে খোঁজা মানে খড়ে সুঁই খোঁজা!
এনিওয়ে ,আমাকে ওরা কখন যেতে বলেছে স্যার? মানে আপনারা কবে ছাড়বেন আমায়?

অফিসার বললেন ঠিক অফিসিয়ালি তোমাকে আমরা ছাড়বো না৷ আনঅফিসিয়াল হবে ব্যাপারটা৷ তোমাকে আমরা রিকভারির জন্য ছুটি দিয়ে লন্ডনে সেন্ড করবো৷ ওখানে তুমি লন্ডন পুলিশের পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে এবং কেবলমাত্র এই আলতাফ কেসের ব্যাপারেই ৷ তদন্দকালীন সময়ে শুধুই তোমার পরামর্শ নেওয়া হবে৷ প্রয়োজনে ফিল্ড ভিজিট করতে দিবে ওরা৷ ওদের একজন ভলান্টিয়ার থাকবে তোমার সাথে৷ সবসময়৷ আর তুমি আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবে না, কোন অবস্থাতেই না৷

জেরিন হেসে ফেলল৷ বলল এইটা তো স্যার খাঁচায় করে ফার্মের মুরগী নেবার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ালো৷ আমি তারপরও মেনে নিলাম আপনাদের কথা৷
অফিসার স্রাগ করে বললেন কিছু করার নেই জেরিন৷ উর্ধ্বতন এমনিতেই গদগদ হয়ে আছেন! উনারা এই ডাকাটাকে অত্যন্ত সন্মানের চোখে দেখছেন৷ উনাদের কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে যাবার জন্য উদগ্রিব ছিলেন কিন্তু লন্ডন পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন হয় জেরিন নতুবা কেউ নয়৷ কাজেই … বুঝতে পারছ৷

জেরিন বুঝতে পারছে আসলে লন্ডন পুলিশ কর্তৃপক্ষ আসলে সাহায্য চাইছে না৷ টোপ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে৷ ইমিগ্রেশান পার হয়ে সে বুঝেছিল তার ধারণাই ঠিক৷ কাজেই জেরিন একটা শর্ত জুড়ে দিল, স্যার ওদের শর্তের মতো আমারও একটা শর্ত আছে৷ যদি ওরা সেটা মানে তাহলে আমি আছি না হলে নাই৷
অফিসার মুচকি হেসে বললেন এ কথাটাই আমি আশা করছিলাম তোমার কাছ থেকে৷ বল তোমার কি শর্ত?
জেরিন বলল আমাকে ঘন্টা হিসেবে ওদের পে করতে হবে স্যার৷ কনসালটেন্সি’র জন্য৷ আমার রেঙ্কের ওখানকার পুলিশ অফিসার কে যত পে করা হয় তার দ্বিগুণ হতে হবে অংকটা৷ কেননা আমি এদেশ থেকে ওদের ওখানে গেস্ট হিসেবে যাচ্ছি৷
অফিসার হেসে বলললেন দ্যাটস দ্যা স্পিরিট জেরিন৷ আমি আজই কথা বলে তোমাকে জানাব৷ জেরিন হেসে বলল ওকে স্যার৷ তাহলে আমি যে কোন সময় যাবার জন্য তৈরি৷

হপ্তা দশদিনের মধ্যে সব কাগজপত্র রেডি হয়েগেল জেরিনের৷ ওরা জেরিনের শর্ত মেনে নিয়েছে৷ শুধু তাই নয় অফিসার আরেকটা শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন ওটার সাথে৷ জেরিনের পা, ভাঙা রিব চোখের উপরের কাটা দাগ সহ যাবতীয় শারীরিক সমস্যা গুলোর ডাক্তারী সমাধানও তারা করে দিবে৷
অফিসার যাবার আগের দিন আবার জেরিন কে ফোন করলেন৷ বললেন শিবলি (বন পাহাড়ীর রহস্যের গোয়েন্দা) বিকেলে তোমার সাথে দেখা করতে আসবে৷ ওখানে তার পরিচিত বিশ্বস্ত একজন লোক আছে৷ নাম ঠিকানা দিয়ে দিবে৷ সাথে একটা কোডও৷ প্রয়োজনে তুমি সেটা ব্যবহার করতে পারবে৷ জেরিন বলল ঠিক আছে স্যার! অফিসার বললেন বেস্ট অফ লাক মাই ডিয়ার লেডি৷ নিরাপদে ফিরে এস৷ জেরিন বলল ঠিকআছে স্যার৷ দেখি আলতাফকে ধরতে পারি নাকি! দোয়া করবেন৷
হিথ্রো ইমিগ্রেশনে একটা লাইনে দাঁড়ালো জেরিন৷ ওর সাথে তেমন কিছু নাই৷ হঠাৎ সিক্যুরিটি অফিসার একজন কে এগিয়ে আসতে দেখল জেরিন৷ ওর দিকে৷
মেয়েটি এসেই ব্রিটিশ টানে বলল তুমি মিস জেরিন? ব্যাঙল্যাদ্যাস থেকে? জেরিন মাথা নাড়ল৷
মহিলা বলল তাহলে তুমি আমার সাথে আস৷ তোমার ম্যাডিক্যাল এবং ইমিগ্রেশানের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
মেয়েটা জেরিনের পাশেপাশে এগুচ্ছে৷ ওর হাতে একটা পত্রিকা৷ ইভিনিং এডিশান৷ জেরিন চোস্ত ইংরেজীতে বলল ওটা দেখতে পারি? মেয়েটা মিষ্টি হেসে বলল অফকোর্স৷ তারপর বলল বাইদ্যা ওয়ে তোমার ইংরেজীতো দারুণ! একেবারে ব্রিটিশ উচ্চারণ৷ জেরিন বলল বাবার কাছে শিখেছিলাম উচ্চারণ টা!

হাঁটতে হাঁটতে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছে জেরিণ৷ তৃতীয় পৃষ্ঠার কোনার দিকে একটা খবর আর নিজের ছবি দেখে কিছুটা চমকে উঠল সে৷ খবরে বলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে সাইকো বিশেষজ্ঞ আনার কি কোন প্রয়োজন আছে? তাও লেডি ডিটেক্টিভ৷ খবরের পরতে পরতে শ্লেষৈর আভাষ৷ খবরটা দেখেই বুঝতে পারল জেরিন এটা হল তার আগমন বার্তা ঘোষণা করা৷ যেন সাইকোটার চোখে পড়ে৷ তারমানে যা চিন্তা করেছিল সে, এদেশের গোয়েন্দা কিংবা পুলিশ সাহায্য চাইতে নয় তাকে এনেছে ফাঁদের টোপ হিসেবে৷ ওরা জানে জেরিন এসেছে এ খবর পেলেই আলতাফ আবার গর্ত থেকে বেরুবে৷ আর সেই সময়ে ওরা আলতাফকে ধরার চেষ্টা করবে৷
জেরিন মনে মনে বলল ওকে৷ লেটস প্লে দ্যা গেইম!

(চলবে)

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *