পোট্রেট অফ এ সাইকো (৭ম পর্ব)

চট্টগ্রামে এক অন্ধকার রাতে রক্তাক্ত অবস্থায় শওকত কে উদ্ধার করেছিলেন আরমান সাহেব৷ জেরিনের হাতে নিহত হবার পূর্ব পর্যন্ত শওকত আরমান সাহেবের সাথেই ছিল৷ ছায়ার মতোন৷ আরমান সাহেব কখনই শওকতের অতীত সম্পর্কে জানতে চাননি৷ শওকতও কখনও আরমান সাহেব কে কোন কাজে কোন প্রশ্ন করেনি৷

শওকত সুস্থ হলে তিনি শুধু প্রশ্ন করেছিলেন এখন কি করবে? শওকত কিছু বলেনি৷ উদাস হয়ে তাকিয়ে ছিল আকাশের দিকে৷
আরমান আবার প্রশ্ন করেছিলেন কি কাজ পার?
শওকত বলেছিল গাড়ি চালাইতে পারি আর মানুষ মারতে!
আরমান সাহেব হেসে বলেছিলেন শেষ যে কথা বললা সেইডাতো মারাত্মক৷ আমি যদি কইয়া দেই কাউরে৷
শওকত আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছিল স্যার আমি একটা পিশাচ আর আপনেও৷ কাউয়ার মাংশ কাউয়া খায় হুনছেন!
আরমান সাহেব হেসে বলেছিলেন আমার গাড়ির স্টিয়ারিং ধরো আর সাথে থাক৷ শওকত আর কোন প্রশ্ন করেনি৷ আরমান সাহেব নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করতেন শওকত কে৷ শওকতও প্রভুভক্ত কুকুরের মতো তার প্রতিদান দিয়েছে৷
ফার্ম হাউজে যেদিন আরমান নিহত হন সেদিন দুর্ভাগ্যক্রমে শওকত ওনার সাথে ছিল না৷ মৃত্যুর পূর্বে আরমান শওকতের মোবাইলে একটা মেসেজ পাঠান৷ প্রথমে শওকত বুঝে নাই মেসেজের অর্থ কি৷ আরমান সাহেবের মৃত্যুর খবর পাবার পর সে বুঝতে পারে জেরিনই উনার হত্যাকারী৷
কোন প্রামণ অবশ্য কেউ করতে পারেনি৷ এই ব্যাপারটা জানত শওকত, জেরিন আর জেরিন কে সাহায্যকারী ফিরোজ৷
পুলিশ ও গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্ট ব্যাপারটা নিয়ে কোন উচ্চবাচ্চ করেনি৷ আরমান মারা যাবার পর শওকতের একটাই টার্গেট জেরিনের উপর শোধ তোলা৷
কিন্তু জেরিন তো ফারার৷ ট্রেস খুঁজে পেল না শওকত৷ সে সময়ে সুলতান নামের এক লোকের কাছে গেল শওকত৷ উনি ছিলেন আরমান সারেবের উপদেষ্টা৷ সুলতান সাহেব আগে ফিল্ডে কাজ করতেন৷ ফ্রি এজেন্ট হিসেবে৷ ক্ষমতায়ন জিনিসটা তিনি খুব ভাল বুঝতেন৷ তিন গুলি খেয়েও যখন তিনি বেঁচে যান তখন নিজেকে ফিল্ড থেকে উঠিয়ে নিয়ে অন্তরীন করে ফেলেন৷ এদেশের সকল পলিটিক্যাল হর্তাকর্তা ব্লাকমানির মালিক সহ ইন্ড্রাস্টিয়ালিস্ট অন্ততঃ যাদের কালো ব্যবসা আছে, সবাই কোন না কোন সময়ে সুলতান সাহেবের কাছে ধরনা দিয়েছেন৷ হাসান নামের অতি বুদ্ধিমান এক ছেলের কাছে তার পরিচয় ফাঁস হয়ে পড়ে৷ সেই ছেলেটাই তাকে তিনতিনটে গুলি করে পুলিশের কাছে ধরা দেয়৷ অসাধারণ বুদ্ধিমান আর এনালাইসিস এর ক্ষমতা ছিল হাসানের৷ পরে পুলিশে আত্মসমর্পণ করে এবং বিচারে হাসানের ফাঁসি হয়৷ সেই থেকে নিজেকে ফিল্ড থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন তিনি৷

শওকত আসে একদিন, তার কাছে৷
সুলতান সাহেব প্রশ্ন করেন খবর কি শওকত?
আরমান তো নাই ওখন কি করবা কিছু ঠিক করলা?
শওকত কে তিনি ভয় পান৷ আসলেই পান৷ আউলা মাথার মানুষ শওকত৷ শুনেছেন তার বাপে বিরাট মাথানষ্ট খুনী আছিল৷ এর কিছুটা ছাপ শওকতের মধ্যে রয়েছে৷ কি করতে কি করে ফেলে ঠিক নাই৷
আরমানের সাথে তার কেমন যেন একটা বন্ধন ছিল৷ প্রভুভক্ত কুত্তা হয়ে , আরমান মারা যাওয়ায় শওকত এখন আওয়ারা কুত্তা, তাও পাগল! শওকত কে দেখে সুলতান সাহেবের মাথায় ঝড়ের বেগে চিন্তা চলছে৷ এই কুত্তাকে কিভাবে ব্যবহার করবেন সেটা ভেবে৷
শওকত শুধু বলল জেরিন রে চাই৷ ওই লেডি গোয়েন্দারে দেন, আপনে যা বলবেন যে ভাবে বলবেন আপনের সাথে আছি৷
সুলতান বললেন হেই মা… তো ফারার৷ কুনু চীহ্ন নাইরে শওকত৷
শওকত বলে আপনাগো না এত ক্ষমতা৷ সামান্য একটা মাইয়া লোকেরে বাইর করতে পারবেন না!
সুলতান বললেন বস শওকত৷ তিনি তুমি থেকে তুই এ নেমে গেছেন৷ এটা একটা টেকনিক৷ এই শ্রেনীর মানুষগুলা তুই খুব প্রেফার করে৷ অভিজ্ঞতায় জানেন তিনি৷
শওকত বসল৷
তিনি বললেন দেখ ক্ষমতা আমাগো যেমন আছে তেমনি জেরিনের পার্টিরও আছে৷
শওকত বলল ফারার মাইনসের আবার পার্টি কি?
সুলতান সাহেব বললেন উত্তেজিত হইস না৷ পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ এইসবে যেমন আমাগো লোক আছে তেমনি দেশদরদী আর সিস্টেমরে ঠিক করণের লাইগা মরণ কামড় দেওনেরও লোক আছে৷ বুঝলি৷
ওরা জেরিনরে প্রোটেকশান দিতাছে৷ ইন্টেলিজেন্স বুঝস! হেই ইন্টেলিজেন্স হইল এইদেশের এলিট একখান গ্রুপ৷ দেশপাগলা ঐ গুলা৷ হেরা কেমনে বাছাই হয় কে কে আছে এই গুলা জানা দুষ্কর৷ আবার হেগো পাওয়ারও আছে৷
পাওয়ার বুঝস, পাওয়ার? দেশের অচেনা একটা গোষ্ঠি এরা৷ কিন্তুক দেশপাগলা৷ তর আমার সবার মাইঝে এরা আছে মাগার বুঝার পারবি না৷ হেরা আমাগো পেছন লাগছে৷ আমাগো এজেন্টরা এখন নীরব আছে৷ দেখলি না জেরিন নাই কিন্তুক শিবলি নামের একপোলা গোটা পাহাড়ের নেটওয়ার্ক তছনছ করে দিছে। হেরা সবাই আছে জেরিনের পিছনে আর হেগো পিছনে আছে জেরিন৷ তার বাপে এক ফাইল তৈরী কইরা গেছিল৷ হেইডা এখন আমাগো মাথা ব্যথা৷
শওকত বলল হেইডা তো অনেক আগের ঘটনা৷ আমি যতদূর জানি সিন্ডিকেট অখন বদলাইছে৷
সুলতান সাহেব বললেন আরে বেকুব ফাইলে যাগো নাম আছে হেরা অখন সিন্ডিকেটের মাথা৷ জেরিনের ফাইল ইন্টেলিজেন্সের হাতে পড়লে সব ধরা খাইবো৷ আর হেরা আইন মাইনের ধারাধারে না৷ একএকটা কইরা ধরবো আর খায়া ফেলব৷ আরমান যায় নাই! তোর বসে তো শ্যাষ৷ প্রশাসন নীরব ক্যান? আরমান তো শেষ দিকে রাজনীতিতে নামছিল৷ বাগানবাড়ীতে মরল ক্যামনে! গ্যাস সিলিন্ডার বাস্টু হইয়া!
শওকত বলল অত কিছু বুঝিনা সুলতান সাহেব৷ যে যাই কইক জেরিন স্যারেরে মারছে৷ আমি জেরিন রে মারুম৷ সোজা কতা৷ খোঁজ পাইলে জানাইবেন৷
সুলতান সাহেব চিন্তিত হয়ে শওকতের দিকে তাকালেন৷ শওকত উঠে চলে গেল৷
….

দীর্ঘ চার সাড়ে চার বছর পর জেরিনের খোঁজ পাওয়া গেল৷ থাইল্যান্ডে লংকাকান্ড বাঁধিয়ে সে দেশে ফেরৎ আসল৷ থাইল্যান্ডে সিন্ডিকেটের মাথা কেটে দিয়ে এসেছে দুর্দান্ত এই লেডি গোয়েন্দা৷ বলতে গেলে প্রায় একা৷ সিন্ডিকেটের থাইল্যান্ড অংশ আর বাংলাদেশের অনেকে গা ঢাকা দিল৷ জেরিন এখন তাদের জন্য এক মৃত্যু ফাঁদ যেন!
এই দীর্ঘ চার সাড়েচার বছর ধরে শওকত সুলতান সাহেবের সাথে কাজ করলো৷
জেরিন যেদিন লন্ডন যায় তার হপ্তা খানেক আগে সুলতান সাহেব খবর পেলেন কি একখান সাইকো কেসে উপদেষ্টা হিসেবে জেরিন লন্ডন যাবে৷
ডাক পড়ল শওকতের৷
শওকত আবার সুলতান সাহেবের সামনে বসে৷
ভনিতা না করে শওকতরে বললেন তোর শিকারের খোঁজ পাইছিরে পাগলা!
চকিতে শওকতের চোখ গুলো শিকারী বাজের মতো তীক্ষ্ম হয়ে উঠল৷ কান খাড়া হল চিত্রল হরিণের মতোন৷
একটা শব্দই উচ্চারণ করলো শওকত
কোথায়?
সুলতান সাহেব বললেন আরে বেটা আস্তে৷ আগে পুরা কথা শোন তারপরে ব্যবস্থা নিবি৷
দেশে তুই কিছু করার পারবিনা৷ আহত হয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেছে৷ জানস তো থাইল্যান্ডে যে ধরপাকড় হল, সেইডার পিছনে ছিল এই শনিডা! মা…র বিলাইএর মতোন নয়খান জান মনে হয়!
হাসপাতালের ভিতরে বাইরে সেইরকম প্রোটেকশান৷ এইখানে কিছুই করতে পারবি না৷ তয় লন্ডনে অন্য ব্যাপার৷ এত সিকুরিটি থাকবো না৷
শওকত চুপ করে আছে৷ সে পুরোটা শুনতে চায়৷
সুলতান সাহেব শওকত কে প্রশ্ন করলেন
ইংরাজী বুঝস?
জি
পাসপোর্ট আছে?
জি
লন্ডন চিনস?
জি…
সুলতান সাহেব অবাক হলেন, বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলেন লন্ডন চিনস ক্যামনে? তুই তো গাড়ি চালাইতি আরমানের?
শওকত বলল স্যারের সাথে বেশক’বার গেছি বিদেশে৷ খালি চিনিনা ভাল কইরা চিনি৷
সুলতান সাহেব বললেন মারছস৷ তুইও তাইলে লন্ডন চিনস?
জি ভাল করে৷ কবে যেতে হবে বলেন?
সুলতান সাহেব মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললেন ধর কাইল!
টিকেটের ব্যবস্থা করে দেন চলে যাব৷
আরে বলদ, শওকত কে বললেন ভিসামিসা ছাড়া যাবি ক্যামনে?
ভিসা লাগান আছে৷ আপনে ব্যবস্থা করেন৷
ঐত্তেরি! ভিসা আবার লাগাইলি কোনসময়৷
ক্যান আপনে জানেন না গতমাসেই তো লন্ডন গেছি৷ স্যারের পরিবার রে ঐ খানে দিয়া আসলাম৷ দু’ই বচ্চরের ভিজিট ভিসা লাগান হইছে !
তুই ওখনও হের পরিবারের লগে আছস?
শওকত বলল থাকমু না! স্যারের পরিবাররে আমিই তো দেইখা রাখি৷
সুলতান বললেন যাহ এইটা তো আমার মাথায় ছিল না৷ আইচ্চা যাউক পরশু তোর ফ্লাইট৷ টিকেট টেকা সব ম্যানেজ করতেছি৷ ওখন বাড়িত যা সব গোছা!
শওকত বলল আমি রেডি৷ আপনি ব্যবস্থা করেন৷
শওকত যাবার আগে বলল সুলতান সাহেব আরমান স্যার রাস্তা থেইকা আমারে তুলে আনছে৷ গাড়ী আর পাহারাদারীর ফাঁকে ফাঁকে আমারে অনেক কিছুই শিখাইছে৷ আমি পিশাচের মতোন মানুষ৷ হেও ওই রকম ছিল৷
জেরিন রে মারনের লাইগা আমি মরতে পারি৷ বুঝেন! ত্বয় মরণ হের সহজে হইবো না…
ঠাস করে উঠে গেল শওকত৷ বলল ব্যবস্থা করেন৷ আমি যাইতেছি..
….
শওকত কিংবা সুলতান সাহেব কেউ ই জানেন না লন্ডনে বেশ ক’মাস আগে থেকেই একটা ছক কষা হয়েছে৷ সেই মোতাবেক কাজ চলছে৷ জেরিনের উপর শোধ তুলতে বাংলাদেশ থেকে শওকত আসছে সেটাও তারা জানত না৷
শওকত ফ্লাইটে উঠার পরে সেটা জানাল দেশে থাকা সুলতান সাহেবের এক এজেন্ট৷
সুলতান সাহেবের কাছে ফোন আসলো প্রায় তৎক্ষনাৎ৷
ওপাশ থেকে বলা হল আরমানের মাথা পাগল কুত্তারে এইখানে পাঠানোর কি মানে?
সুলতান সাহেব বললেন কুত্তা পাগলা হের লাইগাইতো পাঠাইতেছি৷ তারে কামড় দেবার ব্যাবস্থা করে দেও৷ তোমরা দূরে থাক৷ সমস্যা হইলে হেরা সবাই কুত্তা নিধন করবো৷ তোমাগো উপরে কোন ইনক্যুয়ারি হইবো না৷
ত্বয় চেষ্টা করবা কোন রকমে যদি ফাইলটা উদ্ধার করা যায়৷ বলে তিনি ফোন রেখে দিলেন৷
শওকত জেরিনের পূর্বেই লন্ডন প্রবেশ করল৷

করাপশন কম আর বেশী, সবজায়গায়ই আছে৷ তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশের করাপশন মোটাদাগে প্রকাশ পায়, উন্নত বিশ্বের করাপশন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হয়৷
আলতাফের মতো একটা সাইকো কিভাবে লন্ডন গেল সেটা খাতিয়ে দেখা হল না যখন সিরিয়াল কিলিং শুরু হয়৷ খুনের ধরণ ধারণ এনালাইসিস ও বিশ্লেষণ করে যখন ওরা বুঝতে পারল এই কিলিং এর সাথে আলতাফ দ্যা সাইকোর কিলিং এ অনেক মিল তখন তারা নির্নয় করলো এ কেইসে সেই লেডি কপ কে সাহায্যের জন্য ডাকতে হবে৷ বাংলাদেশ থেকে আলতাফের কেইসের ফাইল তৎসংযুক্ত সকল ডক্যুমেন্ট চলে গেল সাতসমুদ্র তের নদী পার হয়ে৷ সিদ্ধান্ত হল খুঁটিনাটি সব কিছু জানতে হলে ,সাইকো লোকটাকে ধরতে হলে জেরিনের সাহায্য প্রয়োজন৷ বাংলাদেশ থেকে জেরিন কে পাঠানোর জন্য তলব করা হল৷ থাইল্যান্ড ফেরত জেরিন পুরো সেরে ওঠার আগেই রওয়ানা হল গ্রেটবৃটেন৷
ওখানকার গোয়েন্দা ডিপার্টমেন্ট অনেকের আঁতে ঘা লাগার মতই বিষয়টা৷ যাদের লাগল তাদের লাগাটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু সেদিন প্রাকটিস প্যাডে যারা জেরিন কে কাছ থেকে দেখল তারা বুঝতে পারল জেরিন এবং তাদের কাজকর্মে কোনো ফারাকই নেই৷ ভীনদেশী এই মেয়েটা ওদেরই মতো আইনের একজন লোক৷ নিজের জীবন বাজি রেখে যে লড়ছে৷ সত্যপ্রতিষ্ঠার জন্য৷ প্রায় সবাই ই জেরিনকে সেদিন থেকে নিজেদের একজন ভেবে নিল৷
সবাই ই? না সবাই নয়৷ কেউ কেউ ব্যতিক্রম৷ কেননা ওরা জেরিনের ফাইলটা চায়৷ লন্ডন বা বৃটেনের কোন কেউকেটার নাম যেন বাইরে না আসে৷

জেরিন আলতাফের একটা প্যাশন৷ ও জেরিন কে তার মতো করে ঘায়েল করতে চায়৷

শওকত জেরিন কে চায়৷ তার প্রতিশোধ মেটাবার জন্য

সুলতান চায় জেরিন জাহান্নামে যাক৷ শুধু ফাইলটা..

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর চতুর্থ পক্ষ৷ ওরা যেভাবেই হোক ফাইলটা চায়৷ এজন্য জেরিনকে প্লানমাফিক টেনে আনা লন্ডনে! ফাইলটা পেলে অনেকের মাথার উপর ছড়ি ঘুরানো যাবে৷

চতুর্থ পক্ষের কাছে জেরিন কে শেষ করা ব্যাপার না৷ কিন্তু সেটার পরবর্তি ফলাফল উল্টো হতে পারে ওরা জানে৷ ফাইলটা জনসমক্ষে এক্সপোজ হয়ে যাবে জানে৷ অন্ততঃ ইন্টেলিজেন্স এর তাই ধারণা৷
ওরা শওকত এর সাহায্যকারীদের যেমন মদত দিচ্ছে তেমনি নিকি কেও লাগিয়ে দিয়েছে জেরিনের পেছনে৷ এশিয়ান মেয়েরা কিংবা ছেলেরা অনেক আবেগী হয়৷ আবেগের বশে অনেক কিছু ওরা করে ফেলে৷ চতুর্থপক্ষ জানে৷ তাদের হিসেব প্রায় সফল হতে চলেছে৷ জেরিন নিকি কে বলেছে ওর কাছে একটা ডক্যুমেন্ট আছে! তারা অবশ্য বিশ্বাসও করছে না আবার ঠিক অবিশ্বাসও৷ তাদের কাছে ওটা একটা প্রবাবিলিটি৷ ওরা নিকিকে ভিজিট করবে বলে ঠিক করলো৷
উইলিয়ামের ডাকা পার্টিতে নিকি আর জেরিন যাবে৷ কোন ছুতোয় নিকি ফিরে আসবে একটু আগে৷

ওদের ভাগ্য খারাপ৷ আলতাফ নিকি কে টার্গেট করেছে৷ ওদের আগেই আলতাফ পৌঁছে গেল টার্গেটে৷
কাজেই ওরা যেয়ে পেল নিকি’র লাশ৷ সারাঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও ওরা জেরিনের ব্রেসলেটের ওই কাল পাথরটা পেল না৷ সামনের দরোজায় নাড়াচাড়ার আভাস পেয়ে পেছনদিকে ওরা বের হয়ে গেল৷
জেরিন পার্টি থেকে ফিরে এসেছে৷ মিঃ উইলয়াম নিজে এসে ওকে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছে৷ জেরিন ভাল করেই জানে নিকি কেন আগেই পার্টি থেকে চলে এসেছে৷ নিকি যেমন জেরিনকে চোখে রাখার জন্য চোখের ব্যবস্থা করেছিল ঠিক তেমনি জেরিনও ব্যবস্থা করেছিল কানের! নিকির কথা গুলো শুনবে বলে৷
দরোজা খুলেই জেরিন সতর্ক হয়ে গেল৷ সারাঘর লন্ডভন্ড৷ সতর্কতার সাথে প্রথমেই লিভিং রুম রেকি করলো জেরিন৷ তারপর ওর রুম৷ দোতলার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এলো জেরিন৷ নিকি’র শোবার ঘরেও কিছু নেই৷ বাথরুম থেকে শাওয়ারের জল পড়ার শব্দ হচ্ছে৷ এগিয়ে গেল সে৷ বাথটাব ঘিরে সিলোফেনের পর্দা সরাতেই নিকির লাশ দেখল সে৷ চোখ খোলা৷ সিলিংএর দিকে তাকিয়ে আছে৷ মাথার একপাশ কোন কিছুর আঘাতে থেতলে গেছে৷ বাথটাবের ওপাশে লিখা ওয়েল কাম জেরিন৷ লন্ডনে তোমাকে স্বাগতম!

(চলবে)

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *