পোট্রেট অফ এ সাইকো (৬ষ্ঠ পর্ব)

বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইটে উঠার পূর্বে মিরাজের সাথে কথা হয়েছে জেরিনের৷ মিরাজ আইটি স্পেশালিস্ট৷ দেখতে কলেজ পড়ুয়া ছেলের মতোন দেখায় কিন্তু টেকনোলজি সম্পর্কে অগাধ জ্ঞান৷

জেরিন কে মিরাজ বলেছিল , ম্যাম আপনি যে যাচ্ছেন , ওখানে আপনার যাবতীয় কল আপনার লোকেশান সব ট্রাক করা হবে৷ সেটা তো জানেন!
জেরিন বলেছিল তাই নাকি৷
মিরাজ সুন্দর করে হেসে বলেছিল জ্বী, হবে৷ কারণ ওখানে আপনি যাচ্ছেন তাদের পরামর্শক হিসেবে৷ এর আগে আপনার পুরো ফাইল আপনার সলভ আনসলভ কেস হিস্ট্রি সব ট্রাক করেছে ওরা৷ এবং ওরা ভাল করেই জানে আপনি অনেক সময় সিদ্ধান্ত নেন যেটা ঠিক আইন মাফিক হয় সে কথা বলা যাবে না৷
কাজেই ওরা সবসময়ে আপনাকে ট্রেস করবে বা চোখেচোখে রাখবে৷
জেরিন বলল হুমম তা তো ঠিকই৷
সেকারণে আপনার কাছে আমার আসা৷ আপনার কাজে আমাদের ওখানকার কাউকে প্রয়োজন হতে পারে৷ আপনাকে একটা ডিভাইস আমি দিয়ে দিচ্ছি৷ আপনার ট্যাব এ ভিপিএন সেট করে দিচ্ছি যাতে একান্ত প্রয়োজন পড়লে আপনি আমাদের কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারেন৷ এবং সেটা যাতে হয় আনট্রেসেবল৷
জেরিন বলল এসবের কি কোন দরকার আছে!
মিরাজ বলল আছে ম্যাম৷ যদি কোন সমস্যা হয় , যদি হয়, আপনার সাহায্যের প্রয়োজন হবে৷ সেক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করবেন৷
জেরিন কে একটা পেজার দিল মিরাজ৷
জেরিন বলল এটার তো আজকাল বেইল নাই! এইটা নিয়া লাভ কি!
মিরাজ বলল আছে ম্যাম৷ এটা আপডেট করা একটা ডিভাইস৷ আমরা এটার সার্কিটে কিছু আপগ্রেডেশান করেছি৷ এখানে একটা সিম লাগানো যায় এখন৷ আপনি ক্ষুদে বার্তা সেন্ড করতে পারবেন৷ এটা মেসেজ সেন্ট করবে একটা বিশেষ নাম্বারে৷ এনক্রিপটেড মেসেজ৷ যা ডিকোড করবো আমরা৷ মেশিনের একটা ল্যাঙ্গুয়েজ আছে জানেন তো৷ জিরো এবং ওয়ান৷ এটি কিছু জিরো এবং ওয়ান সেন্ড করবে৷ আমরা বাদবাকিটা বুঝে নিব৷
জেরিন বলল এতো মাথানষ্ট অবস্থা মিরাজ! আমি তো কিছুই বুঝিনি৷
মিরাজ হেসে বলল আপনার কিছু বুঝতে হবে না ম্যাম৷ তারপরও একটু ব্যাখ্যা করি৷ জটিলতা পরিহার করে৷
আপনি যখন মেইল পাঠান বা কল করেন তখন বিট গুলো জিরো ওয়ানে পরিবর্তিত হয় তারপর সেন্ড হয়৷ রিসিভার যন্ত্র সেটাকে আবার প্রয়োজন মতো পরিবর্তন করে৷ ভয়েস হলে ভয়েসে ফন্ট হলে ফন্টে৷ আপনার পাঠানো যন্ত্র তাই করবে৷ নেটওয়ার্কে অনেক সময় কিছু নষ্ট ডাটা প্যাকেট ঘুরে বেড়ায়৷ সেটা এমনই একটি নষ্ট প্যাকেটে পরিনত হবে৷ আমাদের পোগ্রাম এই নষ্ট প্যাকেট গুলো একত্রিত করে বিট গুলো উদ্ধার করবে৷ আমরা ম্যাসেজ পেয়ে যাব৷ সাধরণ নেটওয়ার্ক এটাকে একটা জাঙ্ক প্যাকেট মনে করবে৷ দ্যাটস ইট!

( পাঠক এটা আমার মনগড়া থিওরি৷ মিসিং প্যাকেট হিসেবে বিট পাঠানোর একটা সম্ভাবনার কথা বলছি, এভাবে পাঠানো যায় কি না জানি না৷ তবে থিওরিটিক্যালি যদি সম্ভব হয় তাহলে হয়তো সম্ভব)

জেরিন বলল ওসব ট্যাকনিকেল কথা বাদ দাও৷ সোজা কথা হলো এটা দিয়ে ম্যাসেজ পাঠানো যাবে আর তা কাউকে না জানিয়ে, ঠিক৷
মিরাজ বলল জ্বী, ঠিক৷ তাহলে হয়েছে৷
….

রাতের খাবারের পর জেরিন বাথরুমে গেল৷ ভাল ভাবে খেয়াল করলো ওখানে কোন হিডেন ক্যামেরা লাগানো আছে কি না৷ নিশ্চিত হয়ে তারপর ট্যাবের ভিপিএন অন করে ম্যামরি কার্ডের ছবি গুলো আপলোড করলো৷ গোসল করার নামে আগেই ট্যাবটা বাথরুমে চালান করে দিয়েছিল সে৷
পকেট থেকে পেজারটা বের করে কিছু নাম্বার পুট করলো সে৷ তারপর আবার ফিরে এলো৷ টাওয়েলের তলায় করে ট্যাবটা আবার ফেরৎ নিয়ে এল৷ জেরিন জানে গতরাতে নিকি স্পাই ক্যামেরায় তাকে পর্যবেক্ষণ করেছে৷ এখনই যে করছে না তার তো মানে নেই৷ জেরিন অবশ্য সেটা বুঝতে দেয়নি কাউকেই৷ দেখুক ওরা৷
….

নিকি”র কাছে কিছুক্ষণপর কল আসল৷ নিকি হ্যালো বলার পরপরই ওপাশ থেকে বলা হল তোমার ওখান থেকে একটু আগে কিছু ডাটা পাঠানো হয়েছে৷ তুমি কি করছো?
নিকি অপ্রস্তুত জবাব দিল আমি কি করবো৷ আমার সামনে যতক্ষণ ছিল ততক্ষণতো কিছুই করেনি৷ তাছাড়া আমি এখন ওকে ক্যামেরার সামনে দেখতে পাচ্ছি!
কি করছে তোমার অতিথি? ওপাশ থেকে প্রশ্ন করা হল৷
নিকি বলল রাতের এক্সারসাইজ৷
ওপাশ থেকে বলা হল ডাটা গুলো আমরা ধরার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না৷ এনক্রিপশান করা৷ পাঠানো হয়েছে ভিপিএন ব্যবহার করে৷ ওটা ভাঙতে পারলে আমরা উদ্ধার করতে পারবো হয়তো৷ নিকি খেয়াল রেখো, তোমার অতিথি’র কাছে একটা ফাইল আছে খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ ওটা নিয়ে থাইল্যান্ডে ম্যাসাকার করেছে সে৷ বাংলাদেশের অনেক হোমড়াচোমড়াদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখছে ওদের ইন্টেলিজেন্স৷ আমরা খবর পেয়েছি ঐ ফাইলটার জন্য লন্ডনে এসে পড়েছে তৃতীয় পক্ষ৷ সাথে উটকো ঝামেলা ঐ সাইকো টা৷ পরিস্থিতি কিন্তু ঘোলাটে৷ এজন্যই তোমাকে লাগানো হয়েছে৷ ওটা আমাদের চাই৷
গুডলাক বলে ফোনটা রেখে দিল ওপাশ থেকে৷
নিকি কিছু বলতে পারল না৷ আদতেই জেরিনের জন্য মনটা খারাপ হলো তার৷ মেয়েটার বাবা বহু পূর্বে একটা ফাইল জেরিন কে দিয়ে গিয়েছিল৷ সেই ফাইলে একটা সিন্ডিকেটের কিছু গোপন খবর আছে৷ ড্রাগ ও আর্মস ডিলিং এ বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, লন্ডন,ইন্ডিয়ার অনেক হোমড়াচোমড়াদের নাম বেরিয়ে আসতে পারে ঐ ফাইল থেকে৷ যারা এখন এদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত৷ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ি কিংবা অন্য পেশায় জড়িত৷ ইন্টেলিজেন্স চাচ্ছে এই ফাইল যেন জেরিন এক্সপোজ না করে৷ ওটা ভেতরে ভেতরে তারা পেতে চায় এবং সেই পার্সনদের ট্রেস করতে চায়৷
ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স কখনই চায় না ওদের কিছু মানুষের নাম জনসমক্ষে আসুক৷ সাইকো কেসে জেরিনকে এখানে আনার উদ্দেশ্য শুধু সাইকো ধরা নয়, অন্য কিছু৷ এবং এজন্য জেরিনের জীবনাবসান করতেও পিছ’পা হবে না ইন্টেলিজেন্স!
নিকি ফোনটা রেখে কিছুক্ষণের জন্য চুপ করে বসে থাকলো৷ জানালার বাইরে হলুদ থালার মতোন চাঁদ৷ আলোটা ফালি হয়ে জানালা গলে নিকি’র বিছানায় এসে পড়ছে৷
গত দুদিনেই নিকি বুঝে গেছে মেয়েটা আদ্যপান্ত সৎ আর দুর্ধ্বর্ষ৷ জেরিনের কাহিনী জানে নিকি৷ ইনফ্যাক্ট তাকে জানানো হয়েছে৷ থাইল্যান্ডে থাকাকালীন অবস্থায় দুর্ববৃত্তদের হাতে নিহত হন তিনি৷ স্থানীয় এক থাই বাসির বদান্যতায় জেরিন আর তার মা দেশে ফিরেছেন৷ তাও বহুদিন বনজঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে৷ বাংলাদেশে দৃঢ়হতার সাথে বেশকিছু কেইস সলভ করেছে জেরিন৷ রাজনৈতিক ঘোরপ্যাঁচে আটকে সাসপেন্ড পর্যন্ত হয়েছে৷ আরমান চৌধুরিকে মেরে ফেরারী হয়েছে। থাইল্যান্ডে একটা মেয়েকে বাঁচাতে সিন্ডিকেটের সাথে প্রায় একা লড়াই করেছে৷ কিছু ভাল আর বুদ্ধিদীপ্ত দেশপ্রেমিক মানুষের কারণে আবার দেশে ফিরে এসেছে সে৷ আরমান চৌধুরি সম্পর্কে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ দেশের ইন্টেলিজেন্সে দাখিল করেছে৷ কিন্তু পুরোনো ফাইলটা কোথায় সেটা উল্লেখ করেনি একবারও৷
জেরিনের অবর্তমানে দেশে ওর আবাসস্থলের প্রতিটি ইঞ্চি সার্চ করা হয়েছে৷ স্ক্যান করা হয়েছে৷ কিছুই পাওয়া যায় নি৷ এরপর ধারণা করা হয়েছে ফাইলটি সবসময়ে জেরিনের সাথেই থাকে৷ যখন যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই সে এক্সপোজ করছে৷ নিকিকে জানানো হয়েছে সাইকো কেসের উপদেষ্টা হিসেবে জেরিন আসছে৷ এটা পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগের কথা৷ ইন্টেলিজেন্স থেকে জানানো হয়েছে চেষ্টা করতে হবে ফাইলটা উদ্ধারের৷ যেভাবেই হোক৷ নিকি ডাবল এজেন্ট৷ পুলিশের চাকুরি করলেও তার নির্দেশ আসে অন্যজায়গা হতে৷ সে রুমানিয়ান বংশদ্ভূত৷ এখানে আছে৷ ওরা ধারণা করছে এই পরিচয়ে জেরিন তাকে বন্ধু মনে করবে৷
নিকি ভাবছে কি করবে… তখন দরজায় টোকা পড়ল৷ চমকে উঠল নিকি৷
কে? প্রশ্ন করলো সে৷
জেরিন বলল আমি ৷ ঘুম আসছে না নিকি৷ কফি চলবে নাকি!
নিকি বলল আসছি আমি৷

লিভিং রুমে জেরিন আর নিকি বসে৷ জেরিনের হাতে চা আর নিকির মগে কফি৷
দুজনে চুপচাপ মগে চুমুক দিচ্ছে৷
নিকি প্রশ্ন করল এখানকার কাজ শেষ হলে তুমি কি করবে?
জেরিন বলল ঠিক করিনি৷ তবে দেশে ফিরে যেয়ে চাকুরি ছেড়ে দিবো ভাবছি৷
নিকি চমকে উঠল৷
তারপর বলল তোমার এত নামডাক বুদ্ধিমতী তুমি, দারুণ প্যাঁচানো কিছু কেইস সলভ করেছো৷ প্রমোশন পেয়ে আরও উপরে যাবার কথা তোমার৷ চাকুরি ছাড়বে কোন দুঃখে!
জেরিন বলল ফোর্সে নানান ঝামেলা৷ উপরওয়ালাদের কথায় চলতে হয়৷ কাজের স্বাধীনতা নেই৷ ক্রিমিনাল রা পার পেয়ে যায়৷ তাই চিন্তা করছি চাকুরি আর করবো না!
নিকি হতাশামাখা দৃষ্টিতে জেরিনের দিকে তাকালো৷ মনে মনে বলল এই মেয়ের কি হবে! চাকুরি ছাড়া মানে ত মেয়েটার প্রটেকশন উঠে যাওয়া! তখন তো….
জেরিন যেন নিকির মনের কথা ধরতে পারল৷ নিকি কে চমকে দিয়ে বলল তুমি চিন্তা করছো আমার প্রটেকশান থাকবে না৷ তাই না?
নিকি মিছেমিছি বলল তা না৷ মিথ্যে করেই বলল৷
নিকি কে অবাক করে দিয়ে জেরিন বলল আমার কাছে একটা ফাইল আছে নিকি৷ বহু পুরোনো একটা সিন্ডিকেটের ফাইল৷ এটার পেছনে পড়েছে সবাই৷ থাইল্যান্ডে কিংবা আমার দেশে কিছু মানুষকে ট্রেস করা সম্ভব হয়েছে৷ কিছু মানুষকে ধরাও হয়েছে৷ মিডিয়াতে সেটা ফ্লাশ করা হয়নি৷ সিন্ডিকেটের একজন কে বাংলাদেশে আমি শেষ করেছি৷ থাইল্যান্ডেও ৷ আপাতত সিন্ডিকেট কিছুটা স্তিমিত হয়ে আছে৷ তুমি কি জান এই সিন্ডিকেটের একটা অংশ তোমাদের দেশেও সক্রিয়?
নিকি জেরিনের কথায় চমকে উঠল৷ মেয়েটা দেখি সব বলে দিচ্ছে তাকে! ব্যাপার কি?
জেরিন বলছে কি জানো নিকি তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি আমার মতোনই একজন৷ তাই তোমাকে বলছি৷ এই ফাইলের কয়েকটা কপি করা আছে৷ মূল মাইক্রোফিল্ম আমি নষ্ট
করে দিয়েছি৷ এমন ভাবে সেটা কপি করা যেটা আমি ছাড়া আর কেউ ডিকোড করতে পারবে না৷ কখনই না!

নিকি আরও অবাক হল৷ বলল তাহলে তোমার সেক্রেট আমাকে বলছো কেন? আমি তো এক্সপোজ করে দিতে পারি ব্যাপারটা! আমি তো গুপ্তচরও হতে পারি!
জেরিন বলল তুমি আমার মতোনই পোঢ় খাওয়া৷ ছিনিয়ে নিবে কৌশলে নিবে কিংবা আমাকে মেরে নিবে৷ কিন্তু বলে দিলে কখনই তা প্রকাশ করবে না৷ জীবন গেলেও না৷ এই বিশ্বাস থেকেই তোমাকে বলা৷

জেরিন নিজের হাতের কালো পাথরের ব্রেসলেট থেকে একটা পাথর টানমেরে উঠিয়ে নিল৷ তারপর সেটা নিকির হাতে দিল৷ বলল এর মাঝে একটা মেমরি কার্ড আছে৷ ওটাতে গোপন ফাইলটা আছে৷ শব্দের অক্ষর লিখা আছে পাঁচ চার তিন চার পাঁচ হিসেবে৷ অর্থাৎ শব্দ গুলো পড়ার সময় মনে রাখতে হবে যে শব্দ লিখা আছে এর প্রথম অক্ষর ই হলে পড়তে হবে এ৷ এভাবে৷
এখানে লন্ডনের সিন্ডিকেটের পুরানো কিছু মানুষের নাম আছে৷ মানে যাদের নাম বাবা জোগাড় করতে পেরেছিলেন৷ তাদের৷ আর তারা বেঁচে থাকলে সিন্ডিকেটের কান ধরে টানা যাবে৷ কান টানলে মাথা তো আসবেই!
নিকি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো তু..তুমি আমাকে এটা দিয়ে দিলে! কিছু না জেনেই!
জেরিন কথার উত্তর না দিয়ে বলল ঘুম পাচ্ছে৷ আমার কিছু হলে তুমি অসমাপ্ত কাজটা শেষ করো৷
বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেল সে৷ নিকি অবাক হয়ে বসে রইল! বিশ্বাস করতে পারছে না ,
কিছুতেই!
দশ পনেরো মিনিট পরে নিকি উঠে নিজের রুমে গেল৷ ল্যাপটপ অন করে দেখল জেরিন ঘুমাচ্ছে৷
সাথে সাথে ফোন ঘুরাল সে৷ ওপাশ থেকে বলা হলো কি বলবে বলো!
নিকি বলল ফাইল টা আমার কাছে এখন৷
গম্ভীর কন্ঠও অবাক হয়ে বলল ফাইল মানে, কোন ফাইল, কি ফাইল!
নিকি বলল জেরিনের বাবার ফাইল টা’র লন্ডন অংশ৷
লোকটা বলল জোক করছো নাকি ড্রাগ নিয়েছ?
নিকি বলল কোনটাই না৷ সত্যি বলছি৷ সে বিশ্বাস করে আমাকে দিল৷ বলল ওর কিছু হলে যেন আমি দেখি৷ ওর কাজ টা শেষ করি৷
ওপাশ থেকে বলল ঠিক আছে আমরা কাল ওটা নিতে আসব৷ সন্ধ্যায়৷
নিকি বলল ওকে৷

নিকি কে জেরিন ব্লাফ দিয়েছে৷ অবশ্যই দিয়েছে৷ ইচ্ছে করেই৷ জেরিন জানে তার প্রতিটি জিনিস ঘরের মধ্যে চেক করা হয়েছে৷ তারা যখন ছিল না তখন করা হয়েছে৷ বাথরুমে যেয়ে ভিপিএন অন করে সে আসলে কোন কাজের ছবি পাঠায় নি৷ ওর বিভিন্ন সময়ে তোলা কিছু ছবি একটা ফেইক মেইলে মেইল করেছে৷ জেরিন জানে ভিপিএন এর সিক্যুরিটি হ্যাক করা ব্যাপার না৷ এনক্রিপশান ভাঙতে সময় লাগবে৷ সে যে ফাইল নিকি কে দিয়েছে সেটা ডিকোড করতে সময় লাগবে৷ ডিকোডিং ভুল বলেছে সে৷ আর ভাঙলেও ওরা কিছুই পাবে না৷ তবুও ওদের নির্ভর করতে হবে জেরিনের কথায়৷ সম্ভাবনা খাতিয়ে দেখতে… ঘুমিয়ে পড়ার আগে মনে মনে হাসল জেরিন৷

যে নিকি কে ফোন করেছিল সে তার পাশে বসে থাকা লোকটাকে বলল স্যার! বিশ্বাস হচ্ছে না! নিকি নাকি ফাইল নিয়ে নিয়েছে!

পাশের লোকটা বলল আমি বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কিছুই করছি না৷ ব্লাফ হতে পারে৷ সত্যিও হতে পারে৷ আমরা কাল নিকি’র ওখানে যাচ্ছি…৷

শওকত যেখানে অবস্থান করছে সেখানে আরও তিন চার জন মানুষ আছে৷ ওদের একজন এসে বলল মিঃ শ্যাওকেত তোমাদের দেশের মেয়েটা নিকি কে একটা ফাইল দিয়েছে৷ কাল ওটা ইন্সপেকশান করতে হবে৷ যদি ঠিক থাকে তাহলে জেরিনের ব্যবস্থা তুমি করতে পারবে৷ এরম্যান এর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারবে৷


তুরাগের মনটা আজ ফুরফুরে৷ দারুণ ফুরফুরে৷ হোলগাকে বাসায় দিয়ে নিজ ডেরায় হেঁটে ফিরেছে সে৷ তার মাথায় ঘুরছে কাকে ধরা যায়, হোলগা ছাড়া কাকে ধরা যায়৷
শেষত্বক একটা সিদ্ধান্তে এসেছে সে৷ জেরিন যেখানে উঠেছে, যে মেয়েটার বাসায় সেখানকার খোঁজ খবর তার জানা৷ সে ঠিক করেছে মেয়েটাকেই….. ফুরফুরে মেজাজে তার খুব গান গাইতে ইচ্ছে হচ্ছে ট্রু লা লা লা ট্রু লা লা লা…. বাতাসে হাত নাড়ছে সে!

প্রশ্ন হলো তুরাগ কিভাবে জানল জেরিন কোথায় উঠেছে?

(চলবে)

-পলাশ পুরকায়স্থ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *