নিশাচর

আমার খুব বেশি রাত জাগার অভ্যাস কোনো কালেই ছিল না।
সন্ধ্যার আজান পড়তেই মুরগী যেমন সুরসুর করে খোপে ঢুকে যায়,
রাত দশটা বাজতেই আমিও তেমনই করে ঢুকে যেতাম আমার শোয়ার খোপে।
খানিক এ কাত ও কাত করে সাড়ে দশটা নাগাদ বেঘোর ঘুমে অচেতন।
কখনও রাত বারোটা বাজতো, কখনও রাত তিন প্রহর,
এসব ঠাহর আমি কোনোদিন পেতাম না।
ঘুম ভেঙে উঠে দেখতাম বেলা ন’টা, কাজের বুয়া রুই মাছেল ঝোল চড়িয়ে দিয়েছে চুলায়।
অন্য চুলায় টগবগ করে ফুটছে ভাত।
হাতমুখ ধুতে ধুতেই আমার খাবার রেডি চাই
সবজি পরোটা হলে চলবে না, আমি রীতিমত ভেতো বাঙালি।
আমার এই দশটা নাগাদ ঘুম ঘুমু ভাব তোমাকে ভীষণ বিরক্ত করত।
তুমি কথার মাঝখানে কথা থামিয়ে হঠাৎ বলতে, ঘুম পেয়েছে?
আমি আসমানের দিকে মুখ হা করে গগনবিদারী হাই চাপতে চাপতে বলতাম, না, পায়নি।
তুমি ঠিকই বুঝতে পারতে, আমি কেমন ঢলে ঢলে পড়ছি মাতালের মতো।
তুমি ফোন রেখে দিতে
আমি ঘুমিয়ে পড়তাম, যেভাবে ছিলাম সেভাবেই।
কী করব আমি, ঘুম চেপে গেলে আমার হুশ থাকে না
একদিন নাকি কথার মাঝখানে খানিক চুপ করে থেকে হঠাৎ তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা, তোমার বাবা বিয়ে করেছে?
তুমি বুঝতে পেরেছিলে আমি হুশে নেই। কথার ফাঁকে চোখ এঁটে এসেছে, সেই ফাঁকে বিয়ে বিষয়ক ছোট্ট একটি স্বপ্নও দেখে ফেলেছি।
তারপর থেকে অনেক দিন বেশ লজ্জায় ভুগেছি
তোমার সাথে কথা বলতে গেলেই মনে পড়ত, তোমার বাবা বিয়ে করেছে?
হা হা হা। কী বোকাই না ছিলাম আমি। কী গণ্ডমূর্খ গাধা।
তারপর একটু একটু করে যেমন শুকিয়ে শক্ত হয় কাদামাটি
আমিও শক্ত হতে থাকলাম।
রাতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকলো আমাদের কথা।
এগারটা, বারোটা, একটা। কখনো কখনো রাত তিনটের সময় তুমি মনে করিয়ে দিতে, কি? সকালে কাজকর্ম নেই কিছু? নাকি কথায় কথায় ভোর নামিয়ে দেবে।এই তো, আর একটু সোনা, আর পাঁচ মিনিট।
ফোন রাখতে রাখতে পাঁচ মিনিট আমাদের পঞ্চন্নতে গিয়ে দাঁড়াত
তবু কথা ফুরোয় না, তবু হাই ওঠে না, তবু চোখ ঢোলে না।
সেই যে আমার রাত্রি জাগার অভ্যাস হলো
দিনের চেয়ে এখন আমি অধিক রাতের মানুষ
একটা, দু’টো, তিনটে বাজে
আমি বসে থাকি, অথচ তুমি কী শিশুর মতো সরল মুখে ঘুমিয়ে পড় শান্ত হয়ে,
ওই লোকটির তপ্ত নিঃশ্বাসে তোমার চুল উড়ে যায়।।

-রবিউল করিম মৃদুল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *