পোড়া গন্ধে ঘর ভরে গেলে রান্না ঘরে গিয়ে দেখি নানি ডিম ভাজতেছে!! ডিম ভাজি হওয়ার কোন লক্ষন নাই কিন্তু কড়াই পুইড়া একাকার!! নানিরে বললাম, কি, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা চইলা আসছে?? কি কস না কস এডি!! আত্মহত্যার ইচ্ছা হইছে?? বেশি কথা কইস না!! খুন্তি দিয়া চোখ গাইলা দিমু যা ভাগ!! বললাম, ওই যে ওইটা সোয়াবিন তেল আর যা দিয়া ডিম ভাজতেছেন এটা ওয়াশিং লিকুইড!! নানির দাঁত থাকলে জিহ্বা দাঁতের নিচে কামড় দিতো!! দাঁত ছাড়া নানি জিহ্বা ঠোঁটে কামড় দিয়া রান্না ঘরে দাঁড়াইয়া আছে!!
আরেকবার খালাতো ভাইয়ের সাথে লঞ্চে করে ঢাকা আসতেছিলো নানি!! লঞ্চে টয়লেট থেকে বের হয়ে খালাতো ভাইরে বলল, ভাই আমার পা দুইটা এমন পিছলা হইয়া গেছে কা?? ভাই টয়লেট থেকে বের হয়ে নানিকে বলল, বোতলের পানি ব্যাবহার করছিলেন?? হ!! যান কলের পানি দিয়া আবার শরীর ধুইয়া আসেন ওই বোতলে ফ্লোর ক্লিনার ছিলো!!
নানি মারা যায় তিন বছর হতে চলল, একদিন আম্মা কথায় কথায় বলল, আমার মারে আল্লাহ্ বেহেশত নসীব করছে!! বললাম, মনে হয় না!! পানের পিক ছিবুত দিয়া ঘরের যে অবস্থা করতো আপনার মা!! এত নোংরামি আল্লাহ্ সইবে না!! আল্লাহ্ বলবে, রেজিয়া বেগম!! তোমারে নিয়াতো আর পারতেছিনা!! স্বর্গ ভইরা ফেলতেছো পানের পিক আর ছিবুত দিয়া!! যেখানে যাই সেখানেই তোমার ছিবুত!! তোমার নামে একের পর এক কমপ্লেইন আর কমপ্লেইন!! নিজের ঘরতো নোংরা করই কর আবার পাশে কারো ঘরে বেড়াতে গেলে সেখানেও পানের পিক ফালায়া আসো!! দেয়ালে দেয়ালে ছিবুতের দাগ ফেলো!! তোমারে এখান থেকে বিদায় দিতে হবে!!
ভাগ্যিস আম্মার হাতে লবনের বাটি ছিলো!! ভারি কিছু ছিলো না!! যাইহোক!! এমন সহজ সরল মহিলারে যদি জিন্স, টি-শার্ট আর মুখ ভর্তি দাঁত অবস্থায় দেখেন তবে কেমন লাগবে?? বুকটা মোচর দিয়া উঠার আগেই বুইঝা গেলাম এটা স্বপ্ন!!
-হিহিহি!! হারামজাদা ডরাইছোস??
-ডরামু কা??
-আবার মিথ্যা কথা কস!! ডরে মুইতা দিছোস!!
-যাও!! গরমে ঘাইমা গেছি!!
-হ!! মাইষের ঘামের তন তো মুতের গন্ধ আসে!!
-আহ দুষ্ট কথা বলে না!! তোমার এ অবস্থা কেন তাই বল!! জিন্স!! টি-শার্ট!!! মুখ ভর্তি দাঁত!!
-হিহিহি!! বেহেশতে আমারে সাজগোজ কইরা দেয়ার জন্যে যে আছে তারে বললাম, নাতির সাথে দেখা করতে যাবো আমারে আধুনিক ছেড়ি বানায়া দাও!! সে আমারে এমনে সাজায়া দিছে!!
-আর দাঁত??
-যেদিন প্রথম বেহেশতে গেলাম সেদিন আমারে জিজ্ঞাসা করা হইলো আমি কি কি চাই?? বললাম, মিনার তিনটা ইচ্ছার মত?? বলল, নাহ এখানে ইচ্ছার কোন শেষ নাই!! যা চাও তাই পাবা!! বললাম, তাইলে আগে আমার দাঁত দাও!! কেমন দাঁত চাই তোমার?? বললাম, কামড় দিতে পারলেই হইলো!!
-বাহ!! তাহলে বেহেশতে যা চাওয়া হয় তাই পাওয়া যায় ঘটনা সত্য!!
-তাতো অবশ্যই!! তবে যাওয়ার মত কামতো করস না!! ছোট্ট টিভি নিয়া সারাদিন ঘুরস আর রং তামাসা দেখোস!!
-ওইটা ছোট্ট টিভি না, মোবাইল!!
-হইলো একটা!! হারামজাদা, শয়তান! আর তুই,সেই যে আমি মরছি মত আমার চারদিনের মিলাদের দিন গেছোস আর একদিনও গিয়া আমার কবরটা জিয়ারত করছোস?? তাও চারদিনের দিন গেছোস মিলাদের মিষ্টির লোভে!! মনে করছোস আমি জানি না!!
-আহ!! কই?? শোকে ইট আমি একটা মিষ্টিও খাইতে পারি নাই!! মিষ্টির প্যাকেট হাতে না নিলে মানুষ খারাপ ভাববে তাই হাতে নিয়া ঘুরছি!! কষ্টে খাইতে পারি নাইতো বিশ্বাস কর!!
-আবার মিছা কথা কস?? তুই খালি তোর প্যাকেট খাইছোস?? তোর ছোট মামার প্যাকেটও তুই চুরি করছিলি!!
-আরে চুরি কই করছি!! মামা কাঁদতে ছিলো, তাই মামারে বলছি, আপনার প্যাকেট আমার হাতে দিয়া কান্দেন!! আপনার কান্দনের সুযোগে কে আপনার প্যাকেট নিয়া দৌড় দিবে তার নাই ঠিক!! পরে মিষ্টি নষ্ট হইয়া যাবে দেখে আমি জোর কইরা খাইছি!! খাওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিলো না বিশ্বাস করো নানি!!
-তোরে বিশ্বাস??
-আচ্ছা বিশ্বাস কইরো না, একটা কাম কইরা দাও!! তোমারতো কারো স্বপ্নে যাইতে ভিসা লাগে না!! তো আম্মার সাথে দেখা করবা না?? আম্মার সাথে দেখা হইলে আমার ব্যাপারটা একটু বইলো!!
-তোর আবার কিসের ব্যাপার??
-আরে বোকা!! ঘরে নতুন মানুষ আনার ব্যাপার!!
-এই বয়সে তোর বাপ মা ঘরে নতুন মানুষ আনবো?? কি কস না কস এডি হারামজাদা!!
-ধুর!! তুমি কি কও না কও!! ঘরে নতুন বউ আনার কথা বইলো আম্মারে!!
-আমার ঝিয়েরে ঘরে সতীন আনোনের কথা কইতাম?? তুই তো মহা হারামজাদারে!!
-ধুর কি বুঝে না বুঝে!! আমার বিয়ার কথা বইলো নানি!! বইলো ঘরে নতুন মানুষ আসলে ঘরে সুখ আসবে!! শান্তি হাওয়ার মত ঘুইরা বেড়াবে ঘর জুড়ে!! কই যাও??
-তোর মার সাথে দেখা করতে যাই!! তোর মারে কইতে হইবো না নতুন মানুষের কথা??
-টেক কেয়ার!! সি ইউ লেটার!!
-কি হইলো আম্মা!! সাজ সকাল বেলায় আপনার মুখ এমন গোমড়া কা??
-মারে স্বপ্নে দেখছি!!
-অহহ! ভালোইতো আছে আপনার মা!! মুখ ভর্তি দাঁত, জিন্স, টি-শার্ট!!
-হ, আছেতো ভালোই তবে একটা ব্যাপার নিয়া চিন্তায় পইরা গেলাম!!
-কি ব্যাপার?? নিশ্চয়ই ভালো কিছু বলছে!! উনি যা বলছে তা কিন্তু অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে!! নাহয় অমঙ্গল আসবে সংসারে!! মুরুব্বী মানুষের আদেশ বলে কথা!! বুইঝেন পরে আবার আমার দোষ দিতে পারবেন না কিন্তু!!
-তোর আব্বা গতকাল তোর জন্য একটা প্রস্তাব আনছে কিন্তু এইদিকে মায় স্বপ্নে কইলো তোরে আগামী দশ বছরেও বিয়া দিতে না!! তোরে বিয়া দিলে নাকি সংসারে অশান্তি হবে!! সংসারের সুখ উইড়া যাবে!! এখন তুই ও বলতাছোস তোর নানি যা বলছে তা শুনতে!! আরে কই যাস??
-ঘুমাইতে যাই!!
-মাত্র না উঠলি!!
-আবার ঘুমামু!! আর বটি টা কই?? বুড়ি আসুক খালি আরেকবার স্বপ্নে!!
-মোঃ ফজলে খোদা রায়হান