নপুংসক ( ৩য় পর্ব )

মাকে দেখে আমি মনে মনে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। একজন নার্স এর সহযোগীতায় ভোর ছ’টার দিকে আমি একটা ছেলে সন্তান প্রসব করলাম। আমার ছেলেটিকে যখন কোলে দেয়া হল, ওর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রথম যে কথাটা মনে আসলো তা হলো, ‘আমি বাচ্চাটাকে নিয়ে স্বামীর সংসারে আর ফিরে যাবনা।’

পরিস্থিতি তা হতে দিলোনা। মা আমাকে বোঝালেন,”মেয়েদের অভিমান দেখার লোক থাকেনা। নিজের অভিমান নিজের মাঝেই লুকিয়ে রাখতে হয়।বাচ্চাটাকে পেয়ে জামাই নিশ্চয়ই আগের মতো থাকবেনা!!
আমি তিনদিন পর সংসারে ফিরলাম শরীরে এক না জানা ভয়ঙ্কর বিপদ নিয়ে। নিজের শরীরের এমন বিপদ সম্বন্ধে আমি মোটেই অবগত ছিলাম না। জরায়ু মুখের প্রচন্ড যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে বুঝতে পারলাম আমার পেরিনিয়াম ছিড়ে গেছে অদক্ষ নার্সের হাতে। আমার মা শুনে প্রায় পাগল হয়ে গেলেন। অথচ আমার এসকল যন্ত্রণার কিছুই জানলো না সে। মা বললেন, “জামাই জানলে তোকে নিয়ে আর সংসার করবে না। পুরুষ সুযোগ পেলে ছেড়ে দেয়না। এই অযুহাত দেখিয়ে তোকে সে ছেড়ে দেবে। তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।
তাকে না জানিয়ে করতে হবে যা করার।”

আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম,বাবা হিসাবে প্রথম সন্তানকে পেয়ে কতটুকু তৃপ্ত সে তাও বোঝা গেলোনা। আমাদের মা -ছেলে নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা নেই। যেন কিছুই হয়নি। সব আগের মতোই চলতে থাকলো।সে আছে তার নিজেকে নিয়ে।

মেয়ের এমন পরিস্থিতিতে অস্থির মা হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করলেন। তারা বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো। বারবার বোঝাবার চেষ্টা করলো এটা তাদের দ্বারা হয়নি। মা হঠাৎ রেগে গিয়ে ডাক্তারকে বললেন,
“আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিবেন এত সহজেই? আমার কাছে সব প্রমাণপত্র আছে। আমি থানায় যাব, আপনাদেরকে আমি জেল হাজতের ভাত খাওয়াবো। “

এই এক কথায় ডাক্তার সমঝোতায় এলেন। বললেন,”শুধু শুধু অস্থির হবেন না। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিব।”

ব্যাবস্থা তারা নিয়েছিল সাতদিন পর। হাসপাতালের কোন এক ঘরে আমাকে জীবন্ত ফেলে আমার জরায়ু থেকে পায়ু মুখে ছ’টা সেলাই দেয়া হলো। আমার হাত পা বেধেঁ কাজটা করার সময় আমার আত্মচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে এলো। মা রুমটার দরজায় ধাক্কা দিয়ে কাদঁতে কাদঁতে বলতে থাকলেন, আমার মেয়ের সাথে আপনারা কি করছেন? আমাকে দেখতে দিন।’ তারা আমার মাকে ভিতরে আসতে দেয়নি। আমার মুখে কিছু একটা গুজে দেয়া হলো যেন চিৎকারের শব্দ বাহিরে না যায়।

এমন অমানবিক কাজটা করেছিল তারা তাদের আক্রোশ থেকে। কি ভয়ঙ্কর ভাবেই না আমি তার বলি হয়েছি। এরপর এই দু:সহ ঘটনা আমার জীবনে বারবার ঘটতে লাগলো। প্রায় রাতেই সেই স্বপ্ন দেখে আমি আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে হাঁপাতে থাকি। নিজেকে দিয়ে একটা বিষয় পরিষ্কার বুঝেছিলাম,

“কিছু কষ্ট থাকে মেয়েদের কেবল একার অভিশাপের মতো। এর ভাগ কেউ কখনো নেয় না।”

মায়ের লেখা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমি কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানিনা। ঘুম ভাঙ্গলো মতিনের ধাক্কায়।

“কি রে তুই কত ঘুমাবি? আমি সেই সন্ধ্যা থেকে তোর অপেক্ষা করছি।খুব তো জামাই আদরে আছিস দেখছি। কি.. তুই ওমন করে তাকিয়ে আছিস কেন? আমাকে চিনতে পারছিস না?

আমি আসলেই চিনতে পারছিলাম না মতিন কে। চারদিক তাকিয়ে জায়গাটাও চিনতে পারলাম না। মতিন ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো……

চলবে….

বেলা প্রধান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *