ধ্রুবতারা (২য় পর্ব )

” ক্যারে পাথর তুলন কি আইজ বন্ধ আছে লা ? ” রহিমুদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করে রাজন।

” হই। আইজও তুলবার নোয়ায় দেয়। একনা কি করি কন তো বাহে ? চিন্তিত মুখে বলে উঠে রহিমুদ্দিন।

” হ্যারে ডাঙ্গাইবার মুন চাই ! পাথর নোয়ায় তুলিবার পারিলে কি করি খাওন জোগাড় করিবো লা ? এর চেয়ে মহাজনেরে কাছত যাইছোল। ওমাই তেনার ঠ্যাং ধরি কয়াম ডিসি সাবরে হে বুঝাইবার পারে কি লা ? ”

” হই , যায়চল তাই করি গিয়া। এলায় নিজেগোর মদ্যে ক্যাজ্জা করি লাভ কি বাহে ? মিছাই হুদাহুদি সুময় পার হয়ি যাবি । ”

” তর এত চিন্তা কিরে বা ? বুড়ি এক দাদী ছাড়া তর আছেই বা কিডা ? কাই এত চিন্তা করেন বায়ে ? ” রাজন কে বলে রহিমুদ্দিন ।

” হামাকেরে দুড্যা মাইনষের জন্নিও তো ভাত আন্দোং এর লাগি চাল জোগাড় করা নাগপে। তকাই নাই জোগাড় করিবার পারি , ভাত তো জোগাড় করা নাগপে। এলায় কে মোরে চ্যাইটা ভাত জোগাড় করি দিবেন ? ”

” হ , এইটা ঠিকই কছেন । ” রাজনের কথায় সমর্থন করে রহিমুদ্দিন ।

ডালিয়া দুই নং গেটের কাছে আসাদ মহাজনের চেম্বারের কাছে তারা দুজনই পৌঁছাতেই দেখতে পেল তাদের মত আরও অনেক শ্রমিক সেখানে আগে থেকে এসে বসে আছে। রাজন হাতের বিড়িটাতে শেষ একটা টান দিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মহাজনের চেম্বারে প্রবেশ করে। একটা চেয়ারের উপর বসে আসাদ মহাজন খুব গম্ভীর মুখে পান চিবুচ্ছে। কাসেম চাচা , কাইউম , ধলা মেম্বার সহ আরও অনেকেই বেঞ্চের উপর বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। তার দিকে মহাজনের চোখ পড়তেই তাকে সালাম দিল রাজন ।

” ভালা আছুন ? ” প্রশ্ন করলো আসাদ সাহেব ।

” জ্বি , আপনে ভালা আছুন ? ” পাল্টা প্রশ্ন করে রাজন ।

” আল্লাহ্ য্যান রাখিছে। তই ফির কি কবার চাও কও দেকি ? ”

” আপনে তো সব বুঝবার পারিছেন। একটা কিছু করিবার লাগিবে মহাজন সাব। তা নাইলে হামাকেরে কি অবস্থা হবি একবার ভাবি দেকিছেন মহাজন সাব। হামরা খাতি না পায়া মরি যাওয়ার নাগপে। ডিসি সাবরে বলি একটা কিচু করিবার নাগপি। পাথর তুলিবার না পারিলে ভাত পামু ক্যালা ? কাই দিব হামাকেরে ভাত ? সানকিত তকাই না তুলিবার পারি , এট্টু নূন – পত্তা দিয়া য্যান খাইবার পারি তার জন্নি যা করিবার নাগে তা করেন বাহে। হামরা খুব গরীব। হামাকেরে বাঁচান। আপনে না বাঁচালি কাই হামাকেরে বাঁচাবিন। ”
খুব করুন স্বরে কথাগুলো বলল রাজন ।

” মুই তো হে কতা ভাবিয়া বসি আচি। এলায় যদি সবি মিলি ডিসি সাবরে কবার না পারি তয় এই ডিমলাবাসি ব্যাকত সকলই মরি যাইবে লা। আর এক কাজ করিবার পারলে কর , তিস্তায় একনা জল নেকো। দ্যাখ আইতোত আন্ধারোত লুক করি কয়জন ডুব দিয়া পাথর তুলিবার পারস কিনা ? একনা তরা যা , পরে আসিয়া খোঁজ লিয়া যাস। ”
আসাদ সাহেবের কথা শেষ হতেই সবাই তাকে সালাম দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
( চলবে )

* বিশেষ দ্রষ্টব্য :
নিম্নে পাঠকের সুবিদার্থে কিছু আঞ্চলিক শব্দের অর্থ দেয়া হলো :
কাই = কে
পত্তা = মরিচ
ডাঙ্গাডাঙ্গী = মারামারি
তকাই = তরকারি
একনা = এখন
আইতোত = রাত্রিবেলা
আন্ধারত = অন্ধকারে

(চলবে)……

-Firoz Chowdhury

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *