ঝলসানো নারী

ব্যর্থতায় কালো চাদর গায়ে জড়িয়ে
আমি নিজেকে উষ্ণ করি,
কতটা আরাম পেলাম কখনও ভাবিনা,
একটানা কালো চাদর জড়িয়ে
আমি রঙহীন চোখে কাজল দেই।
নিদ্রাহীন রাতে কপালের টিপে
হাত রেখে মা’কে ধ্যান করি,
ভেসে ওঠে ভালোবাসাহীন নাকফুল,
ব্লাউজ ছাড়া সবুজ শাড়ির পাড়,
উনুনের আগুনে ঝলসানো চামড়ার
ভাঁজে লেপ্টে থাকা সমাজের দায়,
আমার গরম লাগে আমি এসিতে
শীতল হই, আমার কান্না পায়।
আমি আয়নায় নিজেকে দেখি
আমার নাক, মুখ শাড়ি বদলে যায়,
আমি মাকে দেখি।
আমার চোখে ঘোর লাগে
আমি বাংলাদেশ হয়ে যাই,
আমার জমিনে সাদা সাদা পোকা
কিলবিল করে,
সুগন্ধি আতরে আমাকে জাপ্টে ধরে
কালো সাপ!
আমি চিৎকার করি,
আমি বাঁচতে চাই,
আমি দংশনের প্রতিটি আঘাতে
কেঁপে উঠি,
মা–!
আমার চোখ বন্ধ করে কানে কানে
ফিস ফিস করে
অনুচ্চারিত প্রতিটি শব্দ আমাকে
বিহবল করে আমি সামাজিক দায়ে
আমি বিষাক্ত করি, মেনে নেই বিধান।
শিক্ষা, ধর্ম, সবকিছুকে ছাঁপিয়ে
আমি ছা-পোষা একজন
নিজেকে কালো চাদরে ঢাকি,
প্রতিটি সামাজিক অবয়বে
আমি নিজেকে কুৎসিত করি,
আমি নারী।
আমার অনাগত ভবিষ্যৎ
আমাকে কোন মর্যাদায় আসীন করে?
এই ভাবনায় আমি আমার মেয়েকে
আমার মা’এর গল্প বলি,
আমাকে নেকাপের আড়ালে ঢেকে
রাজকুমারের ঘোড়ায় চড়ে
আকাশে পাড়ি দেই,
আমার মেয়ে দোলনায় বসে
দোল খেতে খেতে নিজেকে
আমার মাঝে দেখে।
এইভাবেই আমরা মেয়ে থেকে মা
তারপর ঝলসানো নারী হই,
সামাজিক দায়ে একদিন
কালো রঙে জীবনকে মাপি।

হিল্লোল জাহান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *