জননী

একদিন আম্মারে বললাম, আপনার মাথায় কিসের তেল?? আম্মা বলল, তোর বাপের ঘরে আইসাতো খালি রান্নাই করে গেলাম!! একটু নারিকেল তেল দিবো মাথায় তার আর সময় কই, তাই সোয়াবিন তেল দিছি মাথায়!! বুঝলাম রান্না ঘরের চুলার তাপে মায়ের মাথা গরম হয়ে গেছে!! কবে জানি দেখবো সেই গরম মাথায় তেল ঢেলে মা আমার তেলাপিয়া মাছ ভাজছে আর আমাকে ডাকছে ভাজা মাছের লবন দেখার জন্য!!

আমি বুঝতে শুরু হওয়ার পর থেকেই আম্মাকে রান্না ঘরেই পড়ে থাকতে দেখি!! আসলেই আমাকে, আমাদেরকে জগত দেখাতে গিয়ে “মা” নামের এই ভদ্রমহিলারা নিজেরাই বন্দী হয়ে থাকেন ঘরের চার দেয়ালে!! আপনার আমার সংসার স্বামী পরিবার সবার কথা চিন্তা করতে করতে ওনারা ভুলেই জান মাথায় তেল দেয়ার কথা!! আর যখন তেল দেয়ার কথা মনে পরে তখন দেখেন, বালিকা মায়ের মাথার সেই কুচকুচে কালো চুল এখন ধবদবে সাদা!! কখনও ধন্যবাদ দেয়া হয় না মায়েদের!! অবশ্য ওনাদের ধন্যবাদ দেয়ার মত স্পর্ধাও প্রাণীকুলের কারো নাই!!

তবুও স্পর্ধা দেখালাম, ধন্যবাদ সকল মায়েদের যাদের জীবন পার হয়ে যায় রান্না ঘরের চার দেয়ালে!! আর যখন সেখান থেকে বের হয় দেখেন ঘরের দুয়ারে খাটিয়াতে পরে আছে নিজের নিথর দেহটা!! পঞ্চাশ বছর যে রান্না ঘরটা ছিল নিজের দখলে তা এখন বড় খোকার বউয়ের কবলে!! আহ!! মেয়েটাকেতো বলাই হলো না দেখতে সাদা হলেও ওই কৌটায় লবন, এটায় চিনি!! খোকাটাকেও বলা হলো না ভালো থাকিস বাবা!! লোকটা পান মুখে প্রায় ঘুমিয়ে পরে!! কে যে এখন ডেকে তুলবে তাকে!! কে বলবে আর এমন না করতে!! নাহ!! না বলা কথা গুলো কখনই বলা হয় না মায়েদের!! কখনই না!!

স্কুলে রেজাল্ট দিলে আম্মার কাছে গালি খাওয়ার আগে আমি গালি খেতাম আমার বন্ধুর আম্মার কাছে!! হারামজাদা ঠিকমত পড়!! সামনে রেজাল্ট খারাপ করলে কান ছিরে ফেলবো টান দিয়ে!! এদিকে আয় আর মন খারপ করে কি করবি আইস্ক্রিম খা!! আন্টির নাম ছিলো হাসি!! কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না!! আম্মাকে বলার পর দেখলাম জায়নামাজ নিয়ে নফল নামাজ পড়া শুরু করলেন!! কিছুদিন পর বন্ধুকে পাওয়া গেলে আম্মাকে বললাম, আম্মা পাওয়া গেছে!! আম্মা জায়নামাজ গোছাতে গোছাতে বললেন, হারামজাদা শয়তান পোলা গেছিলো কই?? আমার মায়ের নাম আসমা!! আমার বিদেশ যাত্রার কথা শুনে নির্বাণে বিশ্বাসী বন্ধুর মা প্রার্থনা করতে বসে পরলেন মুসলিম ঘরে জন্ম নেয়া সন্তানের জন্যে!!! বন্ধুর মায়ের নাম ইন্দ্রাণী!! জাত ধর্ম ডাক নামে ওনারা কেউ হাসি, কেউ আসমা, কেউবা ইন্দ্রাণী!! আসল নামে কিন্তু ওনারা শুধুই “জননী”!! শুধুই “গর্ভধারিণী”!!

এত বড় পৃথিবী সৃষ্টিকর্তার পক্ষে একা দেখে রাখা সম্ভব না, তাই তিনি সৃষ্টি করলেন মায়েদের এরপর নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে পরলেন!! শুভেচ্ছা সকল জননীদের!! ভালোবাসা সকল মায়েদের প্রতি!!

-ফজলে খোদা রায়হান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *