চিরকুমার

“দেখ বাবা তোর আবদার মিটাইতে মিটাইতে আমার জীবন শেষ।” আমি মনে মনে বললাম, “( আব্বা, আপনার তো আর গার্লফ্রেন্ড নাই, থাকলে বুঝতেন মাসের কদিন কিভাবে যায়)”। আব্বা বলল “ভাবছি তোর বিয়ে দিবো”। আমি লজ্জায় লাল হয়ে বললাম ” আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে”! আব্বা বলল” তাহলে তোর ছোট ভাইকে বিয়ে দেই”? আমি বললাম “স্যরি আব্বা, আবেগে ভুল বলে ফেলেছি”।

আমার বন্ধুবান্ধব সবার বিয়ে হয়ে বাচ্চাকাচ্চা হয়ে গেছে। ওদের বাচ্চাকাচ্চা আমাকে আঙ্কেল আঙ্কেল বলে ডাকে। আব্বা আমার আর আঙ্কেল ডাক শুনতে ইচ্ছে করে না। আমার সারাদিন আব্বা আব্বা ডাক শুনতে ইচ্ছে করে। আপনারা আমাকে একটা শিক্ষিত বউ দিন আমি আপনাদের শিক্ষিত নাতী- নাতনী উপহার দিবো।”

আব্বা বলল ” তোর জন্মের পর এক সন্ন্যাসী বাবা বলছিল তোর কপালে নাকি বিয়ে নেই। আর আমরা যদি তোর বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি তাহলে আমাদের উপর ঝড় নেমে আসবে”। আমি বললাম ” আব্বা, এসব বিরোধী দলের কথায় কান দিয়েন না। যে আপনাকে এই কথা বলেছে সে মন হয় চিরকুমার সংঘের সেক্রেটারি। এইজন্য সে চায় সবাই অবিবাহিত থাকুক”। আব্বা বলল ” ঠিক আছে, কাল তোকে সাথে নিয়ে একটা মেয়ে দেখতে যাবো। শুনলাম মেয়ে খুব সুন্দরী।” আব্বার কথায় একবার মনে হইলো ফেসবুক সুন্দরী নয়তো আবার।ওসব তো এডিট করা যায়। কিছু একটা বলতে যাবো তখনি মনে হলো ভুলে যদি আবার আবেগে কিছু বলে ফেলি। তাই চুপ করে রইলাম।

পরদিন মেয়ে দেখতে গেলাম আমি আব্বা, আর আমার মামা। মেয়ের বাবা বলল ” মেয়ে খুব দ্বীনি, নামাজ-কালাম ছাড়া থাকতেই পারেনা। সব সময় বাবা মায়ের কথামতো চলে।মেয়ে যখন আমাদের সামনে এলো, এতো সুন্দরী মেয়ে দেখার সাথে সাথে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লাম। মাথায় পানি ঢালার পর জ্ঞান ফিরলে আব্বাকে বললাম ” আব্বা যে ভাবেই হোক এই মেয়েকেই আমি বিয়ে করবো। আমি আপনার কাছে আর কিছু চাইনা শুধু এই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দেন আব্বা”। আব্বা মেয়ের বাবার সাথে আলোচনা করে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করলেন।

বাসায় এসে হবু বউকে বারবার দেখতে ইচ্ছে করছিল। ভাবলাম একবার ফেসবুকে সার্চ দিয়ে দেখি হবু বউয়ের আইডি আছে কিনা। কিন্তু হবু শ্বশুর আব্বা যে বলল ” মেয়ে খুব দ্বীনি”। তাই আর ফেসবুকে সার্চ দিলাম না। আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম তাড়াতাড়ি যেন বিয়ের দিন আসে।

অবশেষে আমার বিয়ের দিন এলো। সব বন্ধুবান্ধব কে দাওয়াত দিয়েছি ( ওদের থেকে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করছি বলে) নাচতে নাচতে বিয়ে বাড়িতে গেলাম। বিয়ের অনুষ্ঠানে বসে আছি এমন সময় কানে এলো মেয়ে পালিয়েছে। তাও বাংলাদেশী না পাকিস্তানি এক ছেলের সাথে। আমার বিয়েতে যে শত্রু দেশের হাত থাকতে এটা কল্পনাও করতে পারিনি। আবেগে বিয়ের আসরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম। আমার বিয়ে অথচ বিয়ের আসরে আমি মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে কান্নাকাটি করছি। হঠাৎ মনের মধ্যে আরো আবেগ জেগো উঠলো। মাটি থেকে লাফিয়ে উঠে বললাম ” মেয়ে নেই তো কি হয়ছে! মেয়ের মাকে বিয়ে করে নিয়ে যাবো “।

একটু পর আমার চারপাশে দেখি কালবৈশাখী ঝড়ের আগে যেমন চারপাশে ধুলো উড়ে, ঠিক তেমনি ভাবে ধুলো উড়ে উড়ে আমার দিয়ে এগিয়ে আসছে। হঠাৎ চারপাশ থেকে অজস্র কিল ঘুষি নাকে মুখে পিঠে পড়তে লাগলো। বুঝতে পারলাম আবেগে মনে হয় বেশি বলে ফেলেছি। তারপর আর কিছু মনে নেই।

জ্ঞান ফিরলে দেখলাম আমি একটা হাসপাতালে শুয়ে আছি। চোখে, নাকে, মুখের চারপাশে অসংখ্য ব্যান্ডেজ করা। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি শুধু আমি না। আব্বা, মামা, ছোটভাই সহ বাড়ির সবাই হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। বুঝলাম বিয়ে করতে যাইনি সহপরিবার মিলে গণধোলাই খেতে গিয়েছি।

একটুপরে আব্বা বলে উঠলো,” তোকে বলেছিলাম না? ছোটবেলায় এক সন্ন্যাসী তোকে দেখে বলেছিল
তোর কপালে বিয়ে নেই। আর জোর করে বিয়ে দিতে চাইলে আমাদের উপর ঝড় নেমে আসবে।বিশ্বাস হলো এবার আমার কথা। আর দয়া করে বাবা বিয়ের নাম মুখে নিস না। এই বৃদ্ধ বাপকে আর কতো অত্যাচার করবি! এই কে কোথায় আছিস চিরকুমার সংঘের সেক্রেটারি কে খবর দে উনি আসুক। আমার ছেলে চিরকুমার থাকবে।”

হঠাৎ দেখি একজন লোক হাসি মুখে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল ” এই যে বাবা, তোমার জন্য ফরম রেডি করে রেখেছি তুমি শুধু একটা সই দিলেই আজ থেকে তুমি চিরকুমার সংঘের সদস্য হয়ে যাবে। ” আমি বললাম, “আমার হাতে এতো ব্যথা যে কলম ধরতে পারবো না।” উনি সাথে সাথে পকেট থেকে কালি বের করে বললেন ” আমাদের এখানে টিপসইয়ের ব্যবস্থা আছে”।

-রিফাত আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *