চক্র

ঘাম মুছতে মুছতে বের হয়ে আসে রফিক।তৃপ্ত প্রশান্তি সারা মুখ জুড়ে।মেয়ে টা কাঁচা ছিল আজ, চিৎকার গুলো এখনো কানে বাজছে রফিকের। ওই সময়ে প্রচন্ড ভয়, সীমাহীন ঘৃণা, আর অসহ্য ব্যথা সব মিলিয়ে বিকৃত মুখের চিৎকার গুলো খুব উপভোগ করে রফিক …মইন অবশ্য বলে “কাজের টাইমে এই মাইয়া মাইনসের এমন ভ্যাজাল গুলান চরম বিরক্তিকর “রফিকের অবশ্য এই ব্যাপার টাই ভাল লাগে। আজকের মেয়েটার ঘরে রফিক ই প্রথম ঢুকেছে, পাশবিক আনন্দ নিয়ে প্রথম অত্যাচার করার সুযোগ পেয়েছে। তার রেশ এখনো চোখে মুখে। মইন এখনো আসেনি। সুলতান, কবির রা যাবে এখন। মইন আসতে আসতে ভুট্টোর দোকানে চা খাওয়ার কথা ভাবে রফিক …মইন আসলে মেয়ের বাপ কে টাকার জন্য ফোন দেয়া যাবে ..শুনেছে এই মেয়ের বাপের নাকি অনেক টাকা। অবশ্য শুধু টাকার জন্য ই যে তারা মেয়ে তুলে আনে তা না …মইন এর কাউকে পছন্দ হয়ে গেলে তখনও তারা তুলে আনে …দু একদিন রেখে ছেড়ে দিয়ে আসে।

তেরো দিন পর।

রফিকের খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে ইদানিং। আড্ডায় তেমন সময় দিতে পারছেনা। বুড়ো বাপ টা পারিবারিক ব্যবসা টা আর একা টানতে পারছেনা। রফিকের কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করছিল অনেক দিন ধরে, যেন বাপ কে একটু হালকাপাতলা সাহায্য করে।তাই ইদানীং পার্টির টাকা কালেকশন এর কাজ টা রফিক ই করে দেয়।শহরের বাইরে আসতে হয় রেগুলার। আজ ও শহরের বাইরে এসেছে একটা পার্টির কাছে। এমন সময়ে মইনের ফোন। কাজ ফেলে ফোন রিসিভ করে রফিক।

: রফিক, দুই দিন ধরে কলাবাগান এর একটা মেয়েকে ট্রাই করছিলাম …পাত্তা দিচ্ছিল না মা *, আজ তুলে এনেছি …তাড়াতাড়ি চলে আয়।
: আরে আগে বলবিনা??
: হুট করে চান্স পেয়ে গেছি দোস্ত ..মিস করতে চাইনাই …আয় না ..কই আছিস?
: আমার এলাকার জিনিস তুইলা আনলা মামা আমারে ছাড়াই?
: আরে অত লুকোছাপা হইলে এখন তোরে ফোন দিতাম বাকি বেটা? আছিস কই?
: একটু দুরে আছি। আসতে তিন চার ঘন্টা লাগবে ..ততক্ষণ তোরা চালায়া যা।
: ওকে দোস্ত …আসি যা …

দু ঘন্টা পর।

: রফিক সমস্যা হয়ে গেসে একটু ..
: কিরে?
: সুলতান গেসিল ঘরে …মেয়ের তেজ বেশী …বেশী ঝামেলা করতেছিল …সুলতান ছুরি চালায়ে দিসে গলায় ..
: নাই??
: নাহ ….
: আচ্ছা প্যাকেট কর …আমি আসতেছি।

রফিক এসে লাশ গাড়িতে তোলার তাড়া দেয় …

: মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলিনা ব্যাটা?? আমার ভাগের টা মাটি করলি হুদাই!!
: সরি ওস্তাদ ..বাদ দেও ….আসো হাত লাগাও

পায়ের দিক টাতে হাত লাগায় রফিক …হঠাৎ অবশ হয়ে আসে শরীর ..এলোমেলো হয়ে যায় সবকিছু …
পৃথিবী ঝাপসা হয়ে আসে …পলিথিনে মোড়ানো পা গুলো তে পড়ানো নূপুর গুলোর দিকে শুণ্য চোখে তাকিয়ে থাকে …নিজের পনের বছরের ছোট বোন টা নূপুরের জন্য জালাচ্ছিল অনেক দিন ধরে …কাল ই কিনে নিয়ে গিয়েছিল নূপুর জোড়া …সাথে সাথেই পরে নিয়েছিল …কাল প্রাণ ছিল পা গুলো তে …আজ নিষ্প্রান।

-শাকিউল বাশার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *