কিসমত

হালিমা দ্রুত পা চালাচ্ছে, কিন্তু গতরাতের না খাওয়া শরীর কিছুতেই তার কথা শুনতে চাইছে না। মনকে প্রবোধ দেয় আর অল্প একটু পথ,আজ তাড়াতাড়ি না গেলেই নয়। দো তালার খালাম্মা আজ দাওয়াত খাওয়াবে সেখানে অনেক কাজ। পাঁচ তলার নাস্তা বানিয়ে দিয়ে তবে যাবে তিন তলায় সেখানে কাপড় ধোয়া ও ঘর মোছা শেষ করে তবে যেতে হবে দো তলায়। গতকাল কাটাকুটির বাড়তি কাজটুকু করে দিয়ে এসেছে। বড় একটি ইলিশ মাছ এনেছে দো তলার সাহেব। এতো বড় ইলিশ আজকাল দেখাও যায় না। ছোট মেয়েটা আজ কদিন থেকে ঘ্যানর ঘ্যানর করছে মাছ খাবে, বাপ বলেছে এবার অসুখ টা কমলে রিক্সা চালিয়ে প্রথমে মেয়ের জন্য মাছ আনবে। মনে মনে হাসে হালিমা, ঘরে একদানা চাল নেই। সকালে বাকীতে দশ টাকার মুড়ি কিনে দিয়ে এসেছে মেয়ে দুটোকে। আশায় আছে হালিমা, আজ দাওয়াতের পর খালাম্মা যদি ওকে এক টুকরো মাছ দেয় নিয়ে যাবে মেয়েটার জন্য। আজ ওকে খেয়ে যেতে বলেছেন। একটানে পাঁচ তলায় উঠে হাপাতে থাকে হালিমা।বেল বাজাতে ই দরজা খুলে দেন খালু, বলেন বুয়া আজ তোমার খালা বাসায় নেই নাস্তা বানানো লাগবে না। মনটা খারাপ হয়ে যায় হালিমার। এখানে নাস্তা বানায় বলে সকালের খাবারটা ও এখানেই খায়। যাহ! আজ কপালটাই খারাপ। তিন তলার বেগমসাহেব বড়ই কেপ্পন কখনও কিছু খেতে দেয়না। তবুও হাঁটা দেয় তিন তলায়। এতো সকাল বুয়াকে দেখে মেজাজ খারাপ হয় বেগম সাহেবের। তুমি? এতো তাড়াতাড়ি আসছো কেন বুয়া? পেছন থেকে সাহেব বলেন ভালোই তো হলো। ওকে দিয়ে আজকের নাস্তাটা বানিয়ে নাও। আমি না হয় আলাদা কিছু বকশিশ দিয়ে দেবো ওকে। মনে মনে খুশি হয় হালিমা। দুটো টাকা আজ বাড়তি পেলে চাল নিয়ে যাবে বাসায়। দ্রুত হাতে রুটি, ভাজি করে টেবিলে দেয়। নিজেও খায়। রান্নাঘর গুছিয়ে থালা বাসন ধুয়ে তুলে রাখে। দেখে খুশী হয়ে যান বেগম সাহেব। আজকাল যেখানে বুয়াকে দিয়ে একটা বাড়তি পেয়াজ কাটানো যায় না সেখানে দু দুটো বাড়তি কাজ করে দিয়েছে বুয়া। কাপড় ধুয়ে ঘর মুছে উঠতে বেজে যায় বারোটা। বেগম সাহেব তার হাতে দু’শ টাকা ধরিয়ে দেন, বলেন তোমার সাহেব খুশী হয়ে বকশিশ দিয়েছেন। নাহ, দিনটা যত খারাপ ভেবেছিল হালিমা ততো খারাপ নয়। দো তালায় ঢুকে কাজে হাত লাগালো হালিমা, সবজি কুটতে বসলো আগে। সাহেব আরও বাজার আনতে গেছেন। ওগুলো এলে বাকী কাজ। এমন সময় বেল বাজলো। সাহেব ফিরে এসেছেন বাজার থেকে।এসেই তাড়া লাগালেন যা আছে সব ফেলে দাও। মানে? মা নেই, আমাদের এক্ষুনি দিনাজপুর যেতে হবে। রান্নাঘর থেকে সব কথাই শুনতে পাচ্ছিলো হালিমা। খালাম্মা ফ্রিজ খুলে গতকালের রান্না করা মাছ গুলো দিয়ে বললেন এগুলো ফেলে দাও বুয়া। হালিমা খানিকটা হতভম্ব হয়ে বলে, খালাম্মা ফেলমু কেন? তোমার দাদার মা মারা গিয়েছেন। আমরা কিছুদিন মাছ মাংস খাবোনা, তাই। আমি নিয়া যাই? সাহস করে বলে ফেলে হালিমা। ঠিক আছে নিয়া যাও।
মায়ের পথ চেয়ে বসে আছে মেয়ে দু টো। খুবই খারাপ লাগছে আলমের। বিশেষ করে ছোট মেয়েটার জন্য। এই মেয়েটা কিছুই বুঝতে চায় না। আজ তাদের মা কি যে জোগাড় করতে পারবে আল্লাহই জানে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো আলম বুঝতে পারেনি। মেয়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো, নাকে গরম ভাত আর ইলিশ মাছের সুগন্ধ নিয়ে। আলমের সামনে ভাতের থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হালিমা, একবার মনে হলো স্বপ্ন দেখছে। না, স্বপ্ন না সত্যি।
মেয়ে দুটো মহা আনন্দে ভাতের গ্রাস মুখে তুলছে। বাজান আইজ আমাদের ঈদ। দেখো মা কত্তো ভালো ভালো খাওন আনছে। এই খাবার তুই কই পাইলিরে হালিমা? হালিমা হাসে, বলে কিসমত, আল্লায় দিছে।

-জাহেদা মিমি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *