আয়রন ম্যান হাজব্যান্ড

আজ আকাশের বাসর রাত। অথচ আকাশ বারবার ওর নাক টিপেটিপে দেখছে নাকের মাংস শক্ত না নরম। কারণ যে মেয়ের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে সে একজন বক্সার। যদি একটা ঘুষি মারে তাহলে ওর ওই প্রিয় নাকের ফালুদা হয়ে যাবে।

বক্সার মেয়ের সাথে বিয়ের কথা উঠতেই আকাশ বলে উঠলো, “না, হবে না এই বিয়ে। আমি হলাম শান্তিপ্রিয় মানুষ। বক্সার মেয়েকে বিয়ে করলে রাগের মাথায় যদি দুএকটা ঘুষি মেরে দেয়। তখন কি হবে আমার অবস্থা একবার কেউ ভেবে দেখেছ “? আকাশের বাবা বলে উঠলো “বাঙ্গালি মেয়েরা ওরকম হয় না। এরা স্বামীকে প্রচন্ড রকম ভালবাসে। স্বামীর সেবাযত্ন করে। মেয়েটা বাইরে বক্সার হলেও ভিতরে ভিতরে খুব নরম মনের মানুষ। আর শোন আমি পাকা কথা দিয়ে এসেছি। বিয়ে না করে উপায় নেই”।

আকাশ আর ওর বক্সার বউ চুমকি পাশাপাশি বসে আছে। আজ ওদের বাসর রাত। আকাশের বারবার মনে হচ্ছে ইউটিউবে দেখা চুমকির একটা ভিডিওর কথা। চুমকি আর একটা মেয়ের মধ্যে বক্সিং খেলা হচ্ছে। চুমকি একটার পর একটা কিল ঘুষি মারছে মেয়েটার চোখে মুখে। আকাশের গলা শুকিয়ে এলো। পাশে রাখা বোতল থেকে পানি খেতে লাগলো । আকাশের বউ চুমকিই প্রথম বলে উঠলো “আপনি কি কোনো কারণে ভয় পাচ্ছেন”? বাঙালী ছেলেরা যতো ভীতুই হোক না কেন সেটা বউয়ের সামনে প্রকাশ করে না। বিশেষ করে নতুন বউয়ের সামনে তো নয়ই।

আকাশ মুখ থেকে পানির বোতল সরিয়ে আমতা আমতা করে বলল “না না ভয় পাবো কেন। নিজের বউকে কেউ ভয় পায় নাকি? আচ্ছা আপনার প্রিয় স্থান কোথায়”? বলেই আকাশ আবার বোতল থেকে পানি খেতে লাগলো।

আকাশের বউ উত্তর দিলো ” নাক, আর মুখ”। বউয়ের এমন ভয়ংকর উত্তর শুনে আকাশের মুখের মধ্যে থেকে সব পানি বেরিয়ে এসে বউয়ের শরীরে গিয়ে লাগলো। আকাশ বলে উঠলো” স্যরি স্যরি, আমি ইচ্ছে করে করিনি। আমি আসলে জানতে চেয়েছিলাম আপনি কোথায় কোথায় ঘুরতে ভালবাসেন। কিন্তু আপনার মুখে নাক আর মুখের কথা শুনে ভয়ে আমার মুখ থেকে পানি বেড়িয়ে গেছে। আকাশ দেখল ওর বউয়ের চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে উঠেছে। আকাশ ভয়ে দৌঁড়ে বাসর ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু একি দরজা খুলে না কেন? দরজা লক হয়ে গেছে। আকাশ পিছনে তাকিয়ে দেখল ওর বউ আস্তে আস্তে ওর দিকে লাল লাল চোখ করে এগিয়ে আসছে। আকাশ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। চিৎকার করে বলে উঠলো” আব্বা আম্মা তোমরা কোথায় আছো? বাঁচাও! বাঁচাও! তারপর আর কিচ্ছু মনে নেই, ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো।

এরপর থেকে আকাশের অন্য রকম এক জীবন শুরু।

মানুষ অনেক সময় ঘুমের মধ্যে কথা বলে হাসাহাসি করে। আবার অনেকে ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করে কিন্তু আকাশের বউ বক্সার। সে ঘুমের মধ্যে প্রাকটিস করে। বাসর রাতের পরেরদিন রাতে আকাশ ঘুমিয়ে আছে এমন সময় কে যেন ওর নাক বরাবর দিলো এক ঘুষি। নাকের ব্যথা সহ্য করতে না করতেই পেট বরাবর দিলো এক লাথি। লাথি খেয়ে বিছানা থেকে দশ হাত দূরে গিয়ে পড়লো আকাশ। বউয়ের লাথি ঘুষি খেয়ে সেই রাতেও জ্ঞান হারিয়েছিল আকাশ। জ্ঞান ফিরলে দেখে সে হাতপাতালে শুয়ে আছে।

মাঝেমধ্যেই আকাশ এখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। চোখ খুলেই দেখে সেই চিরচেনা হাসপাতাল। বউয়ের হাতে ক্যালানি খেয়ে মাসে কমপক্ষে দুই-তিন বার এই হাসপাতালে আসতে হয় তাকে। এই হাসপাতালের নাড়ী নক্ষত্র সব তার চেনা। ডাক্তার, নার্স, থেকে দারোয়ান পর্যন্ত। বক্সার বউয়ের হাতে মার খেয়ে এই হাসপালাতে বারবার আসতে আসতে সবাই ওর পরিচিত হয়ে গেছে।

একদিন হাসপাতালে জ্ঞান ফিরবার পর….
আকাশের চোখ খুলতে দেখে সুন্দরী নার্স নীলা এগিয়ে এসে বলল ” কি খবর আকাশ ভাই, এবার কিসের জন্য মার খাইলেন”? নার্সের কথা শুনে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। মানুষ অসুস্থ মানুষকে ভালমন্দ জিজ্ঞাস না করে মার কেন খেয়েছে এইটা জানতে চায়। দিন দিন মানুষের মধ্যে থেকে মানবতা উঠে যাচ্ছে বলে মনে মনে ও দুঃখ পেলো । নার্স আবার যখন বলল ” বললেন না যে কেন মার খেলেন”? তখন আকাশ আর আবেগ ধরে রাখতে পারলো না” কাঁদতে কাঁদতে বলল ” রিক্সা করে আমি আর আমার বউ যাচ্ছিলাম। হঠাৎ ভুল করে একটা মেয়ের দিকে চোখ গেলে বউ সেটা দেখে ফেলে। তারপর সোজা হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার দুঃখ কেউ বুঝে না। বউ কথায় কথায় আমার নাকে ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে হাতপাতালে পাঠায়।

নার্স বলে উঠলো ” আপনি চাইলে আমি আপনাকে দারুন একটা আইডিয়া দিতে পারি। আশাকরি তাহলে আপনার বউ আর আপনাকে মারতে পারবে না”। আকাশ বলে উঠলো বলেন ” বউ এর কিল ঘুষির হাত থেকে রক্ষা পেতে আমি সবকিছু করতে পারি”। নার্স বলল ” আপনি আয়রন ম্যান ছবি দেখেননি? আপনি ওইরকম একটা স্যুট পরে থাকবেন সব সময়। তাহলে আর আপনার বউ আপনাকে মারতে পারবে না”।

এখন আকাশ সবসময় আয়রন ম্যান স্যুট পরে থাকে। রাতে আয়রন স্যুট পরেই ঘুমায়। মাঝেমাঝে আকাশের বউয়ের হাতে ব্যান্ডেজ দেখা যায়। যতকিছুই হোক লোহাতে তো আঘাত করা যায় না। তাই একদিন চুমকি বলেই ফেললো “এই শোনো না, ভাবছি আর খালি হাতে ঘুমাবো না, এখন থেকে হাতুড়ি নিয়ে ঘুমাবো”।

-রিফাত আহমেদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *