অলৌকিক

লিফটে ঢুকতেই সীমান্তর মনে হলো কোনো পারফিউমের দোকানে এসে পড়েছে। উৎস বুঝতে বেগ পেতে হলো না। চুড়ির রিনরিন শব্দে লিফটের আয়নায় কপালের টিপ নিয়ে ব্যস্ত এক নারী।

উফ লাইফটা একদম শেষ হয়ে গেলো!

লিফটে তৃতীয় কোনো প্রাণী নেই। মেয়েটি কি তাকে কিছু বলল? ঠিক বোঝা গেল না। নীল জর্জেট শাড়িতে এমন কায়দা করে নিজেকে উপস্থাপন এর আগে কেউ করেছিল কিনা সীমান্ত ঠিক মনে করতে পারছে না। মেয়েটি এখন ঠোঁটে লিপিস্টিক আঁকছে আর গুনগুন করে সুর ভাজছে। সীমান্ত বেশ বিব্রত। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামেরা জড়ো হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে কে বা কারা তাকে এক অসম্ভব সুন্দরী নারী সমেত ছোট্ট একটি কামরায় বন্ধ করে রেখেছে। চৌদ্দতলা থেকে নীচ তলায় নামতে আজ এতো সময় লাগছে কেনো!

হঠাৎ সব কিছু অন্ধকার করে একটা ঝাঁকি দিয়ে লিফটটি থেমে গেলো। কথা ছিল মেয়েটি ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠবে,উল্টো সীমান্ত চিৎকার করে উঠলো।

“ভয় পাচ্ছেন”? কিন্নর কণ্ঠে মেয়েটি বলে উঠলো। অন্ধকারে কথাটি লিফটের ভেতর ঘুরপাক খেতে লাগলো।

সীমান্ত যে খুব সাহসী ছেলে তা নয়। তবে লিফটে আটকে পড়ে ভয় পাওয়ার মতো নিশ্চয়ই সে নয়।

সীমান্ত একটু ধাতস্ত হয়ে বলল “নাহ ভয় কেনো পাবো,আপনি ঠিক আছেন তো”?

মেয়েটি রিনরিন শব্দে হেসে বলল “না ঠিক নেই”। “কেনো, আমাকে ঠিক করে দিবেন”?

সীমান্ত আবারো অপ্রস্তুত। সে মোবাইল অন করার চেষ্টা করলো। মোবাইল অন হচ্ছে না। কী আশ্চর্য তার মোবাইলেতো চার্জ ছিল!

“আপনার মোবাইলটা অন করবেন প্লিজ”?

“আমার কাছেতো মোবাইল নেই”। মেয়েটির ঝটপট উত্তর।

সীমান্তর এবার আরো আশ্চর্য হওয়ার পালা। এরকম কারো কাছে যে মোবাইল থাকতে পারে না তা ধারণাতীত।

“আচ্ছা আপনি কে বলুন তো”?

“আমি তানহা”।

“এপার্টমেন্টে নতুন”?

“নাহ। অনেকদিন থেকেই আছি”।

“কোনোদিন দেখিনিতো।”

“প্রয়োজন হয়নি তাই”।

“আজ তাহলে কী প্রয়োজন”?

“আজ আমার বিয়ে, হি হি.. বলুন তো কার সাথে”?

“আমি কী করে বলবো”?

ঠিক এই সময়ে লিফটটি আরেকবার ঝাঁকি দিয়ে আরেকটু নিচে নেমে গেলো। এবার সীমান্ত সত্যি সত্যি ভয় পেল। অনেকক্ষণ হয়ে যাচ্ছে কেউ তাদের উদ্ধার করছে না কেনো?

“কেউ কি আছেন”? সীমান্ত খুব জোরে চিৎকার করে ওঠলো। আর সেই সাথে লিফটি ঝাঁকি দিয়ে নিচের দিকে ধাবিত হতে লাগলো। সে দুই থেকে তিন সেকেন্ড সময় পেল এটা বুঝতে যে লিফটটি ছিঁড়ে পড়ছে।

হসপিটালে যখন সীমান্তর জ্ঞান ফিরে এলো সে প্রথমেই মেয়েটির খোঁজ নিল। সে জানতে পারলো লিফটটি ছিঁড়ে পড়লেও তার বেঁচে যাওয়াটা অলৌকিক। আর লিফটে সে ছাড়া দ্বিতীয় কোনো প্রাণী ছিল না

-জামান একুশে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *