অপেক্ষা ( ২য় পর্ব )

শরীফের এই পরিবর্তন অবশ্য একদিনেই হয়নি। সে প্রথম দিকে স্বাভাবিক নিয়মেই স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক মিলনের চেষ্টা করেছে। কিন্তু রুবিনার কাছ থেকে সাড়া মিলেনি। যদিও শরীফ তাকে কাছে ডাকলে সে বাধাঁও দেয়নি কখনও। নির্জিব জড় পদার্থের মত পড়ে থেকেছে শুধু।

শরীফ জানতে চেয়েছে, ‘তুমি কি আমাকে বিয়ে করে সুখী হওনি?’

শরীফের এই প্রশ্নের কোনো উত্তর রুবিনা দিতে পারেনি। শুধু চুপ করে থেকেছে। এরপর থেকে শরীফও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। প্রাকৃতিক রিপুর তাড়নায় সে যে কখনো তাড়িত হয়নি তা নয়, তবে তার ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না বলেই সে নিজেকে সংযত রেখেছে। রুবিনার সাথে শারীরিক সম্পর্ক তৈরী করার চেষ্টা করেনি আর। ভেবেছিল সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। সে সেই সময়ের অপেক্ষায় আছে।

প্রতিদিনের মতো আজকেও রুবিনা দুপুরে মেইল বক্স থেকে একগাদা মেইল বের করে দেখতে থাকে একটির পর একটি। বেশীর ভাগই বিভিন্ন কোম্পানীর বিজ্ঞাপন আর সেল কুপন। অপ্রয়োজনীয় জাঙ্ক মেইলে ভর্তি হয়ে থাকে মেইল বক্স। রুবিনা মাঝে মাঝে ভাবে, দেশে হলে এত কাগজ অন্তত কেজি হিসেবেও বিক্রি করা যেত।

রুবিনা মেইল নিয়ে এসে লিভিং রুমে বসল। তারপর আরও একবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল। না নেই। আজকেও আসেনি। চিঠিটা কি তাহলে হারিয়ে গেল? নিশ্চয়ই কোথাও কোন গোলমাল হয়েছে।

রুবিনা ফাইল কেবিনেট থেকে আইএনএস-এর কনফার্মেশন লেটারটি নিয়ে নাম্বার দেখে ফোন করল। কয়েকবার রিং হবার পর অপরপ্রান্ত থেকে মেশিনে রেকর্ডকৃত শব্দ শুনতে পেল, ‘প্লীজ এন্টার ইয়োর থার্টিন ডিজিট রিসিপ্ট নাম্বার।’

রুবিনা ফোনের বাটনে কেস নাম্বার দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকল। কিছুক্ষন পর সে শুনতে পেল তার রেসিডেন্ট এলিয়েন কার্ড ইতিমধ্যেই ফাইলে থাকা তার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। রুবিনা লম্বা একটা দম নিয়ে উঠে দাঁড়াল। তারমত খুশী এ মূহুর্তে আর কেউ নেই। তার চেহারায় খুশির ঝিলিক দেখা দিল। সে দেরী না করে ফোন করল একজনকে।

প্রায় সাথে সাথেই অপর প্রান্ত থেকে একটি পুরুষ কন্ঠে ভেসে আসল, ‘কি, কোন খবর হলো?’

উচ্ছ্বসিত রুবিনার উত্তর, ‘ইয়েস স্যার। দ্যা গোল্ডেন ডিয়ার ইজ অন ইটস ওয়ে… চলে আসবে দু’একদিনের মধ্যেই।’

‘ফাইনালি! থ্যাঙ্কস গড!’ অপরপ্রান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফোনের ভিতরেও বোঝা গেল, স্পষ্ট।

রুবিনার অপেক্ষার দিন শেষ হলো। মেইল বক্সে আজ অল্প কয়েকটি চিঠি। এর মধ্যে অতি আকাংখিত এনভেলপটি চিনতে তার মোটেও অসুবিধা হলো না। দেরী না করে প্রায় সাথে সাথেই খুলে দেখল একটি লেটার সাইজ কাগজে তার ছবি সম্বলিত একটি ছোট্ট আয়তাকৃতি অতি উন্নত মানের সাদা রঙের প্লাষ্টিক কার্ড। এটাই তাহলে সেই সোনার হরিণ? সে উলটে পালটে দেখল। পেলব হাতে স্পর্শ করে মনে মনে ভাবল, নাম গ্রীনকার্ড অথচ রঙ সবুজ না হয়ে সাদা? এর কারন কি? শরীফকে জিজ্ঞেস করতে হবে।

রুবিনা এক দৌঁড়ে ঢুকে পড়ল বাসার ভিতরে। প্রথমেই ফোন করল শরীফকে তার অফিসে। খবরটা এক্ষুনি জানানো দরকার। শরীফ ফোন ধরতেই রুবিনা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল, ‘এসেছে!’

‘কি এসেছে?’ শরীফ অবাক হয়ে জানতে চাইল।

‘সেই চিঠিটা। যার জন্যে এতদিন ধরে অপেক্ষা করছি।’

‘আহা হেয়ালি করো না তো।’

‘আশ্চর্য, তুমি বুঝতে পারছো না? আমার গ্রীনকার্ড এসেছে।’

‘রিয়েলি? দ্যাটস গ্রেট নিউজ। তাহলে তো সেলিব্রেট করতে হয়। আজ রাতে চলো আমরা একটা ফাইন ডাইনিং এ ডিনার করি। তুমি রেডী হয়ে থেকো।’

কথা না বাড়িয়ে শরীফ ফোন রেখে দিলো। মানুষটা কি প্রয়োজনের বাইরে একটা কথাও বলতে পারে না! রুবিনা অবাক হয়। এমন একটা খুশির খবরে সে একটা কথা বলেই রেখে দিল? কিছুক্ষন চুপ করে বসে থেকে রুবিনা আবার ফোন করল একটি বিশেষ নাম্বারে।

ডিনার শেষে বাসায় ফিরে নিয়ম মাফিক অন্য কাজ গুলো সেরে শরীফ বিছানায় শুয়ে টিভি ছেড়ে দিল।

নিয়মের ব্যতিক্রম করল রুবিনা। সে সাধারনত ঘরের কাজ শেষ না করে ঘুমাতে যায় না। কিন্তু আজ কোনো কিছু না করেই তাড়াতাড়ি ছুটে গেল বিছানায়।

শরীফ পাশ ফিরে শুয়ে আছে। রুবিনা বিছানায় উঠে বসল। আস্তে করে শরীফের গায়ে হাত রেখে বলল, ‘ঘুমিয়ে পড়েছ?’

‘অলমোষ্ট। কিছু বলবে?’

‘ভাবছি, একবার ডালাসে যাবো। খালা-খালুকে একবার দেখে আসি। উনারা অনেকদিন থেকেই বলছেন।’

শরীফ মাথা ঘুড়িয়ে রুবিনার দিকে তাকাল। তারপর বলল, ‘তা যাও না। অসুবিধা কি? কবে যেতে চাও?’

রুবিনা খুশি চেপে রেখে বলল, ‘সম্ভব হলে এই উইকএন্ডেই।’

‘এই উইকএন্ডে না গিয়ে পরের উইকএন্ডে যাও। তাহলে আমিও যেতে পারব তোমার সাথে।’

‘তোমার না কাজে অনেক চাপ? কি সব ঝামেলা যাচ্ছে! তুমি বরং পরে যেয়ে আমাকে নিয়ে এসো।’

‘একা যেতে ভয় লাগবে না?’

‘ভয় লাগবে কেন? বাংলাদেশ থেকে তো একাই এলাম। আর শিকাগো থেকে ডালাস একা যেতে পারব না?’

শরীফ কৌতুহলী দৃষ্টিতে রুবিনার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, যাও।’

সকালে অফিসে যাওয়ার সময় শরীফ ফ্রিজ খুলে ভি-এইট জুসের একটা ক্যান বের করে একটা ঝাকি দিয়ে ঢক ঢক করে বেশ খানিকটা জুস গলায় চালান করে দিল। তারপর কফি মেকার থেকে কফি ঢেলে একটা চুমুক দিতেই রুবিনা সুটকেস নিয়ে নীচে নেমে এলো তাড়াতাড়ি। তার মধ্যে একধরনের অস্থিরতা স্পষ্ট। নীল জিন্স আর সাদা টি-শার্টে ওকে বেশ অন্যরকম লাগছে। ঘরে সাধারনত দেশ থেকে নিয়ে আসা সালোয়ার-কামিজ আর মাঝে মাঝে সুতি শাড়ি পরে রুবিনা। হঠাৎ তাই জিন্স-টিশার্ট পরিহিতা রুবিনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল শরীফ।

‘কি দেখছ অমন হাঁ করে?’ কিছুটা অবাক হয়ে জানতে চাইল রুবিনা।

‘ইয়্যু লুক ফ্যাবুলাস! বুঝতে পারছি না, কোন ড্রেসে তোমাকে সবচেয়ে বেশি মানায়?’

‘ভাল লাগছে?’

‘খুউব!’

রুবিনা কি বলবে ভেবে পেল না। অন্তত একটা ধন্যবাদ দেয়া যেতেই পারে। তাই সে বলল, ‘থ্যাঙ্কস!’

শরিফুল হেসে দিয়ে বলল, ‘নাস্তা করে নাও। হাতে এখনও সময় আছে। এত তাড়া কিসের?’

‘তোমার অফিসে দেরী হয়ে যাবে না?’ বলতে বলতে ফ্রিজ খুলে এক গ্লাস অরেঞ্জ জুস খেয়ে নিল রুবিনা।

‘একদিন দেরী হলে কিছু হবে না।’

কথা বলতে বলতে কিচেন কাউন্টারে রাখা ব্রেড টোষ্টারে একটা বেগল টোষ্ট করে তাতে অনেক খানি ক্রীম চিজ লাগিয়ে রুবিনার হাতে দিল শরীফ, ‘নাও, এটা খাও।’

‘আমি তো এত সকালে কিছু খেতে পারি না।’

‘ঠিক আছে, তাহলে সাথে নিয়ে নাও। পরে খেও।’

একটা র‍্যাপিং পেপারে বেগলটা মুড়িয়ে রুবিনার হাতে দিয়ে বলল, ‘প্লেনে একগ্লাস পানি অথবা জুস ছাড়া আর কিছুই খেতে দেয় না। আজকাল এয়ারলাইন্স গুলো অনেক চিপ হয়ে গেছে। কিছুদিন আগেও অন্তত এক প্যাকেট বাদাম দিত, এখন তাও দেয় না।’

ঘর থেকে বের হয়ে আসল তারা দুজন। শরীফ রুবিনার স্যুটকেস গাড়ীর ট্র্যাঙ্কে তুলে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসল। রুবিনা পাশের সিটে উঠে এসে বসা মাত্রই শরীফ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে রাস্তায় বের হয়ে গেল।

রাস্তায় তেমন কোনো কথাই হলো না ওদের দুজনের মধ্যে। শরীফের বাসা থেকে এয়ারপোর্ট প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিটের ড্রাইভ। লেক মিশিগানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রুবিনা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে জানালা দিয়ে। অবলোকন করতে থাকে শিকাগোর মনোরম দৃশ্যাবলী।

দেশ থেকে আসার পরের উইকএন্ডেই শরীফ ওকে নিয়ে এসেছিল শিকাগো ডাউনটাউন দেখাতে। বাংলাদেশের গর্ব এফ আর খানের ডিজাইনকৃত সিয়ার্স টাওয়ার আর জন হ্যানকক টাওয়ার দেখে মুগ্ধ হয়েছিল রুবিনা। সেই সাথে নেভী পিয়ার, বাকিংহ্যাম ফাউনটেইন, সায়েন্স মিউজিয়াম, এডলার প্লানেটারিয়াম সবই ঘুরিয়ে দেখিয়েছে ওকে। রুবিনা অবাক হয়ে দেখেছে আর ভেবেছে সব কিছুর ব্যাপকতা নিয়ে। এদেশটা কত বড়? ডাউনটাউন আর লেক মিশিগানের মাঝ দিয়ে ওদের গাড়ি লেক শোর ড্রাইভ দিয়ে এগিয়ে যাবার সময় রুবিনা বার বার অন্যমনষ্ক হয়ে গেল।

শিকাগো মিডওয়ে এয়ারপোর্টের ডিপারচার কার্ব সাইডে শরীফের গাড়ি এসে থামল। গাড়ি থেকে নেমে এলো রুবিনা। ট্রাঙ্ক থেকে স্যুটকেস নামিয়ে শরীফ এসে দাড়াল রুবিনার পাশে। তারপর বলল, ‘প্লেন থেকে নেমেই কিন্তু তুমি আমাকে ফোন করবে।’

‘করব।’

হঠাৎ করেই শরীফ রুবিনাকে বুকে টেনে নিল। রুবিনার চোখ ছলছল করে উঠল। বুকের মধ্যে কেমন যেন লাগছে। সে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তাকাল শরীফের মুখের দিকে।

‘কিছু বলবে?’ শরীফ জানতে চাইল।

‘না কিছু না।’

‘ঠিক আছে। যাও তাহলে। চেক-ইনে অনেক ঝামেলা করে। হাতে সময় নিয়ে যাওয়াই ভাল।’

রুবিনার গলা ধরে এলো। সে বাষ্পরুদ্ধ কন্ঠে বলল, ‘তুমি ভাল থেকো। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করো আর শরীরের যত্ন নিও।’

‘তুমি এমন ভাবে বলছ যেন তোমার সাথে আমার আর দেখা হবে না সহসা। আরে মাত্র তো এক সপ্তাহের ব্যাপার।’ বলতে বলতেই শরীফ রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখল একজন ট্রাফিক পুলিশ এগিয়ে আসছে ওর গাড়ির দিকে।

‘এইরে পুলিশ বুঝি এখনই টিকেট দিয়ে দিবে। এখানে আর দাঁড়ানো যাবে না। গাড়ি সরাতে হবে।’

‘আচ্ছা, তুমি যাও। আমিও যাচ্ছি।’

‘না, তুমি আগে যাও।’

রুবিনা আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত টার্মিনালের ভিতরে অদৃশ্য হয়ে গেল।

দুপুরের পর থেকেই কাজের ফাঁকে ফাঁকে বেশ কয়েকবার ফোনের দিকে তাকাল শরীফ। রুবিনার একটা কলের অপেক্ষায় আছে সে। এতক্ষন তো লাগার কথা না। মাত্র দুই ঘন্টার ফ্লাইট। সকাল এগারটার মধ্যেই তো পৌঁছে যাবার কথা। এখন সাড়ে বারোটা।

শরীফ আবার কাজের ব্যস্ততায় ডুবে গেল, ঠিক তখনই তার মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। সে তাকিয়ে দেখল রুবিনার ফোন। অবশেষে তার মুখে হাসি দেখা দিল। সে ফোন ধরেই বলল, ‘পৌঁছে গেছ?’

‘হ্যাঁ।’ ফোনের ওপাশ থেকে রুবিনার কন্ঠ শোনা যায়।

‘হাউ ওয়াজ দ্য ফ্লাইট?’

‘ভাল না।’

‘কেন?’

‘বাম্পিং। ওয়েদার খারাপ ছিল।’

‘ভয় পেয়েছিলে?’

‘হ্যাঁ।’

কথা বলার মাঝেই শরীফের অফিস ফোন বেজে উঠে। সে ফোনটা অন-হোল্ডে রেখে রুবিনাকে বলল, ‘এই শোন, আমি এখন রাখছি। একটু পরে আবার কল দিচ্ছি। নাহলে রাতে কথা হবে।’

‘তোমাকে এত অস্থির হতে হবে না। সময় মত আমিই কল দিব।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে।’ একটু চুপ করে থেকে শরীফ বলল, ‘রুবিনা!’

‘বলো।’

‘আই উইল মিস ইউ।’

রুবিনা চুপ করে থাকে। ওর নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া শরীফ আর কিছুই শুনতে পেল না। শরীফ ফোন কেটে দিয়ে অফিসের ফোন ধরল।

রাতে অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর শরীফ রুবিনাকে ফোন করল। কিন্তু কোনো উত্তর পেল না। রুবিনার মোবাইল ফোন বন্ধ। ফোনে কি চার্জ নেই? আচ্ছা, চার্জার নিতে ভুলে যায়নি তো? শরীফ বুঝতে পারল না রুবিনা ফোন কেন ধরছে না। সে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করল, কিন্তু প্রতিবারই কল ভয়েজ মেসেজে চলে গেল। হয়তো টায়ার্ড সে জন্যে ঘুমিয়ে পরেছে অথবা কাজিনদের সাথে গল্প করছে। কতদিন পর দেখা। তারপরেও একটা ভয়েজ মেসেজ দিয়ে রাখল শরীফ। তারপর কিছুটা চিন্তিত মনেই ঘুমুতে গেল।

সকালে অফিসে গিয়ে শরীফ ব্যস্ত হয়ে পড়ল কাজে। ব্যস্ততার মধ্যেও সে কয়েকবার ফোন করল রুবিনার মোবাইল ফোনে। কিন্তু প্রতিবারই কল চলে গেল ভয়েস মেসেজে। শরীফ অবাক হয়ে ভাবল, ‘আশ্চর্য্য, ফোন ধরছে না কেন?’

শরীফ আরেকবার ফোন করল এবং যথারীতি কল চলে গেল ভয়েস মেসেজে। শরীফ আবারও একটা মেসেজ রাখল, ‘কি ব্যাপার রুবিনা, ফোন ধরছ না কেন? ইজ এভ্রিথিং অলরাইট? রাতে ফোন ধরলে না, সকালেও না। কোনো খবর নেই। খালার বাসায় গিয়ে দেখি একেবারে ভুলেই গেলে? এখানে কেউ একজন যে চিন্তায় অস্থির সেদিকে খেয়াল আছে? এনিওয়ে, কল মি। মিসিং ইয়্যু!’

রাতে বিভিন্ন কাগজ পত্র ঘাটাঘাটি করে শরীফ রুবিনার খালার বাসার নাম্বার খুঁজে পেল। দেরী না করে সে সাথে সাথে ফোন দিল সেই নাম্বারে। অপরপ্রান্তে রুবিনার খালা ফোন ধরল, ‘হ্যালো।’

‘স্লামালিকুম। খালা আমি শরীফ। কেমন আছেন?’

আগ্রহ ভরা কন্ঠে খালা বললেন, ‘ভাল আছি বাবা। তোমরা কেমন আছ? রুবিনা কেমন আছে? ওতো অনেকদিন কল-টল করে না।’

শরীফ বুঝতে পারছে না খালা কি বলছেন! অনিশ্চিত ভাবে সে শুনে গেল তার কথা। তিনি আরো বললেন, ‘মাঝে মাঝে কথা বললে ভালো লাগে। এই বিদেশ বিভুঁইয়ে কথা বলার একজন মানুষ পাইনা। সবাই ব্যস্ত। রুবিনা প্রথম দিকে প্রায়ই কল দিত। অনেকদিন হল সেও কল করে না। ওর শরীর ভাল তো?’

শরীফের শিরদাঁড়া বেয়ে একটি শীতল স্রোত নেমে গেল নিচের দিকে। সে ভীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘খালা কি বলছেন এসব? আমিতো আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। রুবিনা তো গতকালই আপনাদের ওখানে গেল। এয়ারপোর্টে পৌছে সে আমাকে ফোনও করেছে।’

‘কই আমরা তো কিছুই জানি না। তুমি এসব কি বলছ, আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। একটু ধরো তো বাবা। এই শুনছ, এদিকে আসো। শরীফ ফোন করেছে…’ খালা চিৎকার করে তার স্বামীকে ডাকল।

শরীফের মুখ থেকে অস্ফুটে শুধু একটা শব্দই বের হলো, ‘ও মাই গড!’ তারপর তার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল বিছানায়।

ফোনের অপর প্রান্ত থেকে রুবিনার খালুর কথা শোনা গেল, ‘শরীফ, কি হয়েছে বাবা? শরীফ। ঘটানাটা কি আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদেরকে বলো, কি হয়েছে? শরীফ। হ্যালো? হ্যালো?’

শরীফ বুঝতে পারছে না সে এখন কি করবে, কি বলবে। মাথাটা কেমন যেন এলো মেলো ঠেকছে। সে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ফোনের দিকে।

চলবে…..

ফরহাদ হোসেন
লেখক-নির্মাতা
ডালাস,টেক্সাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *