কি আজিব দেশে বাস করি! জীবনডাই শেষ!
শীত জানান দেয়ার আগে ক’দিন এক নাগারে বর্ষণ অলিখিত নিয়ম এদেশে। মেঘ দিন রাত ঘাপটি মেরে থাকবে সে সময়। আজ সকাল থেকে আকাশের অবস্থা সেরকম। সালাউদ্দীন এমন আবহাওয়ায় বেশ বিরক্ত। সকালে বৃষ্টিতে আধাভেজা হয়ে অফিসে ঢুকে জ্বর জ্বর ভাব নিয়ে অভারটাইম করে রাত বারোটায় বাসায় ফিরলেন।
চারদিক ঘন অন্ধকার। বৃষ্টি বাদলার এমন সময় কারেন্ট না থাকায় তার রাগ চরম হলো। তিনি বাসার সামনে এসে হাতড়ে হাতড়ে দরজা খুঁজে ধাক্কা দিয়ে স্ত্রীকে ডাকছেন আর মনে মনে জীবনটা শেষ বিষয়ে আফসোস করে বৃষ্টি বাদলকে মনে মনে গালি দিচ্ছেন।
রাহেলা বেশ কয়েকবার ডাকাডাকির পর দরজা খুলে দিয়েই বিছানায় চলে গেলেন। সালাউদ্দীন ঘরের হারিকেনের হালকা আলোয় ভেজা কাপড় ছেড়ে লুঙ্গি পরে একটু দূরে অন্ধকারে পা টিপে টিপে কলপাড় চলে গেলেন।
বৃষ্টি বাদল বাদ রেখে তিনি এখন তার ঘুম কাতুড়ে বউকে গালি দিচ্ছেন। বউ রাত জেগে স্বামীর জন্য খানাপিনা নিয়ে অপেক্ষা করবেনা এটা কেমন কথা?
তার ভাগ্যে এমন বউ কেমনে জুটলো ভেবে মনে মনে বিরাট আফসোস নিয়ে তিনি কল চেপে হাতে মুখে পানি দিলেন।
হঠাৎ তার মনে হল তার অন্ধকারে পিঠপিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুড়িয়ে অন্ধকারে ধক ধক করে জ্বলে ওঠা দুটো চোখের দিকে চোখ পরে পিলে চমকে গেল তার । তিনি চিৎকার দিয়ে কলের হ্যান্ডেল ছেড়ে দৌঁড় দেবার আগেই স্পঞ্জের স্যান্ডেল ভেজা কাদাঁ মাটিতে স্লিপ কেটে দড়াম করে পরে গেলেন। মাটিতে বসে পিছন ফিরে তিনি দ্বিতীয় দফায় তাকালেন । সাদা জ্বলজ্বলে চোখ দুটো তখনও তার দিকে চেয়ে আছে। তিনি বসা অবস্থায়ই চার হাত পায়ে হাঙ্গুর দিয়ে ঘরের দরজায় চলে এলেন। আর তখনি কানে এলো ‘মিউ’।
বিড়ালের কথা এতক্ষণ তার একবারও মাথায় আসেনি। নিজের উপর রাগে দুঃখে ক্ষেপে গিয়ে তিনি তার ছেলেকে গালাগালি করতে লাগলেন। এমন ছাগল পাগল জন্মায়ে তিনি যে বিরাট ভুল করেছেন, এই দুঃখ তিনি কোথায় রাখবেন!
সালাউদ্দীন দরজা ধরে উঠতে গিয়ে বুঝলেন, কোমড়ে ভাল রকম ব্যাথা পেয়েছেন। হিপ আর উরুর মাঝামাঝি জায়গায় কোথাও কেটে গেছে। লুঙ্গি ছিড়ে রক্তে মাখামাখি অবস্থা। তিনি কাতর গলায় চিহিচিহি করে বেশ ক’বার স্ত্রী কে ডাকাডাকি করলেন, কিন্তুু কোন সাড়া পেলেন না।
পরদিন সকালে নিজেই বিড়ালের বাচ্চাটাকে ধরলেন। যা করার এখনি করতে হবে। রাজু স্কুলে গেছে এটাই সুযোগ। তিনি বাজারের ব্যাগে হুলোকে তুলে রিক্সা ভাড়া করলেন। রিক্সাওয়ালা বলল,’ যাইবেন কই?’
সালাউদ্দীন বললেন, সামনে রাস্তা ধরে যেতে থাকবা। দুই ঘন্টা যাবার পর থামবা। দুই ঘন্টায় কত চাও?’
রিক্সাওয়ালা যেভাবে সালাউদ্দীনের দিকে তাকাল তার অর্থ হচ্ছে, “শালায় পাগল নাকি?”
পাগল মনে করার কারনেই কিনা রিক্সাওয়ালা হেলাফেলা করে বলল,’একশ টাকা দেবেন’।
সালাউদ্দীন এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। দুই ঘন্টা পর রিক্সা যেখানে এসে থামল, সেখানে বসতবাড়ির কোন চিহ্নমাত্র নাই। রাস্তার দু’পাশে ঘন বাশঁঝাড়। তিনি রিক্সার ভাড়া দিয়ে রিক্সা থেকে নামলেন। বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে বাশেঁর ঝাড়ে ঢুকে গেলেন রিক্সাওয়ালাকে হতভম্ব করে দিয়ে।
তিনি ফিরে এলেন অন্য রিক্সায় অন্য পথ ধরে। পুরাতন একটা কথা আছে,’ যে পথে যাওয়া হয়; সে পথে ফিরতে নাই।’ বাসায় ফিরে তিনি স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেন ‘আপদ বিদায় হয়েছে’।
চলবে…..
-বেলা প্রধান
ছবি কৃতজ্ঞতা –রাত্রি চৌধুরী