লাবিবা

আমি সবসময়ই ভাবতাম: আচ্ছা, আমার ক্যাবলামো মার্কা হাসি দিয়ে কী কিছু হবে ? সুস্মিতারা তো আমার হাসি দেখেই হেসে মরবে!
কোন এক সুস্মিতা সামনে বসে যখন হাসবে তখন তো আমাকেও হাসতে হবে! সুস্মিতাদের হাসির সামনে আমার হাসি দেখতে কেমন হবে তা চোখ বুজে ভাবতেই যখন ভেসে ওঠে ঢেড়স ভর্তার ছবি তখন আরো নিশ্চিত হই যে আমার হাসির সত্যিই কোন ভবিষ্যৎ নেই।

কিন্তু একদিন হলো কী, অপরিচিত লাবিবা হঠাৎ করে কোথা থেকে এসে যখন বললো : বাহ্ কী সহজবোধ্য হাসি, এ হাসি অমূল্য! সেদিন থেকেই আমার হাসি মূল্যবান মনে হতে থাকলো। যেন, পরীর মতো উঠে এসে জাদু করে লাবিবা আমার হাসিকে নিমেষেই মূল্যবান করে দিলো।
এভাবে সে এক এক করে আমার চাহনি,চলা, চৈতন্য, চোখ সবকিছুরই মূল্য বাড়িয়ে দিলো !মূল্য বাড়াতে বাড়াতে সে আমায় মূল্যবান করে তুললো আর আমি নিজেকে মূল্যবান ভাবতে ভাবতে সত্যিই মূল্যবান হয়ে গেলাম।

এরপর : দিনের পর দিন আমাদের সখ্যতা গাঢ় হয়েছে। সে গাঢ় সময়ে লাবিবা,আমি একে অন্যের প্রেমে দীর্ঘ সময় ডুবু ডুবু ছিলাম। আমরা একে অন্যকে যে ভালবাসি তা কখনোই কাউকে ঘটা করে জানাই নাই, এমনকি আমরা নিজেরাও নিজেদেরকে সচারাচর প্রোপোজ করার মতো করে কখনোই কিছু বলিনি।
আমরা জলের মত মাটি চুষে চুষে প্রেম করতাম। নদীর পাড় ভাঙ্গার মতো করে আমরা একে অন্যকে ভেঙ্গে ফেলতাম, আবার নতুন চর জাগলে সেখানে বসে আবার চুটিয়ে প্রেম করতাম।

এই প্রেমের মধ্যেই, কোথা থেকে কী হয়ে আমাদের জীবনে ছোট্ট দুটি ঘটনা ঘটলো : একটি ঘটলো আমার মধ্যে, অন্যটি লাবিবার মধ্যে।

আমার মধ্যে যা ঘটেছিল তা হলো :

আমার বুকের ভেতর লাবিবা যে যত্নে নেই সেটা সে বুঝতে পারলেও, আমি বুঝতে পারলাম না!
তাই, দিনের পর দিন আমার অজান্তেই লাবিবা যে আমার ভেতর থেকে হারিয়ে যাচ্ছিলো, আর সে চিন্তায় তার হাতের তালুর বিপরীত পাশ কপালে নিযুতবার ঠাঁয় নিয়ে তার স্বপ্ন, সুখ, শৌখিন জমিন সেফটি পিনে ফুটো হচ্ছিলো ; তা আমি একদমই খেয়াল করিনি!দীর্ঘ দিন খেয়াল করিনি!

খেয়াল করিনি বলে আরেকদিন আবার দ্বিতীয় ঘটনা ঘটলো লাবিবার ভেতরে :

আমি দেখলাম : জুতা খুলে চেয়ারে পা তুলে বাবু দিয়ে বসা লাবিবা হঠাৎ করে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো খুব রেগে গেল। রেগে সে পায়ে জুতো পড়তে পড়তে বার বার বলতে থাকলো : জমছে না, এভাবে আর কতদিন?
সব রাগ এক করে লাবিবা জুতোর ফিতা এতো টাইট করে বাঁধলো, যেন সুন্দর পা জোড়াকে সে আজই নিঃশ্বাস আটকে মারবে!

” সুন্দর পা জোড়াকে আজই নিঃশ্বাস আটকে মারবে নাকি? ” বলতেই লাবিবা চোখ গরম করে বললো : সবসময় ফিলোসফি ভালো লাগে না! চললাম, বলে চলেই গেল। পিছু ডাকে সাড়া দিলো না।

আমার ভালবাসার পুরো অংশ জুড়ে যে লাবিবা, সেই লাবিবা আমার ভয়টুকুতেও যে রাজত্ব করতে পারে , কখনো কখনো ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে ; ছোট্ট এ ঘটনায় আমি তা বুঝে গেলাম। আমি এও বুঝে গেলাম, লাবিবার ক্ষুদ্র কোন অংশ কিংবা ক্ষুদ্র কোন স্বপ্নেরও মৃত্যু দেখতে আমি অভ্যস্থ নই।

এই যে অভ্যস্থ নই,ঝাড়ি খেয়ে তা বুঝলাম ঠিকই। কিন্তু এরপর লাবিবাকে আর আগের রুপে পেলাম না! এখন
সেই জল, মাটির প্রেম আর আগের মতো জমছে না!

ইদানিং দেখছি স্নান ঘরে শরীর জলের বৈপরীত তাপে সৃষ্ট বাষ্প যেমন আয়না দখল করে, সেভাবে চোখের সামনে লাবিবাও যেন দখল হয়ে যাচ্ছে!

প্রিয় মানুষ দখল হতে দেখলে যে খারাপ লাগে, অসহায় লাগে তা লাবিবা দেখতে পাচ্ছে না, দেখতে পাচ্ছে না কারণ বাষ্প তাকে দেখতে দিচ্ছে না!

-খায়রুল ইসলাম নিয়ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *