তুমি এলে এই ঘরে আর আলো জ্বালবো না, ঠিক করেছি। তুমিই জ্বলবে আলো হয়ে।
ভালো থাকা ভালো, কিন্তু কতদূর ভালো?—এই প্রশ্ন আর করবো না কাউকেই, এমনকি নিজেকেও না। তুমি এলে শুধুই ভালো থাকবো।
ছুটির দিনেও সকালবেলায় ঘুম ভাঙলে আবার ঘুমিয়ে পড়বো না, তোমার চোখে সকালের রোদ ছোঁবো, রোদ যদি নাও আসে তবুও। আড়মোড়া ভাঙতে-ভাঙতে।
ব্রেকফাস্টের আগেই ফাস্টিং ভাঙবো তোমার ঠোঁটে চুমু খেয়ে। এ-ই যে পাক্কা কথা দিচ্ছি। নিজেকে।
রান্নার যতটা ভাগ তুমি নেবে, ততটাই (কিংবা বেশিই) জ্বালাবো তোমাকে, এই পুরনো অভ্যস্ততায়। এখন যেমন করি।
মা বুঝবে, ও তো এমনি-ই! আমাকে সহ্য করার উত্তরাধিকারিনীকে দেখে মা’র একটুও কি ঈর্ষা হবে না?
দুপুরের হলিডে ন্যাপটা আর ন্যাপ থাকবে না, ঘুম-চুরি-করা দুষ্টুমি শেষ হবে চায়ের তেষ্টা পেলে তবেই শুধু।
বিকেলবেলায় তোমার গালে সোনালি রোদ্দুরের লুকোচুরি কিংবা স্নান সেরে বাথরুমের ছিটকিনিটা খুলে দাঁড়িয়ে-থাকা তুমি আর তোমার কানের লতিতে জমে-থাকা জলের ফোঁটা এই আটপৌরে ঘরটাকেই আরও ঘর করে দেবে। সত্যি বলছি!
এই সবখানে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা খান-খান রাগ ঝগড়ার দাগটা শুকোনোর আগেই ফাঁকা হয়ে যাবে। কথা দিচ্ছি।
ভয়ের কবিতাতে ভয় থাকবে না আর, এমনকি অপ্রেমের কবিতাতেও থাকবে না অপ্রেম। তুমি এলে তবেই।
বাতিল কাগুজে নোটগুলো কাগজকুড়নেওয়ালাদের দিয়ে দেবো। একেবারেই। আর বদলে নেবো না। তুমি দেখো ……
বইয়ের ভাঁজে বোকা অক্ষরগুলো এম্নিতেই কেমন মুখ থুবড়ে থাকে, সেভাবেই পড়ে থাকবে আরও বেশি-বেশি, তুমি যখন আসবে। শেলফগুলির গায়ের ধুলো ঝাড়তে-ঝাড়তে একটুও কি অপরাধবোধ তাড়া করবে না তোমায়? করুক, আমি এ-ই চাই। তুমি ওতটাই তুমি হয়ে ওঠো। কেমন?
এতোদিন ধরে পরম মমতায় ভুলিয়েভালিয়ে রাখা সেলুলয়েডের ফিতেয় আর আশ্রয় খুঁজে ফিরবো না। সেই সময়ের দাবিতে।
ক্লান্তি ভুলতে ক্লান্ত হবো। মাঝেমধ্যেই। রাশি-রাশি সুখে মুঠো ভরবো। দেবো, নেবো। ছড়াবো, ঝরাবো। সারাটা ঘরে, বারান্দায়। সবখানেই।
অমাবস্যার রাতে আর পূর্ণিমা চাইবো না। জানি, তুমি দেবে। চাঁদের বদলে তুমি। দেবে তো?
রাগ কিংবা অভিমান। ভালোবাসা ওদের হারিয়ে দেবে। আমরা হারাবো প্রায়ই, তবুও হারবো না। তুমি দেখো ……
আমার এলোমেলো ঘরটা আর আমায় এলোমেলো করে দেবে না। যে আমি জিনিস গুছিয়ে রাখলে পর্যন্ত কখনো-কখনো মেজাজ খারাপ করি, সময়মতো এটাওটা খুঁজে পাই না বলে, সেই আমিও মেনে নেবো, মাঝেমাঝে গোছানো ‘আমি’ হয়ে যাওয়াটাও মন্দ নয়।
ভাবি, এইসব হবে।
-সুশান্ত পাল