উইনফ্রা আর ল্যারির সাথে প্রথম যখন সাক্ষাৎ হয়, আমার বয়স তখন আঠারো। এক মেঘমুক্ত বিকেলে প্রথমবার আমি তাদের বাড়িতে যাই। স্বেচ্ছায় যাই না। আমার বাবা একটা প্যাকেট দিয়ে পাঠান উইনফ্রাদের বাবার কাছে। সম্ভবত ব্যবসায়ীক কোনো দলিল দস্তাবেজ হবে। অন্তত প্যাকেটের ওজনে অমনই মনে হলো আমার। অবশ্য অন্য কোনো কাগজপত্রও হতে পারে। আমি ঠিক জানি না। বাদামী রঙের প্যাকেটটি বোগলদাবা করে আমি উইনফ্রাদের সদর দরজায় কলিং বেল টিপলাম। ঘরের ভেতর থেকে স্প্যানিশ গানের সুর ভেসে এলো। স্প্যানিশ সুরের কলিং বেলের আওয়াজ আমি এই প্রথম শুনলাম।
উইনফ্রা ডেসমন্ড আর ল্যারি ডেসমন্ড নামের এই দুই সহোদরা দুজনেরই বয়স ত্রিশ পেড়িয়ে গেছে। কেউ বিয়ে করেনি এখনো। আমি কলিং বেল বাজাতেই একজন এসে দরজা খুলে দিল। হাস্যোজ্জ্বল লাস্যময়ী তরুণী। সাদা গাউনে আবক্ষ ঢাকা। দরজা খুলে আমাকে দেখেই বলল- হ্যালো- আই এম ল্যারি। ইউ মে বি হেয়ার টু মিট মাই ফাদার। বাট হি ইজ নট এট হোম।
ল্যারির কথার আওয়াজের সাথে একটু আগে বাজা স্প্যানিশ গানের সুরটার যেন খানিকটা মিল আছে। রিনিঝিনি একটা ছন্দ ছড়িয়ে পড়ল তার আওয়াজে। আমি চেয়ে রইলাম তার দিকে। কোনো কথা বললাম না। হাতের প্যাকেটটা এগিয়ে দিলাম। ল্যারি সেটা নিতে নিতে ড্রয়িংরুম দেখিয়ে বলল- ইউ জাস্ট ওয়েট হেয়ার। আ’ম কামিং।
ওয়েট করার যদিও কোনো দরকার ছিল না। আমি যে কাজে এসেছিলাম তা শেষ। তবুও গিয়ে বসলাম ড্রয়িং রুমে। একটু পর ল্যারি ফিরে এলো হাসিমুখে। ভাঙা বাংলা উচ্চারণে বলল- এখনো বসে আছো? আমি ভেবেছিলাম তুমি চলে যাবে।
আমি একটু লজ্জায় পড়ে গেলাম। কি মুশকিল! সে নিজেই আমাকে বসতে বলে গেলো। না বলে যাই কি করে? একটু অপমানিতও বোধ করলাম যেন। উঠে দাঁড়িয়ে বললাম- আমি যাই তবে।
ল্যারি আগের মতই রিনিঝিনি শব্দের ঝংকার তুলে হেসে উঠল। ডোন্ট মাইন্ড, ডোন্ট মাইন্ড। আই ওয়াজ জাস্ট কিডিং! যাবেন কেন? ল্যারির সাথে দেখা তো করে যান। হি হি হি।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম- ল্যারি? আপনিই তো ল্যারি।
ল্যারি ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।
এক মুহূর্ত পর ঠিক একই রকম সাদা গাউন পরা একজনকে নামতে দেখলাম সিঁড়ি ভেঙে। মেয়েটি সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতেই বলল- আর ইউ স্টিল ওয়েটিং? আই থট ইউ মাস্ট বি গন! আমি কাচুমাচু হয়ে দেখলাম- ল্যারি নামছে সিঁড়ি দিয়ে। দরজা খোলার সময় এদের কার কথার রিনিঝিনি আওয়াজ আমাকে মুগ্ধ করেছিল ঠিক ঠাহর করতে পারলাম না। মাথার ভেতর ভোঁ ভোঁ করতে লাগল আমার।
-রবিউল করিম মৃদুল