অমানুষ

কোন এক বিশিষ্টজনের বাণীতে পড়েছিলাম “পরশ্রীকাতর লোভী ব্যক্তি কখনো সুখ পায় না”। এই পরশ্রীকাতরের জায়গায় কেনো জানি আমি পর-স্ত্রী-কাতর হয়ে পড়তাম আর দ্বিধার মধ্যে থাকতাম।

এটা যে স্ত্রী না শ্রী, আমি বুঝতে পেরেছিলাম বটে, কিন্তু ততদিনে বুড়িগঙ্গা দিয়ে অনেক পানি ধলেশ্বরী হয়ে ইছামতী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে।

আজ শান্তিনগর থেকে বেইলী রোডে টার্ন নিতেই আমার স্ত্রী শিখা যার শ্রী কিনা বেশ চোখ ধাঁধানো, বলল দেখো দেখো ওই মেয়েটিকে, কেমন সুন্দর না? কাটা কাটা!

আমার শ্রীহীন চোরা মন শ্রীদেবীর মতো শ্রীমতিকে পাশে নিয়ে পর-স্ত্রীর শ্রী দেখে। হ্যাঁ আসলেই তো কাটাকাটা। আমি বললাম কই কোন মেয়েকে বলছো?

শিখা বলল ওই যে কালো শাড়ি, স্লিভলেস।

আমি পেঁয়াজের খোসার মতো স্লিভলেস দেখেও না দেখার ভান করে বলি কি সব বলো কাটাকাটা? আমিতো দেখি ক্যাটক্যাটা।

ধ্যাৎ তুমি কিচ্ছু দেখোনা বলে শিখা আমার বাম বাহুতে আরো নিবিড় হলো।

আমি রাস্তাঘাটে সুন্দরী মেয়ে দেখে বেড়াই এটা শিখা বিয়ের রাতেই জেনেছিল। সে খুব উৎসাহী হয়ে বলেছিল চিন্তা নেই, কোথায় কোন দেবী লুকিয়ে আছে আমিই তোমাকে খুঁজে দেবো ।

আজ আমাদের বিয়ের এক বছর পূর্তিতে রিক্সায় নগর ভ্রমণের পর-স্ত্রী বা পর-শ্রী যাই হোক তাদের দর্শন করাও আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়েছে।

আমরা ফাস্টিংয়ে নেই তবুও একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢুকলাম। ঢুকে আমাদের দুজনেরই চক্ষু চরকগাছ। তিল ধারণের ঠাই নাই। ভীড় ভাট্টা আমার বেশ লাগে। আর এখানে দেখি সব পরীদের মিলনমেলা।

শিখা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল টেবিল না পেলেও মনে হচ্ছে আমরা ঠিক জায়গায় এসে পড়েছি, তাই না?

শিখার এই বিষয়টা আমি প্রথম প্রথম উপভোগ করতাম কিন্তু এখন সে এতো বেশি পোক করে যে আমার অস্বস্তি লাগে। সাধারণত কোন মেয়েই চায় না তার হাজব্যান্ড পর-স্ত্রী-তে কাতর হোক। কিন্তু শিখা এখানে ব্যতিক্রম। পারলে মাটি খুঁড়ে শ্রী সম্পন্নদের বের করে দেখাতে চায়।

আমরা টেবিল খালি হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। রোড ভিউ কর্ণারের টেবিলটাকে আলো করে নীল শাড়ি কালো ব্যাজের দারুণ কন্ট্রাস্টে একজন পৃষ্ঠপ্রদর্শন করছে। উন্মুক্ত পীঠের একটি লাল তিলে চোখ পড়তেই আমার ভেতরের শ্রীযুক্ত নিয়নবাতিগুলোতে জাতীয় গ্রিডের বিপর্যয় শুরু হলো। চৈতি। প্রথম প্রহরেই যার চোখের তারায় ডুব-সাঁতার খেলেছিলাম। পরবর্তীতে যেটা চুব-সাঁতারে পরিণত হয়েছিল।

আমি শিখাকে বললাম চলো অন্য কোথাও যাই। এখানে আর নয়।

শিখা খুব অবাক হয়ে বলল কেনো? এতো পরীদের কী হবে তাহলে?

আমি বললাম পরীরা থাক জীন-ভূতের সাথে। তুমি চলো মানুষ হওয়ার চেষ্টায় ব্রত এই অমানুষের সাথে!

-জামান একুশে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *